ইসলামে দাম্পত্য সুখের ২ মূলমন্ত্র : শায়খ আহমাদুল্লাহ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৫, ২১:১৫

দাম্পত্য জীবনের মূলমন্ত্র নিয়ে সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনা করেছেন প্রখ্যাত ইসলামী আলেম ও গবেষক শায়খ আহমাদুল্লাহ। দাম্পত্য জীবন নিয়ে তার আলোচনাটি বাংলাদেশের খবরের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-
দাম্পত্য জীবন এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে শুরু আর শেষের আবহ এক রকম থাকে না। উর্দু কবিতায় যেমন আছে- ‘ইবতেদায়ে ইশক অর ইন্তিহায়ে ইশক বরাবর নেহি হোতা হ্যায়’- প্রেমের শুরু আর শেষ কখনো এক হয় না। শুরুতে ফুল বিনিময়, উচ্ছ্বাস, উন্মাদনা; আর শেষে তা পরিণত হয় বিরক্তি, ক্লান্তি ও ঝগড়ায়। বৈবাহিক জীবনও এর বাইরে নয়।
দাম্পত্য জীবনের তিন ধাপ
বিয়ের শুরুতে স্বামী-স্ত্রী দুজনের মাঝেই ভালোবাসা, স্বপ্ন, প্রতিজ্ঞা ও প্রতিশ্রুতির প্রাচুর্য থাকে। কিন্তু সময় গড়াতে গড়াতে সংসারে সন্তান আসে, দায়িত্ব বাড়ে, এবং নানা কারণে সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। একপর্যায়ে দেখা যায়, সংসারের বোঝা ভারী হয়ে ওঠে এবং প্রতিদিনের তুচ্ছ বিষয় নিয়েও মনোমালিন্য শুরু হয়। যেন নদীর মাঝপথে উত্তাল তরঙ্গের মতো। তবে শেষ বয়সে আবার সেই প্রথম দিককার ভালোবাসার আবহ ফিরে আসে। তাই বিচক্ষণ মানুষ জানে- দাম্পত্য জীবনে উত্থান-পতন অবধারিত, এটিকে সামলে চললেই শান্তি ফিরে আসে।
ধৈর্যের গুরুত্ব
দাম্পত্য জীবনে সুখের অন্যতম মূলমন্ত্র হলো সবর ও শোকর। কারণ, দুই ভিন্ন পরিবার থেকে আসা দুইজন মানুষ যখন এক ছাদের নিচে বসবাস শুরু করে, তখন মতবিরোধ হবেই। এমনকি রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের মধ্যেও ছোটখাটো মান-অভিমান হতো। অথচ তিনি ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি সামলে নিতেন।
কুরআনে আল্লাহ বলেন, ধৈর্যশীলদের প্রতিদান আল্লাহ হিসাব ছাড়াই দেবেন। (সুরা যুমার, আয়াত-১০) তাই স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই ধৈর্য ধারণ করা আবশ্যক। স্বামী ভুল করলে স্ত্রীকে, আর স্ত্রী ভুল করলে স্বামীকে তা সহ্য করতে হবে।
কৌশলী হওয়া প্রয়োজন
দাম্পত্য জীবনে কৌশলও জরুরি। যেমন আশরাফ আলী থানভী রহ. এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিয়েছিলেন- স্ত্রী রাগারাগি করলে তাকে কল্পনায় কুকুরের মতো ভেবে নাও, যেমন কুকুর দেখলে ঘেউ ঘেউ করে। এতে স্বামী ঝগড়ার বদলে হাসতে শুরু করল। ফলত স্ত্রীও তার আচরণ পরিবর্তন করল। এখান থেকে শিক্ষা—ঝগড়ার জবাবে পাল্টা ঝগড়া নয়, বরং কৌশল ও ধৈর্যই শান্তির পথ খুলে দেয়।
নবীজির আদর্শ
নবী করীম (সা.)-এর জীবনে দাম্পত্য কলহের বাস্তব চিত্রও রয়েছে। যেমন, আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার একজন স্ত্রীর কাছে ছিলেন। ঐ সময় উম্মুহাতুল মু’মিনীনের অন্য একজন একটি পাত্রে কিছু খাদ্য পাঠালেন। যে স্ত্রীর ঘরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবস্থান করছিলেন সে স্ত্রী খাদিমের হাতে আঘাত করলেন। ফলে খাদ্যের পাত্রটি পড়ে ভেঙ্গে গেল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্রের ভাঙ্গা টুকরোগুলো কুড়িয়ে একত্রিত করলেন, তারপর খাদ্যগুলো কুড়িয়ে তাতে রাখলেন এবং বললেন, তোমাদের আম্মাজীর আত্মর্যাদাবোধে আঘাত লেগেছে। তারপর তিনি খাদিমকে অপেক্ষা করতে বললেন এবং যে স্ত্রীর কাছে ছিলেন তাঁর নিকট হতে একটি পাত্র নিয়ে যার পাত্র ভেঙ্গেছিল, তার কাছে পাঠালেন এবং ভাঙ্গা পাত্রটি যে ভেঙ্গেছিল তার ঘরেই রাখলেন। (সহীহ বোখারী, হাদিস-৫২২৫)
তিনি তাঁর স্ত্রীর প্রতি কোনো তিরস্কার করলেন না। এখান থেকেই শিক্ষা মেলে- দাম্পত্য জীবনে শান্তি চাইলে স্বামীকে স্ত্রীর অনেক কিছু হজম করতে হয়, স্ত্রীকেও স্বামীর অনেক কিছু হজম করতে হয়।
আজকের সমাজে ভোগপ্রবণতা বাড়লেও ত্যাগের মনোভাব ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ দাম্পত্য জীবনের শান্তি নির্ভর করে ত্যাগ, ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতার উপর। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে- যা কিছু আল্লাহ দিয়েছেন, তার জন্য শুকরিয়া আদায় করতে হবে এবং সমস্যার সময় সবর করতে হবে। ধৈর্য্য ও কৃতজ্ঞতা- এই দুই মন্ত্রই দাম্পত্য জীবনে সুখ-শান্তির মূল ভিত্তি।
আইএইচ/