
ইসলামী নীতি-আদর্শ ও বিশুদ্ধ জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা অর্জন করার পূর্ব শর্ত হলো রাসুলের জীবন-আদর্শ ও কার্যক্রম ইত্যাদি বিষয়ে অবগতি লাভ করা। কারণ তার অনুপম চরিত্র ও জীবনাচারই ইসলাম। তাঁর জীবন এতটাই বৈচিত্রে বিভাজিত যে, তার জীবন জুড়ে জড়িয়ে আছে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে উত্তম নির্দেশিকা।
ফলে এমন কোন সমৃদ্ধ ভাষা নেই যে ভাষায় তার জীবনী গ্রন্থ রচিত হয়নি। এমনকি একটি সমৃদ্ধ ভাষায় কী পরিমাণ নবিজীবনী গ্রন্থ রচিত হয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। একজন মুসলিম লেখক মাত্রই তাঁর একান্ত কামনা- সিরাতে রাসুলের ওপর সামান্য কিছু লিখে হলেও সম্মান বোধ করা। অনেক অমুসলিম পর্যন্ত তার পবিত্র জীবনী লিখে নিজেকে ধন্য জ্ঞান করেছেন।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী গ্রন্থ অসংখ্য। তবে আব্দুল্লাহ আল মামুন আশরাফী রচিত “সিরাত বোঝার পূর্বপাঠ” গ্রন্থটি সিরাত অধ্যয়নের এক নতুন দরজা খুলে দেয়। গ্রন্থটিতে সিরাতের সংজ্ঞা, উদ্দেশ্য ও গুরুত্বের পাশাপাশি এর মূল উৎসগ্রন্থ, কাব্যিক সংকলন ও সম্পূরক দলিলসমূহের সংক্ষিপ্ত অথচ প্রাঞ্জল বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছে।
লেখক আরব জাতির বিপর্যস্ত জীবনযাত্রা ও আরবদের শিরিকি মনোবৃত্তি, প্রাচীনকালের জীবনচিত্র, নবুওয়াতের আগে মানুষের ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা, তৎকালীন সুপার পাওয়ার রোম ও পারস্য সাম্রাজ্যের পরিস্থিতি এবং হিন্দু ধর্মালম্বীদের অবস্থা তুলে ধরেছেন। ইউরোপের জীবনচিত্রও পাঠকের সামনে টেনে এনেছেন। এতে করে বোঝা যায়- যে সময়ে নবীজি (সা.) আগমন করেছিলেন, পৃথিবীর অবস্থা তখন কেমন ছিল।
তবে আরবদের মধ্যে কিছু অসাধারণ গুণ-বৈশিষ্ট ছিল যেগুলো তাদেরকে ইসলামের পতাকা বহন করার মত যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলেছিল এবং আরবদের কে পৃথিবীর মাঝে অনন্য করে তুলেছিল। যেমন-
১। প্রখর মেধা ও অসাধারণ ধিশক্তির অধিকারী
২। আরবদের আতিথেয়তা,হৃদয়ের উদারতা ও দানশীলতা ছিল অনন্য ও অতুলনীয়।
৩। সত্য উচ্চারণে ছিল নির্ভীক।
৪। তারা ছিল স্বাধীনচেতা ও বীরের জাতি।
৫। শহুরে নিয়ম কানুন, অতি প্রদর্শনী ও অধিক ভোগ-বিলাসিতা থেকে দূরে থাকত।
গ্রন্থের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশপরিচয়, শৈশব, পরিবার, সমাজসেবা, প্রথম বিয়ে ও নবুওয়াতের পূর্বপ্রস্তুতির বিশদ বিবরণ। পাঠক এখানে কেবল নবীর জীবনের প্রারম্ভিক পরিচয়ই পাবেন না, বরং সিরাত পাঠের প্রয়োজনীয়তা ও প্রাসঙ্গিকতাও নতুনভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন।
লেখক আব্দুল্লাহ আল মামুন আশরাফী তাঁর বলিষ্ঠ কলমে বইটিকে উপস্থাপন করেছেন এক সাবলীল ও প্রাঞ্জল বাংলায়। তাঁর অনুবাদ পাঠককে গভীরভাবে আকৃষ্ট করে। ইতিমধ্যেই তিনি পাঠকমহলে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, আর এই অনুবাদ নিঃসন্দেহে তাঁর অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে।
সব মিলিয়ে, “সিরাত বোঝার পূর্বপাঠ” গ্রন্থটি সিরাত অধ্যয়নের পথে এক অপরিহার্য সহচর। পাঠক এই বই হাতে নিয়ে নবিজির জীবনের মূল সূত্রগুলো যেমন জানতে পারবেন, তেমনি বুঝতে পারবেন- কেন রাসূলের জীবনই ইসলাম এবং কেন তাঁকে জানা ছাড়া ইসলামী আদর্শকে জানা সম্ভব নয়। লেখক তাঁর সহজবোধ্য অথচ হৃদয়গ্রাহী ভাষায় বইটিকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যে, পাঠক নিজেকে সেই সময়ের ইতিহাসের ভেতরেই আবিষ্কার করবেন।
নিঃসন্দেহে বর্তমান সময়ে, যখন তরুণ প্রজন্ম ইসলামের মৌলিক জ্ঞান ও দিকনির্দেশনা জানতে আগ্রহী হয়ে উঠছে, তখন এই গ্রন্থ তাদের জন্য হবে এক নির্ভরযোগ্য দিশারী। গবেষক, পাঠক ও সাধারণ মুসলিম- সবার জন্যই এটি একটি অবশ্যপাঠ্য বই হিসেবে স্থান করে নেবে বলাই যায়।
আইএইচ/