
মানুষের জীবনে উপার্জন প্রয়োজনের পাশাপাশি ইবাদতেরও একটি অংশ। ইসলাম সেই উপার্জনকেই শ্রেষ্ঠ বলেছে, যা সততা, আমানতদারি ও পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত হয়। ইতিহাসে দেখা যায়, রাসূলুল্লাহ (সা.) ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও সততা ও নৈতিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর জীবন আমাদের শেখায়- সৎ পরিশ্রম, ন্যায্য ব্যবসা ও অংশীদারিত্বের মাধ্যমে জীবিকা অর্জনই সর্বোত্তম পথ।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে যখন জিজ্ঞেস করা হলো, কোন উপার্জন উত্তম? তিনি উত্তর দিলেন, ‘মানুষের নিজ হাতে করা কাজ এবং সৎ ব্যবসা’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৭,২৬৫)। আরেক বর্ণনায় মিকদাদ (রা.) বলেন, তিনি শুনেছেন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিজ হাতে উপার্জিত খাবারের চেয়ে উত্তম কোনো খাবার নেই’ (বুখারি, হাদিস: ২,০৭২)।
নবীজী (সা.) ব্যবসাকে জীবিকার অন্যতম সেরা মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময় অংশীদারত্বে ব্যবসা করেছেন, আবার মুদারাবা ভিত্তিতেও ব্যবসায় সম্পৃক্ত ছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে সায়েব (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমি জাহেলিয়াতের যুগে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ব্যবসায় অংশীদার ছিলাম। তিনি ছিলেন সর্বোত্তম অংশীদার- না কোনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছেন, না কোনো বিরোধ সৃষ্টি করেছেন।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা: ৪৮০)।
চাচা আবু তালিবের পরামর্শে রাসূলুল্লাহ (সা.) খাদিজা (রা.)-এর ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্ব নেন। খাদিজা (রা.) তাঁকে দ্বিগুণ লাভ দেওয়ার প্রস্তাব করেন এবং তাঁর সত্যবাদিতা ও আমানতদারির প্রশংসা করে সরাসরি ব্যবসায় যুক্ত করেন। (খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ (রা.), পৃষ্ঠা: ৮৪-৮৫)।
সেই সময় মক্কার ধনী ব্যবসায়ীরা দক্ষ ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্ব দিতেন, অনেকটা আধুনিক কালের সিইও-র মতো। পরিচালকের শ্রমের বিনিময়ে মুনাফা ভাগাভাগি হতো। এভাবেই রাসূলুল্লাহ (সা.) খাদিজা (রা.)-এর সঙ্গে মুদারাবা ও অংশীদারত্ব উভয় ব্যবস্থায় ব্যবসা পরিচালনা করেন (সীরাতে ইবনে হিশাম, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা: ১৬৬)। তিনি বলেছেন, ‘একটি জোয়ান মাদি উটের বিনিময়ে দুটি বাণিজ্য সফরে আমি খাদিজার জন্য শ্রম দিয়েছি।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা: ৫৮২)।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ব্যবসায়িক জীবনে আমরা পাই সততা, আমানতদারি, বিশ্বস্ততা ও ন্যায্য লেনদেনের অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি কখনো প্রতারণা করেননি, কখনো অংশীদারকে কষ্ট দেননি। এ কারণেই তাঁর ব্যবসায়িক সাফল্য পরবর্তী সময়ে মানুষের আস্থা ও ভালোবাসার ভিত্তি তৈরি করে দেয়। আজকের যুগেও তাঁর ব্যবসায়িক শিক্ষা আমাদের জন্য পাথেয় হিসেবে কাজ করে। কেননা, সৎ পরিশ্রম, সঠিক লেনদেন ও নৈতিকতার মাধ্যমে উপার্জিত সম্পদই আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য এবং মানবসমাজে সম্মানের অর্থ বহন করে।
আইএইচ/