Logo

ধর্ম

জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠের সময় ও ফজিলত

Icon

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৪১

জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠের সময় ও ফজিলত

শুক্রবার মুসলিম উম্মাহর সাপ্তাহিক উৎসবের দিন। এই দিনকে 'ইয়াউমুল জুমা' বলা হয়। আল্লাহ তাআলা নভোমণ্ডল, ভূমন্ডল ও গোটা জগতকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। এই ছয় দিনের শেষ দিন ছিলো জুমার দিন। এই দিনেই হযরত আদম (আ.) সৃজিত হন। এই দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এই দিনেই তাকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নামানো হয়। কেয়ামত এই দিনেই সংগঠিত হবে। আল্লাহ তাআলা প্রতি সপ্তাহে মানবজাতির সমাবেশ ও ঈদের জন্য এ দিন নির্ধারিত করেছিলেন। কিন্তু পূর্ববর্তী উম্মত রা তা পালন করতে ব্যর্থ হয়। ইসলামে জুমার গুরুত্ব অপরসীম।

জুমার দিন দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হলো শুক্রবার। এদিনেই আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছেন, জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। আর কেয়ামতও সংঘটিত হবে শুক্রবার দিনে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৪)

আর এই জুমার দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করা। কোরআনের ১৫ তম পারার ১৮ নম্বর সুরাটি হচ্ছে সুরা কাহাফ। কেউ পুরো সুরা না পড়তে পারলে অন্তত প্রথম ১০ আয়াত ও শেষ ১০ আয়াত পাঠ করা উচিত।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।’ (সহিহ মুসলিম)

আরেক হাদিসে এসেছে, ‘আদম (আ.)-এর সৃষ্টির পর থেকে কেয়ামত পর্যন্ত দাজ্জালের চেয়ে বড় কোনো ফিতনা নেই।’ (সহিহ মুসলিম) এ কারণেই সুরা কাহাফকে দাজ্জালের বিরুদ্ধে একটি ঢাল হিসেবে অভিহিত করা হয়।

সুরা কাহাফ তেলাওয়াতের ফজিলত

জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করলে তার নূর পরবর্তী জুমা পর্যন্ত আলোকিত থাকবে। (মিশকাত, হাদিস: ২১৭৫)

যে ব্যক্তি এই সুরার প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে, তাকে দাজ্জালের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ রাখা হবে। (সহিহ মুসলিম, মিশকাত)

সুরা কাহাফ পাঠকারী কেয়ামতের দিন এমন নূর লাভ করবে যা তার অবস্থান থেকে মক্কা পর্যন্ত আলোকিত করবে। (সিলসিলা সহিহা, হাদিস: ২৬৫১)

জুমার রাতে সুরা কাহাফ পাঠ করলে তার অবস্থান থেকে মক্কা পর্যন্ত নূর আলোকিত হবে। (সহিহ তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস: ৭৩৬)

জুমার দিনে সুরা কাহাফ পাঠ করলে কেয়ামতের দিন তার পায়ের নিচ থেকে আকাশ পর্যন্ত নূর হবে এবং দুই জুমার মধ্যবর্তী গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব ১/২৯৮)

বারা ইবনে আজিব (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি সুরা কাহাফ পড়ছিলেন, তখন একটি মেঘ তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। তিনি বিষয়টি নবীজি (সা.)-কে জানালে তিনি বলেন, ‘এটি ছিল আল্লাহর রহমত বা প্রশান্তি, যা কোরআন তেলাওয়াতের কারণে অবতীর্ণ হয়েছিল।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৭৪২)

সুরা কাহাফ পাঠের সময়

সুরা কাহাফ পড়ার সময় হলো- বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পর থেকে শুক্রবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত। অর্থাৎ জুমার রাত ও দিন-উভয় সময়েই সুরা কাহাফ পড়া মুস্তাহাব।

মুনাওয়ি (রহ.) বলেন, ‘হাফেজ ইবনে হজর তাঁর ‘আমালী’-তে উল্লেখ করেছেন- কোনো রেওয়ায়েতে ‘জুমার দিন’ আর কোনো রেওয়ায়েতে ‘জুমার রাত’ এসেছে। এর সমন্বয় হলো-দিনসহ রাত এবং রাতসহ দিন-দুটিই এর অন্তর্ভুক্ত।’ (ফাইযুল কাদির ৬/১৯৯)

তিনি আরও বলেন, ‘অতএব, জুমার দিনে সুরা কাহাফ পড়া মুস্তাহাব, অনুরূপভাবে জুমার রাতেও। যেমনটি ইমাম শাফেয়ি দ্ব্যর্থহীনভাবে উল্লেখ করেছেন।’ (ফাইযুল কাদির ৬/১৯৮)

জুমার দিন বা রাত যেকোনো সময়ে সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করা মুস্তাহাব। এই সুরা পাঠকারীর জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে নূর, গুনাহ মাফ এবং দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপত্তা।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে প্রতি জুমায় সুরা কাহাফ পাঠ করার তৌফিক দান করুন, আমীন।

আইএইচ/

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর