Logo

ধর্ম

চন্দ্রগ্রহণের নামাজ পড়ার নিয়ম ও ফজিলত

Icon

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩১

চন্দ্রগ্রহণের নামাজ পড়ার নিয়ম ও ফজিলত

আজ রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দেখা যাবে চলতি বছরের পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে বাংলাদেশ থেকেও এই চন্দ্রগ্রহণ প্রত্যক্ষ করা যাবে।

চন্দ্রগ্রহণটি বাংলাদেশ সময় ৭ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা ২৮ মিনিটে শুরু হয়ে পরদিন ৮ সেপ্টেম্বর ভোর পর্যন্ত চলবে। এর স্থায়ীত্ব হবে মোট ৭ ঘণ্টা ২৭ মিনিট।

চন্দ্রগ্রহণ কীভাবে ঘটে

বিজ্ঞানীদের মতে, যখন সূর্য ও চাঁদের মাঝখানে পৃথিবী একই সরলরেখায় চলে আসে, তখন চাঁদ পৃথিবীর ছায়ায় ঢেকে যায়। এ অবস্থাতেই চন্দ্রগ্রহণ ঘটে। এ সময় সূর্য দর্শকের পেছনে থাকে এবং পৃথিবী চাঁদের আলোকে আড়াল করে দেয়।

কোরআনে চন্দ্রগ্রহণের ইঙ্গিত

আল্লাহ তায়ালা সূর্য ও চাঁদকে তাঁর মহান সৃষ্টির নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পৃথিবীতে প্রাণধারণের জন্য সূর্য অপরিহার্য এবং চাঁদও মানুষের জন্য বহু কল্যাণ বয়ে আনে। চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই; বরং সূর্যের আলো প্রতিফলিত করেই সে পৃথিবীতে আলোক ছড়ায়।

আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি সূর্যকে কিরণোজ্জ্বল এবং চাঁদকে স্নিগ্ধ আলোয় আলোকিত করেছেন।’ (সুরা ইউনুস : ৫)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন দৃষ্টি বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যাবে, চাঁদ তার জ্যোতি হারাবে, আর সূর্য ও চাঁদকে একত্র করা হবে।’ (সুরা কিয়ামাহ : ৭-৯)

এখানে ‘চাঁদের জ্যোতিহীন হয়ে পড়া’-র বাস্তব রূপই হচ্ছে চন্দ্রগ্রহণ।

নবীজি (সা.)-এর বর্ণনা

ইসলাম আগমনের পূর্বে ধারণা ছিল, কারও মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ ঘটে। নবীজি (সা.)-এর সন্তান ইবরাহিম (রাঃ) ইন্তেকালের দিনে সূর্যগ্রহণ হলে সাহাবায়ে কেরামও এ ধরনের কথা বলেছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনের দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ কিংবা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তাই যখন তোমরা এমন কিছু দেখবে, তখন আল্লাহর কাছে দোয়া করবে, তাঁর মহিমা ঘোষণা করবে, তাকবির বলবে, নামাজ পড়বে এবং সদকা করবে।’ (সহিহ বুখারি : ১০৪০, আবু দাউদ : ১১৭৭)

চন্দ্রগ্রহণের নামাজ (সালাতুল খুসুফ)

চন্দ্রগ্রহণ উপলক্ষে বিশেষ নামাজ আদায় করা সুন্নাত। এ নামাজকে বলা হয় সালাতুল খুসুফ। নবীজি (সা.) এ নামাজ আদায় করেছেন। (সহিহ বুখারি : ৯৮৩)

এই নামাজের পদ্ধতি হলো : চন্দ্রগ্রহণের নামাজ একাকী পড়াই সুন্নাত। সূর্যগ্রহণের নামাজ জামাতে পড়া যায়, কিন্তু চন্দ্রগ্রহণের ক্ষেত্রে জামাত সুন্নাত নয়। তাই মসজিদে সমবেত হওয়ার প্রয়োজন নেই। (বাদায়েউস সানাঈ : ১/২৮২)

যারা চন্দ্রগ্রহণ প্রত্যক্ষ করবেন, তারা নিজ নিজ বাসায় ফজরের নামাজের মতোই দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করবেন। ইচ্ছা করলে চার রাকাত বা এর চেয়ে বেশিও পড়া যাবে, তবে প্রত্যেক দুই বা চার রাকাত পরপর সালাম ফেরাতে হবে। অন্যান্য নফল নামাজের মতো এ নামাজেও আজান-একামত নেই। নামাজ শেষে চন্দ্রগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জিকির, দোয়া ও মোনাজাতে মশগুল থাকবে। (বোখারি, আল-মাবসুত, শারহুল বিকায়া)

সুতরাং, চন্দ্রগ্রহণ মূলত আল্লাহর মহিমা ও নিদর্শনের প্রকাশ, যা মানুষকে তাঁর প্রতি আরও ধাবিত হওয়ার শিক্ষা দেয়। 

আইএইচ/

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর