Logo

ধর্ম

বিদ‘আত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) যা বলেছেন

Icon

সাআদ বিন জাকির

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৪

বিদ‘আত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) যা বলেছেন

বিদ‘আত ভয়াবহ গুনাহের কাজ। এক দিকে এই বিদ‘আত কুফুর, শিরিক এর পরেই সর্বাধিক ধ্বংসাত্মক গুনাহ। অপর দিকে এ থেকে তওবাও নসীব হয় না। কেউ সুদ, ঘুষ, মদ, জুয়াতে লিপ্ত হলে এগুলো গুনাহ মনে করে এক সময় তা থেকে তওবা করে নেয় বা তওবা করার প্রয়োজন মনে করে। কিন্তু বিদ‘আত নাজায়েয ও কবীরা গুনাহ হওয়া সত্ত্বেও বাহ্যত তা নেক আমলের মত হওয়ার কারণে সকলেই তা সওয়াবের নিয়তে করে থাকে। এ কারণে কখনোই তা থেকে তওবা করার প্রয়োজন মনে করে না। 

মানুষ ভাবে সওয়াবের কাজই তো করছি এর জন্য আবার তওবা কিসের। পরিশেষে তওবা করা ছাড়াই মারা যায়। এজন্য বিদ‘আত সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখা এবং এ থেকে সম্পূর্ণরূপে বেঁচে থাকা সকলের জন্য জরুরী। কেননা হাদীসে বিদ‘আত থেকে বেঁচে থাকতে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নবীজী (সা.) বলেন, ‘তোমরা বিদ‘আত বা নতুন আবিষ্কৃত আমল থেকে কঠোরভাবে বিরত থাক। কেননা প্রত্যেক নতুন আবিষ্কৃত আমলই বিদ‘আতের মধ্যে গণ্য এবং প্রত্যেক বিদ‘আতই গোমরাহী। (আবূ দাউদ : ২/২৭৯)

অপর এক হাদীসে নবীজী (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা‘আলা বিদ‘আতী ব্যক্তির নামায-রোযা, দান-সদকা, হজ্জ-উমরাহ, জিহাদ, ফরয ইবাদাত ও নফল ইবাদতসহ কোনো আমলই কবুল করবেন না। আটার খামির থেকে চুল যেমন খুব সহজেই বের হয়ে আসে, ঠিক তেমনই বিদ‘আতী ব্যক্তিও ইসলাম থেকে নিজের অজান্তেই বের হয়ে যায়। (ইবনে মাজাহ পৃ.৬)

অন্য এক হাদীসে নবীজী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বিদ‘আতী ব্যক্তির জন্য তাওবার দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন।’ (কানযুল উম্মাল ১/২২০) 

সর্বোপরি বিদ‘আতে লিপ্ত ব্যক্তিদেরকে রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেই ‘দূর হও, দূর হও, যারা আমার পর বিদ‘আতে লিপ্ত হয়েছে’ বলে হাউজে কাওসারের পানি থেকে চিরবঞ্চিত করে দিবেন। (বুখারী/মুসলিম) 

বর্তমান সমাজে মিলাদ-কিয়ামের ব্যাপক প্রচারণা পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনেক মসজিদে মিলাদও হয়, সাধারণ মুসল্লিরা ব্যবসায় উন্নতি, ছেলে-মেয়ের পরীক্ষায় পাস আর পড়া-লেখার উন্নতি, কামাই-রোজগারের উন্নতি, বালা-মুসীবত এবং বিভিন্ন পেরেশানি থেকে মুক্তিসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য মিলাদ পড়িয়ে থাকেন, নতুন ঘর-বাড়ি বা দোকান হলে সেখানে বরকতের জন্য এবং সওয়াবের নিয়তে মিলাদ দিয়ে থাকেন। অথচ ইসলামে এর কোনো ভিত্তি-প্রমাণ নেই।   

ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায়, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর যুগে, সাহাবা কেরামের যুগে এমনকি তাবেঈন এর যুগেও মিলাদ-কিয়ামের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই এ প্রচলিত মিলাদ-কিয়াম সম্পূর্ণ বিদ‘আত এবং নাজায়েয। সকলের কর্তব্য এর থেকে বিরত থাকা এবং অন্যকে বিরত রাখা। নকল জিনিস দেখতে প্রায় আসলের মত হলেও দামে আসল জিনিসের মত হবে না। শুধু তাই নয়, আসলের মত বানাতে পেরেছে বলে নকলকারীকে পুরষ্কার দেওয়া হবে না, বরং নকল করার অপরাধে কঠিন শাস্তিযোগ্য বিবেচিত হবে। 

যেহেতু সকল বিদ‘আত ইসলামে নকল আমল হিসেবে গণ্য, তাই বিদ‘আতকারী পুরষ্কারযোগ্য তো নয়ই বরং বিদ‘আত করার অপরাধে জাহান্নামের কঠিন শাস্তিযোগ্য। যদিও সাধারণ লোকদের নিকট বিদ‘আত দেখে তা বাহ্যত নেক আমলের মতোই মনে হয়, কিন্তু এটা যে বিদ‘আত এবং নকল আমল তা বুঝতে আমল বিশেষজ্ঞ তথা হক্কানী উলামায়ে কেরামের কোনো কষ্টই হয় না। তাই সকলের জন্য কর্তব্য হলো এ সকল বিদ‘আত কাজ থেকে বিরত থাকা। 

লেখক : শিক্ষার্থী, আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া

আইএইচ/

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর