Logo

ধর্ম

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র জন্মের অলৌকিক কিছু মুহূর্ত

Icon

সাআদ বিন জাকির

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:১৯

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র জন্মের অলৌকিক কিছু মুহূর্ত

সরওয়ারে আলম, সাইয়্যেদুল ওলাদে আদম, মুহাম্মাদ মুস্তফা আহমাদ মুজতবা (সা.) এর জন্ম হয় হস্তীবাহিনীর ঘটনার পঞ্চাশ বা পঞ্চান্ন দিন পর, অর্থাৎ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দ, এপ্রিল মাসে, ৮ বা ১২ই রবিউল আউয়াল, সোমবার, সুবহে সাদিকের সময়।

সবচেয়ে প্রসিদ্ধ মত হলো- তিনি ১২ই রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেছেন। তবে হাদিস বিশারদ ও ইতিহাসবিদদের অগ্রগণ্য মত হলো- তিনি ৮ই রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেছেন। এ মতটি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও হযরত জুবাইর ইবনে মুত্তাঈম (রা.) এর সূত্রেও বর্ণিত। আল্লামা কুতুবুদ্দিন কুল্লানি (রহ.)-ও এই উক্তি গ্রহণ করেছেন।

জন্মের সময় ঘটে যাওয়া অলৌকিক ঘটনাবলি

১. ঘরে নূরের আলো

হযরত উসমান বিন আবুল আ’সের মাতা ফাতিমা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘হুযুর (সা.) এর জন্মের সময় আমি তাঁর মা আমেনার কাছে বসা ছিলাম। হঠাৎ পুরো ঘর নূরের আলোয় আলোকিত হয়ে গেল। আসমানের তারাগুলো ঝুঁকে এলো, এমন মনে হলো যেন সেগুলো আমার ওপর পতিত হবে।’

২. নূরের আলো শামে পৌঁছানো

হযরত ইরবায বিন সারিয়া (রা.) হতে বর্ণিত, মা আমেনা একটি নূর দেখেছিলেন, যার আলোয় শামের প্রাসাদগুলো আলোকিত হয়ে যায়।

এই রেওয়ায়াত মুসনাদে আহমদ ও মুস্তাদরাকে হাকেমে বর্ণিত। ইবনে হিব্বান (রহ.) একে সহিহ বলেছেন।

আরেকটি রেওয়ায়াতে আছে, বসরার প্রাসাদগুলো আলোকিত হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ, খুব দ্রুতই পৃথিবী থেকে কুফর-শিরকের অন্ধকার দূর হয়ে নূরে হিদায়াত দ্বারা পৃথিবী আলোকিত হয়ে যাবে।

৩. ইয়াহুদি আলেমের ঘটনা

সে সময় এক ইহুদি আলেম মক্কায় অবস্থান করত। হুযুর (সা.) এর জন্মরাতেই সে কুরাইশদের জিজ্ঞেস করল, ‘আজ কি কোনো ছেলে জন্ম নিয়েছে?’ লোকেরা খোঁজ নিয়ে জানালো- আব্দুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিবের ঘরে পুত্র জন্ম নিয়েছে। ইহুদি শিশুটিকে দেখে বলল, ‘এটাই সেই নবী, যার আলামত আমি তাওরাতে পড়েছি। তাঁর দু’কাঁধের মাঝে মোহরে নবুওয়ত আছে। এখন থেকে বনি ইসরাইল থেকে নবুওয়ত এর ধারা শেষ হয়ে গেল। খোদার কসম, তাঁর দাওয়াত পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে।’

৪. কিসরার প্রাসাদের গম্বুজ ভেঙে পড়া, অগ্নিশিখা নিভে যাওয়া

রাসূল (সা.) এর জন্মরাতে বড় বড় কিছু ঘটনা ঘটেপা। পারস্য সম্রাট কিসরার প্রাসাদের চৌদ্দটি গম্বুজ ভেঙে পড়ে। হাজার বছর ধরে জ্বলতে থাকা পারস্যের অগ্নিশিখা নিভে যায়। সাওয়া নদী শুকিয়ে যায়।

কিসরা চিন্তিত হয়ে তার আলেমদের ডেকে জানতে চাইলে, তারা ব্যাখ্যা দেয় যে- আরবে এক মহৎ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

৫. সাতিহ নামক আলেমের ভবিষ্যদ্বাণী

আব্দুল মাসিহ নামে এক খ্রিস্টান আলেমকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানার জন্য শামের একজন বুড়ো আলেম সাতিহ এর কাছে পাঠানো হয়। মৃত্যুশয্যায় সাতিহ বলেন, ‘যখন আল্লাহর কালামের তেলাওয়াত বেশি হবে, পারস্যের আগুন নিভে যাবে, সাওয়া নদী শুকিয়ে যাবে, তখন বুঝবে- নবুওয়তের সূচনা হয়েছে। সাসানিদের রাজত্ব টিকবে না। যতগুলো গম্বুজ ভেঙে পড়েছে, ততজন বাদশাহ এ রাজ্যে রাজত্ব করবে।’

এ কথা বলে সাতিহ মৃত্যুবরণ করেন। সত্যিই ইতিহাস সাক্ষী- সাসানি সাম্রাজ্যের পতন হয়েছিল হযরত উসমান (রা.) এর খিলাফতের সময়।

৬. জন্ম থেকেই খতনা ও নাভি কাটা

হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত- রাসূল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর নেয়ামতগুলোর মধ্যে একটি হলো, আমি খতনা করা অবস্থায় ও নাভি কাটা অবস্থায় জন্মেছি।’

হযরত আব্বাস (রা.) বলেন, ‘এ দেখে আবদুল মুত্তালিব বিস্মিত হলেন এবং বললেন: অবশ্যই আমার এই নাতির বড় মর্যাদা হবে।’

৭. পরিপূর্ণ পবিত্র দেহ

হযরত আমেনা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসূল (সা.) জন্মের সময় সম্পূর্ণ পরিষ্কার ছিলেন। তাঁর দেহে কোনো প্রকার ময়লা ছিল না।’

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জন্ম মুহূর্তটি শুধু মক্কায় নয়, বরং সমগ্র পৃথিবীতে আশ্চর্যজনক নিদর্শন ও অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছিল। এগুলোই ছিল এ ইঙ্গিত যে, তিনি হচ্ছেন সেই মহান নবী, যিনি মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোয়, কুফর-শিরক থেকে হিদায়াতের পথে নিয়ে আসবেন।

সূত্র: সীরাতে মুস্তাফা (সা.), সীরাতে ইবনে হিশাম ও আর-রাহীকুল মাখতূম

লেখক : শিক্ষার্থী, আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া চট্টগ্রাম।

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর