Logo

ধর্ম

আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তি কি শহীদি মর্যাদা পাবে?

Icon

মুফতি খায়রুল হাসান বিন মুজাহিদ

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:০৬

আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তি কি শহীদি মর্যাদা পাবে?

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। রাজধানী ঢাকার মিরপুরের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বহু নিরীহ মানুষ আগুনে দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। দগ্ধ মানুষের আর্তনাদ, পরিবারের কান্না আর ধ্বংসস্তূপে পুড়ে যাওয়া জীবনের করুণ চিত্র আমাদের মনকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনাগুলোর পর অনেকেই জানতে চান,  আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির পরকালীন অবস্থান কী? ইসলাম এ মৃত্যু সম্পর্কে কী বলে? তারা কি শহীদের অন্তর্ভুক্ত?

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর কিয়ামতের দিন তোমরা তোমাদের পূর্ণ প্রতিফল পাবে। অতঃপর যাকে দোজখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন তো প্রতারণার উপকরণ ছাড়া আর কিছুই নয়।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫)

মানুষের মৃত্যু অনিবার্য বাস্তবতা— কেউ পানিতে, কেউ রোগে, কেউ দুর্ঘটনায় বা আগুনে,  যেভাবেই মারা যাক না কেন, তা আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীরের অংশ। অতএব আগুনে মারা যাওয়া কোনো শাস্তি নয়; বরং এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এক প্রকার পরীক্ষা কিংবা শাহাদতের মর্যাদা লাভের সুযোগ হতে পারে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে নিহত ব্যক্তি শহীদ- এ ছাড়া আরও সাত প্রকার শহীদ আছে।’ তিনি বলেন, ১. প্লেগে (সংক্রামক মহামারিতে) মারা যাওয়া ব্যক্তি। ২. পানিতে ডুবে মারা যাওয়া। ৩. যার শরীরে এমন ফোঁড়া বা ঘা হয় যা ভিতরে বা বাইরে ফেটে মৃত্যু ঘটে। ৪. যার পেটের রোগে (যেমন ডায়রিয়া বা তীব্র পেটব্যথা) মৃত্যু হয়। ৫. আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তি। ৬. ধ্বংসস্তূপ বা ভাঙা ভবনের নিচে চাপা পড়ে মারা যাওয়া শহীদ এবং ৭. যে নারী সন্তানসম্ভবা অবস্থায় মারা যায় তিনিও শহীদা। কেউ কেউ বলেন, কুমারী অবস্থায় মারা যাওয়া নারীও শহীদা। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ৩১১১)

এ হাদীস দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, দুর্ঘটনাজনিতভাবে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তি শহীদের অন্তর্ভুক্ত। তাদের এই মৃত্যু যুদ্ধক্ষেত্রের শহীদের মতোই মর্যাদাসম্পন্ন, পার্থক্য কেবল দুনিয়াবি বিধানে— যেমন গোসল ও জানাজার নিয়মে।

ফিকাহ বিশারদ ইবনু আবেদীন (রহ.) বলেন, ‘তিনি (ফিকহবিদ) ‘হত্যার কারণে নিহত হওয়া’ কথাটি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন; কারণ কেউ যদি স্বাভাবিকভাবে মারা যায়, অথবা ঠান্ডায়, আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে বা কোনো ভবন ভেঙে মারা যায়, তবে তাকে দুনিয়ার দৃষ্টিতে শহীদ বলা হবে না, যদিও আখিরাতে সে শহীদের সওয়াব পেতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, “সম্পূর্ণ শহীদ’ বলতে বোঝানো হয়েছে সেই ব্যক্তিকে, যিনি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় দিক থেকেই শহীদ। দুনিয়ার দিক থেকে শহীদের চিহ্ন হলো—তাকে গোসল দেওয়া হবে না (তবে শরীরে নিজের রক্ত ছাড়া অন্য কোনো নাপাক বস্তু লাগলে গোসল দিতে হবে)। আর আখিরাতের দিক থেকে শহীদ মানে হলো—আল্লাহর নিকট শহীদের সওয়াব ও মর্যাদা লাভ করা।”

হাসকফী (রহ.) বলেন, ‘একইভাবে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া , আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া , অথবা ধ্বসে মারা যাওয়া, ব্যক্তিও আখিরাতের শহীদের অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের শহীদের সংখ্যা ইমাম সুয়ূতী (রহ.) প্রায় ত্রিশ প্রকার উল্লেখ করেছেন।’ (আদ্-দুররুল মুখতার মা’আ রদ্দুল মুখতার, ৩/১৪৭–১৫৫, باب الشهید, دار إحیاء التراث العربی, بيروت; হাশিয়াতুত-তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ, পৃ. ১২৮, باب أحكام الشهيد)

ইসলামের দৃষ্টিতে জীবন ও মৃত্যু উভয়ই আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীরের অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যক্তি আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন, তিনি আল্লাহর রহমতে আখিরাতের শহীদের মর্যাদা লাভ করেন। এটি কোনো শাস্তি নয়, বরং তাঁর জন্য জান্নাতের এক বিশেষ মর্যাদার দ্বার খুলে দেয়।

আমাদের কর্তব্য হলো- এমন দুর্ঘটনার হাত থেকে নিরাপত্তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং যারা এভাবে প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের জন্য মাগফিরাত কামনা করা। আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে শহীদের মর্যাদা দান করুন এবং শোকাহত পরিবারগুলোকে ধৈর্য ও সান্ত্বনা দান করুন।

লেখক : মুহাদ্দিস ও সিনিয়র শিক্ষক সাতগাঁও মাদ্রাসা বিজয়নগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর