মুত্তাকী অর্থ তাকওয়া অবলম্বনকারী। আর তাকওয়া হচ্ছে, আল্লাহ কর্তৃক আদিষ্ট বিষয়গুলোকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করা। তা বাস্তবায়নে বদ্ধ পরিকর হওয়া। আর তার পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ বর্জন করা। তা থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকা। এভাবে পালনীয় বিষয়কে পালন করে এবং নিষিদ্ধ বিষয়সমূহকে বর্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা। আখেরাতে জান্নাত লাভের উপযুক্ত হওয়া এবং আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকা। আখেরাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের ব্যবস্থা হওয়া।
সতর্কতা অবলম্বন করে একজন ব্যক্তি সফল মুমিন হিসেবে আল্লাহ তাআলার কাছে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে থাকে। সে আল্লাহ তাআলার কাছে হয়ে ওঠে মর্যাদাবান। লাভ করে প্রভূত কল্যাণ। একজন ব্যক্তি পরিপূর্ণ মুত্তাকী হওয়ার জন্য প্রয়োজন অনেকগুলো গুণ অর্জন করা। কোরআনে মুত্তাকীদের সেসব গুণাবলির কথা তুলে ধরেছে। কোরআন মাজীদ এসব গুণাবলির কথা বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন প্রসঙ্গে তুলে ধরেছে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, এটি একমাত্র কিতাব। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এটা হেদায়েত সেসব ভীতি অবলম্বনকারীদের জন্য, যারা অদৃশ্য জিনিসসমূহে ঈমান রাখে। যত্নের সঙ্গে সালাত আদায় করে। এবং তাদেরকে আমি যা কিছু দিয়েছি তা থেকে (আল্লাহর সন্তোষজনক কাজে) ব্যয় করে। আর যারা ঈমান আনে আপনার উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার প্রতি এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার প্রতিও। তারা আখেরাতের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। এরাই আপন রবের পক্ষ থেকে হেদায়েতের উপর রয়েছে। আর তারাই সফলকাম। -সূরা বাকারা (২) : ১-৫
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুত্তাকীদের পাঁচটি গুণের কথা তুলে ধরেন। এক. যারা অদৃশ্য বিষয়ের প্রতি ঈমান আনে। দুই. যথাযথভাবে নামায আদায় করে। তিন. আল্লাহর দেওয়া রিযিক থেকে খরচ করে। চার. আপনার উপর এবং আপনার পূর্বে অবতীর্ণ বিষয়ের প্রতি ঈমান আনে। পাঁচ. আখেরাতের প্রতি ঈমান আনে।
এই আয়াতে মুত্তাকীর মোট পাঁচটি গুণের কথা তুলে ধরেছেন। এই পাঁচটি গুণ যে অর্জন করতে পেরেছে তাকে আল্লাহ তাআলা সফল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। আর যে তা অর্জন করেছে তার জন্য হেদায়েতের উপর থাকার নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন।
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, পুণ্য তো কেবল এটাই নয় যে, তোমরা নিজেদের চেহারা পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ফেরাবে; বরং পুণ্য হল (সেই ব্যক্তির কার্যাবলি) যে ঈমান রাখে আল্লাহর প্রতি, শেষ দিন ও ফিরিশতাদের প্রতি এবং (আল্লাহর) কিতাব ও নবীগণের প্রতি। আর আল্লাহর ভালবাসায় নিজ সম্পদ দান করে আত্মীয়-স্বজন, এতীম, মিসকীন, মুসাফির ও যাচ্ঞাকারীদেরকে এবং দাসমুক্তিতে এবং সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় এবং যারা কোনো প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূরণে যত্নবান থাকে এবং সঙ্কটে, কষ্টে ও যুদ্ধকালে ধৈর্যধারণ করে। এরাই তারা, যারা সত্যবাদী (নামে অভিহিত হওয়ার উপযুক্ত) এবং এরাই মুত্তাকী। -সূরা বাকারা (২) : ১৭৭
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুত্তাকীদের ছয়টি গুণের কথা তুলে ধরেছেন- এক. আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান আনা। দুই. আখেরাতের প্রতি ঈমান আনা। তিন. ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান আনা। চার. কিতাবের প্রতি ঈমান আনা। পাঁচ. নবীদের প্রতি ঈমান আনা। ছয়. সম্পদের প্রতি মনের টান থাকা সত্ত্বেও তা নিকটাত্মীয়, এতীম, মিসকীন, মুসাফির, যাঞ্চাকারী ও গোলাম আযাদের জন্য দান করা। সাত. যথাযথভাবে নামায আদায় করা। আট. যাকাত আদায় করা। নয়. প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। দশ. দুঃখ-দুর্দশা ও সংঘাতের সময় ধৈর্য ধারণ করা।
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুত্তাকীদের মোট দশটি গুণের কথা উল্লেখ করেছেন। এই দশটি গুণ যে অর্জন করেছে তাকে আল্লাহ সত্যবাদী বলে আখ্যা দিয়েছেন। অর্থাৎ সে ব্যক্তি তার জীবনে কথা ও কাজে আন্তরিকতার পরিচয় দিতে পেরেছে। অর্থাৎ সে যেমন নিষ্ঠার সঙ্গে আল্লাহ ও অন্যান্য জরুরি বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে। ঠিক যেসব কাজ বাস্তবে করা প্রয়োজন তা সে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আঞ্জাম দিয়েছে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পরিপূর্ণ তাকওয়া অর্জন এবং সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফীক দান করুন- আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন।
ডিআর/আইএইচ

