-68bbb0e61fe8a.png)
নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে যে মূল্যবান উপহারগুলো দিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো সহজ অথচ অসীম ফজিলতপূর্ণ কিছু আমল। এগুলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম, যা মুমিনের জন্য আত্মিক শক্তি, সুরক্ষা এবং দুনিয়াবি-আখিরাতের রক্ষাকবচ। সেই বিশেষ আমলগুলোর মধ্যে একটি হলো আয়াতুল কুরসি।
আয়াতুল কুরসির ফজিলত
আয়াতুল কুরসি এমন এক মহিমান্বিত আয়াত, যার ফজিলত সম্পর্কে অসংখ্য সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশে একমাত্র বাধা হবে মৃত্যু।’ (তাবারানি)
আয়াতুল কুরসি পাঠকারীর জন্য ফেরেশতা পাহারাদার নিযুক্ত হন এবং শয়তান তার কাছে আসতে পারে না। ফজর ও মাগরিবের সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে মহান আল্লাহ বান্দাকে তাঁর বিশেষ হেফাজতে নিয়ে নেন। রাতে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে পুরো রাত নিরাপদে কাটে।
হাদিসে এসেছে, প্রতিটি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করা মুমিনের জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা। তাই এটিকে দৈনন্দিন আমলের অংশ বানানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. থেকে বর্ণিত, তাঁর একটি খেজুর শুকানোর জায়গা ছিল। তাতে খেজুর হ্রাস পেত। এক রাতে তিনি পাহারায় রইলেন। হঠাৎ তিনি কিশোরের মতো এক প্রাণী দেখতে পেলেন। সে তাকে সালাম দিল। তিনি সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোন জাতির? জিন না মানব? সে বলল, জিন। তিনি বললেন, তোমার হাত দাও তো দেখি। সে হাত বাড়িয়ে দিল। দেখা গেল তার হাত ও পশম কুকুরের হাত ও পশমের মতো। সে বলল, এটা জিনের গঠন। সে আরো বলল, জিনেরা জানে, তাদের মধ্যে আমার চেয়ে শক্তিশালী আর কোনো পুরুষ নেই। তিনি বললেন, কী উদ্দেশ্যে এসেছ? সে বলল, আমি জানতে পেরেছি, আপনি সাদাকা করতে পছন্দ করেন। তাই আপনার খাদ্যবস্তু (খেজুর) থেকে নিতে এসেছি। তিনি বললেন, তোমাদের (অনিষ্ট) থেকে আত্মরক্ষার উপায় কী? সে বলল, সূরা বাকারার এই আয়াতটি-
‘আল্লাহু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম, লা তা’খুজুহু সিনাতুঁও ওয়ালা নাউম। লাহু মা-ফিসসামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিল আরদ্ব। মান জাল্লাজি ইয়াশফা’উ ইনদাহু ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম। ওয়ালা ইয়ুহিতুনা বিশাইইম মিন্ ইলমিহি ইল্লা বিমা- শাআ। ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়াতি ওয়াল আরদ্ব। ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুয়াল আলিয়্যূল আজিম।’
অর্থ: ‘আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।’
যে তা সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত আমাদের (অনিষ্ট) থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। আর যে সকালে পড়বে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের (অনিষ্ট) থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। সকালে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বিষয়টি জানালেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খবীস সত্য বলেছে। (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৭৮৪; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ২০৬৪)
উপরোক্ত হাদিসসমূহ থেকে প্রমাণিত হয়, আয়াতুল কুরসি শুধু জান্নাত লাভের উপায়ই নয়, বরং শয়তান ও জিনের অনিষ্ট থেকে বাঁচার সবচেয়ে কার্যকর আমল। তাই মুমিনের কর্তব্য হলো- এ আয়াতকে প্রতিদিনের অযীফা বানিয়ে নেওয়া এবং নামাজ শেষে, সকালে-সন্ধ্যায় ও রাতে শয্যায় যাওয়ার আগে অবশ্যই পাঠ করা।
আইএইচ/