বিতর এটি একটি আরবি শব্দ যার বাংলা অর্থ বিজোড়। সালাতুল বিতর বলতে বিজোড়ের নামাজ তথা বিতর নামাজকে বোঝানো হয়। যা প্রত্যেক মুসলিম বালেগ বালিগা নর-নারীর ওপর প্রতিদিন এশার নামাজের পর থেকে ফজরের পূর্বক্ষণ পর্যন্ত আদায় করা ওয়াজিব।
কেননা রাসুলে আরাবি (সা.) হাদিসে পাকের মধ্যে এরশাদ করেন, আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন বিজোড় এবং তিনি বিজোড় নামাজকে পছন্দ করেন। অতএব তোমরা বিজোড় সালাত (বিতর সালাত) আদায় কর। (তিরমিজি)
বিতরের নামাজ পড়ার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) বিশেষ তাগিদ দিয়ে বলেন, বিতরের নামাজ পড়া আবশ্যক। যে ব্যক্তি বিতর আদায় করবে না, আমাদের জামাআতের সাথে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। (আবু দাউদ)
বিতর নামাজের নিয়ত
বাংলায় নিয়ত এভাবে করতে হবে- ‘আমি তিন রাকাত বিতর নামাজ ওয়াজিব আদায় করছি আল্লাহর জন্য।’
বিতর নামাজের আরবি নিয়ত হলো- نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى ثَلَاثَ رَكَعَاتٍ صَلَاةَ الْوِتْرِ وَاجِبًا لِلَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إِلَى الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ : নাওয়াইতুআন উসল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা সালাসা রাকায়াতি সালাতিল উইতরি ওয়াজিবান লিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইইলাজিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
বিতর নামাজের নিয়ম
প্রথম দুই রাকাত : প্রথম দুই রাকাত অন্য ফরজ বা সুন্নত নামাজের মতো পড়ুন। প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহার পর একটি সুরা পড়ুন, রুকু, সিজদা এবং দুই সিজদার মাঝে দোয়া পড়ুন। দ্বিতীয় রাকাত শেষে তাশাহহুদ পড়ে বসুন।
তৃতীয় রাকাত : তৃতীয় রাকাতে সুরা ফাতিহার পর একটি সুরা পড়ুন। তারপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বেঁধে দোয়ায়ে কুনুত পড়ুন- আরবি : اَللَّهُمَّ اِنَّ نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ-اَللَّهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَاِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ اِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ
বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতায়িনুকা ওয়া নাসতাগ ফিরুকা, ওয়ানু’মিনু বিকা ওয়া নাতাওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুছনি আলাইকাল খাইর। ওয়া নাশকুরুকা ওয়ালা নাক ফুরুকা, ওয়ানাখলাউ উয়ানাত রুকু মাইয়্যাফযুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকানা’বুদু ওয়ালাকা নুছল্লি, ওয়ানাস জুদু ওয়া ইলাইকা নাসয়া; ওয়া নাহফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা আজাবাকা; ইন্না আজাবাকা বিলকুফফারি মুলহিক্। (সুনানে তিরমিজী, হাদিস ৪৬৪)
দোয়ায়ে কুনুত পড়ার পর রুকু, সিজদা, তাশাহুদ ও সালাম দিয়ে নামাজ শেষ করুন।
সতর্কতা- তৃতীয় রাকাআতে দোয়া কুনুত না পড়ে সিজদায় চলে গেলে নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ে সাহু সিজদা করলেই চলবে। আবার ভুলে প্রথম বা দ্বিতীয় রাকাআতে দোয়া কুনুত পড়ে ফেললেও সাহু সিজদা দিতে হবে।
বিতর নামাজ কয় রাকাত?
সাধারণত তিন রাকাত পড়া হয়। তবে ১ রাকাত বা ৫, ৭, ৯ রাকাত পড়ার কথাও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হানাফি মাযহাব মতে, তিন রাকাত নামাজ এক সালামে পড়তে হয়।
সময়
এশার নামাজের পর থেকে ফজরের সময় শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত পড়া যায়। যাদের তাহাজ্জুদের অভ্যাস আছে তাদের জন্য তাহাজ্জুদের পরে পড়া উত্তম।
আইএইচ/

