Logo

ধর্ম

নবীজি (সা.)-এর পবিত্র চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য

Icon

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৯

নবীজি (সা.)-এর পবিত্র চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য

আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন অনুপম চরিত্রের অধিকারী। তাঁর দৃষ্টান্ত তিনি নিজেই। আল্লাহ তায়ালা তাঁর চরিত্র সম্পর্কে কোরআনে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা কলম : ৪) রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেই ইরশাদ করেছেন, ‘আমি প্রেরিত হয়েছি উত্তম চরিত্রকে পরিপূর্ণ করার জন্য।’ (মুয়াত্তা ইমাম মালিক)

রাসূল (সা.)-এর উত্তম চরিত্রের বাস্তব কিছু দৃষ্টান্ত 

১. সহনশীলতা ও ধৈর্য

হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘একবার নবীজি (সা.) তাঁর এক স্ত্রীর ঘরে ছিলেন। এমন সময় আরেক স্ত্রী খাবার পাঠালেন। খাদেম খাবারের পাত্র নিয়ে প্রবেশ করতেই এ স্ত্রী অভিমানবশত হাতের হালকা আঘাতে পাত্রটি ফেলে দিলেন। ফলে খাবার ছড়িয়ে পড়ল এবং পাত্রটি ভেঙে গেল। রাসুল (সা.)এ দৃশ্য দেখে কাউকে ভর্ৎসনা না করে নিজেই খাবারগুলো কুড়িয়ে নিলেন, ভাঙা পাত্রের টুকরো একত্র করলেন। এরপর আরেকটি ভালো পাত্র খাদেমের হাতে দিয়ে বললেন, “তোমার মায়ের মর্যাদায় আঘাত লেগেছে, তাই এমনটি করেছে।’ (বুখারি শরিফ)

২. অনুকরণীয় সহনশীলতা

হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি ১০ বছর রাসুল (সা.) -এর খেদমত করেছি। এ দীর্ঘ সময়ে তিনি আমাকে কখনো বলেননি- ‘এ কাজটি কেন করলে?’ কিংবা ‘এ কাজটি কেন করোনি?’ এমনকি কখনো ‘উফ’ শব্দটিও করেননি।’ (মুসলিম শরিফ)

৩. সবার আগে সালাম ও মুসাফাহা

রাসুল (সা.) সর্বদা আগে সালাম দিতেন, মুসাফাহা করতেন এবং অপরজন হাত না সরানো পর্যন্ত হাত ছাড়তেন না। তিনি কারো সামনে পা ছড়িয়ে বসতেন না এবং কখনো হেলান দিয়ে খাবার গ্রহণ করতেন না।

৪. শত্রুর প্রতিও অমায়িক আচরণ

মুনাফিকদের নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল জীবনের শেষ পর্যন্ত নবীজি (সা.)-এর বিরোধিতা করেছে। এমনকি তিনি মুমিনদের মা আয়েশা (রা.)-এর বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়িয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালা পরে আয়েশা (রা.)-এর নির্দোষিতা সম্পর্কে কোরআনে আয়াত নাজিল করেন। তবুও যখন আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই মারা গেল, তার ছেলে আব্দুল্লাহর অনুরোধে নবীজি (সা.) নিজের জুব্বা কাফনের জন্য দিলেন এবং তার জানাজা নিজেই পড়ালেন। (তাফসীরে বুরহানুল কুরআন)

এরপর থেকে আর কোনো মুনাফিক বা মুশরিকের জানাজা পড়েননি। তবে তাঁর এ উদার ব্যবহারের কারণে ইবনে উবাই-এর গোত্রের প্রায় এক হাজার লোক ইসলাম কবুল করেছিল।

৫. কাজের ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ

এক সফরে সাহাবায়ে কেরাম যাত্রা বিরতি করলে খাবারের প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন কাজ ভাগ করে নিলেন। নবীজি (সা.) স্বেচ্ছায় লাকড়ি সংগ্রহের দায়িত্ব নিলেন। সাহাবারা অবাক হয়ে বললেন,‘আমরা-ই তো সব কাজ করব।’ কিন্তু তিনি উত্তর দিলেন, ‘সকলের মাঝে নেতা হয়ে বসে থাকতে আমি পছন্দ করি না।’ (তাফসীরে বুরহানুল কুরআন)

৬. ব্যক্তিগত কারণে প্রতিশোধ নিতেন না

খায়বারের ইহুদিরা একবার নবীজি (সা.)-কে দাওয়াত করে খাদ্যে বিষ মিশিয়েছিল। নবীজি (সা.) খাবার মুখে নেওয়ার আগেই আল্লাহ তাঁকে বিষয়টি অবহিত করলেন। তিনি হাত সরিয়ে নিলেন এবং তাদের ষড়যন্ত্র বুঝে ফেললেন। তবুও তাদের ক্ষমা করে দিলেন। কারণ নবীজি (সা.) ব্যক্তিগত কারণে কখনো কারো বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতেন না। (তাফসীরে বুরহানুল কুরআন)

৭. শত্রুকেও ক্ষমা করা

এক সফরে নবীজি (সা.) একটি গাছের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। হঠাৎ এক দুশমন তরবারি বের করে বলল, ‘হে মুহাম্মদ! এখন তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে?’

রাসুল (সা.) নির্ভীকভাবে বললেন, ‘আল্লাহ।’ এ কথা শুনে তার হাত থেকে তরবারি পড়ে গেল। সাহাবারা ছুটে এলেও নবীজি (সা.) সেই শত্রুকে ক্ষমা করে দিলেন। (মুসলিম শরিফ)

৮. ধন-সম্পদের প্রতি অনীহা

রাসুল (সা.) ছিলেন দরিদ্রদের সহচর। অসুস্থ তাঁর কাছে এলে সুস্থতা নিয়ে যেতেন, অজ্ঞরা জ্ঞান লাভ করত, কাফিররা ঈমানের আলো পেত এবং অভাবীরা ধনী হয়ে যেত। তিনি বলতেন, ‘ওহুদ পাহাড় পরিমাণ সম্পদ যদি আমার কাছে থাকে, তবে আমি চাই না তা তিন দিনের বেশি আমার কাছে থাকুক।’ (তাফসীরে বুরহানুল কুরআন)

রাসুলুল্লাহ (সা.) -এর জীবন মানবতার জন্য আদর্শ। সহনশীলতা, ক্ষমাশীলতা, দয়া, বিনয়, ধৈর্য, সরলতা—সব গুণেই তিনি ছিলেন অনন্য। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে যেমন বলেছেন, তাঁর চরিত্রই ছিল সবচেয়ে মহান। তাই দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হতে চাইলে আমাদের অবশ্যই নবীজি (সা.)-এর চরিত্র ও আখলাককে জীবনে চলার পথে ধারণ করতে হবে। 

আইএইচ/ 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর