Logo

ধর্ম

কোরআন-হাদিসের আলোকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার বিধান

Icon

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৪

কোরআন-হাদিসের আলোকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার বিধান

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। তিনি পরম ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু। তাঁর গুণ হলো- তিনি বান্দার ভুলত্রুটি, পাপ-অপরাধ ক্ষমা করেন এবং তাঁর দয়া ও করুণা বর্ষণ করেন। তবে দুনিয়ায় আল্লাহ তাআলা বান্দাকে নানাভাবে পরীক্ষা করেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, ‘আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদহানি, প্রাণহানি ও ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে; আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদের। যারা তাদের প্রতি মুসিবত আপতিত হলে বলে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (‘নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই এবং আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব।’)। তাদের প্রতি তাদের রবের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও রহমত রয়েছে এবং তারাই হেদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭)

আর বান্দা যখন আল্লাহর দরবারে ফিরে আসে, তখন আল্লাহ তাঁর ক্ষমা ও দয়ার হাত প্রসারিত করেন। বান্দা ইস্তেগফার পড়লে আল্লাহ তাকে আজাব দেন না। কোরআনে আছে, ‘আপনি তাদের মাঝে থাকা অবস্থায় আল্লাহ তাদের শাস্তি দেবেন না এবং তারা ক্ষমা প্রার্থনা করলে তখনো আল্লাহ তাদের শাস্তি দেবেন না।’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ৩৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি কেউ গুনাহ মাফের উদ্দেশ্যে ইস্তেগফার পড়াকে নিজের ওপর আবশ্যক করে নেয়, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে তিনটি পুরস্কার দেবেন- তাঁর জীবনের কঠিন অবস্থা থেকে উদ্ধার করবেন, দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন এবং অচিন্তনীয় ও অকল্পনীয় স্থান থেকে তার জন্য রিজিকের ব্যবস্থা করবেন।’ (মুসলিম ও তিরমিজি) 

বান্দার প্রতি তাঁর রব সর্বদাই দয়াশীল। তাইতো আল্লাহ বলেন, ‘জেনে রেখো, তিনি পরাক্রমশালী পরম ক্ষমাশীল।’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৫)

তিনি আরও বলেন, ‘হে নবী মুহাম্মাদ (সা.)! আপনি আমার বান্দাদের বলে দিন, আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৪৯)

হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘বান্দা যদি দৈনিক ৭০ বার অপরাধ করে এবং ৭০ বার ক্ষমা চায়, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।’ সুবহানাল্লাহ! আমার আপনার রব শুধু উছিলা খুঁজবেন যে, কীভাবে তাঁর বান্দাদেরে মাফ করা যায়।

প্রিয় নবী করীম (সা.) দৈনিক ৭০ বারের অধিক, এমনকি ১০০ বারেরও বেশি ইস্তেগফার পড়তেন, অথচ তিনি এবং অন্যান্য সব নবী–রাসুল ছিলেন নিষ্পাপ (মাসুম)। সে হিসেবে আমরা কত গুনাহ করি কিন্তু দৈনিক কতবার আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই? অথচ মাসুম হওয়া সত্বেও নবী–রাসুলগণ ইস্তেগফার পড়া ছাড়তেন না। 

আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পাপ ও পুণ্যের সম্ভাবনা দিয়ে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘অতঃপর আল্লাহ তাতে (মানবসত্তায়) অপরাধপ্রবণতা ও তাকওয়া (সতর্কতার জ্ঞান) দান করলেন।’ (সুরা শামস, আয়াত: ৮)

আরও বলেছেন, ‘আর আমি তাকে (ভালো–মন্দ, সত্য–মিথ্যা, ন্যায়–অন্যায়) দুটি পথ দেখিয়ে দিয়েছি।’ (সুরা বালাদ, আয়াত: ১০) এসব আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, ভালো খারাপ দুই সত্ত্বাই মানুষের মধ্যে বিদ্যমান। তাই ভালো কাজ করলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে এবং গুনাহের কাজ হয়ে গেলে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে। 

আর হাদিসে তো এসেছেই যে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘সব মানুষই অপরাধী, তবে তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো তওবাকারী।’ (বুখারি)

ক্ষমাপ্রার্থনার জন্য কোরআন ও হাদিসে বহু দোয়া রয়েছে। এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ দোয়াকে বলা হয় সায়্যিদুল ইস্তেগফার- অর্থাৎ প্রধান ক্ষমার আবেদন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি কেউ সকাল–সন্ধ্যায় বিশ্বাসের সঙ্গে সায়্যিদুল ইস্তেগফার পাঠ করে এবং ওই দিন বা রাতে তার মৃত্যু হয়, তবে সে জান্নাতি হবে।’

সায়্যিদুল ইস্তেগফার হলো- উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা; খলাকতানি ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু, আউজুবিকা মিন শাররি মা ছনাতু, আবুউ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়া, ওয়া আবুউ লাকা বিজাম্বি; ফাগফির লি, ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ-জুনুবা ইল্লা আন্তা।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রভু, আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমি আপনারই বান্দা। আমি আপনার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের ওপর আছি যতটুকু পারি। আমি আশ্রয় চাই আপনার কাছে আমার কৃতকর্মের অকল্যাণ থেকে। আমি স্বীকার করছি আপনার দেওয়া নিয়ামত এবং আমার অপরাধও। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন, কেননা নিশ্চয়ই আপনার বাইরে আর কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না।’ (বুখারি ৬৩২৩, মুসলিম)

আইএইচ/ 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর