
ইসলামে জুমা মুসলমানদের জন্য একটি বিশেষ দিন। আরবি তারিখ অনুযায়ী দিন শুরু হয় আগের সন্ধ্যা থেকে। তাই বৃহস্পতিবারের রাত থেকেই জুমার দিন গণনা শুরু হয় এবং শুক্রবার সূর্যাস্তের সঙ্গে এর সমাপ্তি ঘটে। এ সময়টিকে দোয়া কবুল ও নেক আমলের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘পাঁচটি রাত এমন রয়েছে, যে রাতের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।— ১. জুমার রাত। ২. রজব মাসের প্রথম রাত। ৩. শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত (শবে বরাত)। ৪. ঈদুল ফিতরের রাত। ৫. ঈদুল আজহার রাত।’ (মুসান্নাফে আব্দুর রাজজাক: ৭৯২৭)
হজরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, ‘হে আলী! শুক্রবার রাতের শেষ তৃতীয়াংশে সাহস করে উঠে পড়ো, কারণ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় এবং এতে দোয়া কবুল হয়।’ (মুসতাদরাক আলাস সহিহাইন: ১১৯০)
তাহলে দেখা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার দিন ও রাত এবং জুমার দিন ও রাত জুড়ে অনেক আমল রয়েছে। সেগুলো হলো-
১. বৃহস্পতিবারে রোজা রাখা
নবীজি (সা.) নিয়মিত বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। এর পেছনে একটি কারণ হলো- সে দিনে বান্দার আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। তিনি বলেছেন, ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে উপস্থাপন করা হয়। তাই আমি চাই, আমার আমল যেন রোজা অবস্থায় উপস্থাপিত হয়।’ (সুনানে নাসায়ি: ২৩৫৮)
২. বিবাদ মিটিয়ে ফেলা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক জোরদার করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘সোম ও বৃহস্পতিবারে আল্লাহ সব মুসলিমকে ক্ষমা করে দেন। তবে ওই দুই ব্যক্তি ছাড়া, যারা একে অপরকে বর্জন করেছে। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘পরস্পর মিলে যাওয়া পর্যন্ত এদেরকে আপন অবস্থায় ছেড়ে দাও।’ (ইবনে মাজাহ: ১৭৪০)
তাই আলেমরা বলেন, বৃহস্পতিবারে বিশেষভাবে বিবাদ মিটিয়ে ফেলা এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক করা জরুরি। কারণ ঝগড়ায় লিপ্ত ও সম্পর্ক ছিন্নকারীদের ক্ষমা করা হয় না। নবীজি (সা.) আরও সতর্ক করেছেন যে, কোনো মুসলমানের সঙ্গে তিন দিনের বেশি অভিমান করে থাকা নিষিদ্ধ। (বুখারি: ৬০৫৬; মুসলিম: ২৫৫৯)
৩. দরুদ পাঠ করা
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘জুমার দিনে ও রাতে আমার ওপর দরুদ পাঠ করো, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন।’ (বায়হাকি: ৬২০)
আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে আরও বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন ও রাতে আমার ওপর দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার ১০০টি প্রয়োজন পূরণ করবেন। এর মধ্যে ৭০টি আখিরাতে এবং ৩০টি পৃথিবীতে। (বায়হাকি: ২৭৬)
৪. সুরা কাহাফ পাঠ করা
জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। একসাথে পুরো সুরা পড়া কঠিন হলে রাতে কিছু এবং দিনে কিছু পড়ে শেষ করাও উত্তম।
হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে জুমার দিনে সুরা কাহাফ পড়বে, তার জন্য আসমান পর্যন্ত নূর প্রজ্জ্বলিত হবে এবং কেয়ামতের দিনটি তার জন্য উজ্জ্বল হবে। আর দুই জুমার মধ্যবর্তী গুনাহ ক্ষমা করা হবে।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড ৬, পৃ. ৩৯৮)
এছাড়া দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার জন্যও সুরা কাহাফ পাঠের নির্দেশনা আছে।
আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত: ‘যেভাবে নাজিল হয়েছে, সেভাবে সুরা কাহাফ পড়লে তা মক্কা পর্যন্ত নূর হয়ে দাঁড়াবে। আর শেষ ১০ আয়াত পাঠ করলে দাজ্জালের প্রভাব থেকে নিরাপদ থাকবে।’ (সুনানে নাসায়ি: ১০৭২২)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে জুমার দিনের গুরুত্ব উপলব্ধি করার এবং এর ফজিলতপূর্ণ আমলগুলো যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দিন, আমিন।
আইএইচ/