Logo

ধর্ম

দেওবন্দের ৮ উসুল

Icon

কাজী সিকান্দার

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০৯

দেওবন্দের ৮ উসুল

দারুল উলুম দেওবন্দ। যা কওমি মাদরাসার সূতিকাগার হিসাবে পরিচিত। এটি ‘‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত’’ এর অনুসারী। মুসলিম জনসাধারণের আর্থিক সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত একটি স্বতন্ত্র শিক্ষাব্যবস্থা।

মাওলানা মুহাম্মদ কাসেম নানুতুবি, মাওলানা রশীদ আহমেদ গাঙ্গুহী এবং সৈয়দ আবিদ হুসাইনের মতো ইসলামি আলেমদের দ্বারা ১৮৬৬ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় দেওবন্দ মাদরাসা।

দেওবন্দের আদর্শ, নীতি ও পথ অনুসরণ করে পরবর্তীতে উপমহাদেশে অসংখ্য কওমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে দারুল উলুম হাটহাজারীসহ প্রতিষ্ঠিত হয় হাজারো কওমি মাদরাসা।

দেওবন্দ মাদরাসার প্রধান লক্ষ্য ছিল মুসলিম জনগণের আর্থিক সহায়তায় ইসলামী শিক্ষার প্রসারে একটি স্বতন্ত্র ধারা তৈরি করা, যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে।

সে হিসেবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে আটটি মূলনীতি বা উসুল গ্রহণ করা হয়। যার উদ্দেশ্য হলো, মাদরাসাটিকে সরকার ও প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিদের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা। নিম্নে দেওবন্দের ৮ উসুল বা মূলনীতি পেশ করা হলো।

১. মাদরাসা-সংশ্লিষ্ট সবাইকে মাদরাসার আর্থিক ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য অনুদান সংগ্রহ করার প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। নিজেও জোরদার ভূমিকা রাখা এবং মাদরাসার হিতাকাক্সক্ষীদেরও এ জন্য আকর্ষণ করা।

২. ছাত্রদের খোরাকির ব্যবস্থা করা। মানসম্মত খাবার পরিবেশন করা ও ক্রমান্বয়ে তা বাড়ানোর জন্য মাদরাসার হিতাকাক্সক্ষীদের সর্বদা সচেষ্ট হতে হবে।

৩. কার্যকরী কমিটির কর্মকর্তাগণকে মাদরাসার উন্নতি, অগ্রগতি এবং সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার দিকে সর্বদা লক্ষ রাখতে হবে। নিজস্ব মতামত প্রতিষ্ঠা করা, নিজের কথার ওপরই অটল থাকা এ ধরনের মনোভাব যেন কারো মনে সৃষ্টি না হয়। শ্রোতাদের মুক্তমন ও সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে মতামত শুনতে হবে। মুহতামিমের জন্য পরামর্শসাপেক্ষ সম্পাদনীয় বিষয়ে কার্যকরী কমিটির কর্মকর্তাগণের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া আবশ্যক। অপরিহার্য কারণে যদি মুহতামিম কার্যকরী কমিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করার সুযোগ না পান এ জন্য কারো অসন্তুষ্ট হওয়া উচিত নয়। তবে মুহতামিম যদি স্বভাগতভাবে এটি করে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপত্তি করা যাবে।

৪.  মাদরাসার সব শিক্ষককে অবশ্যই স্বচ্ছ হৃদয়ের অধিকারী হতে হবে এবং একই চিন্তা-চেতনা ধারণ করতে হবে। স্বার্থলোভী আলেমদের মতো নিজ স্বার্থ প্রতিষ্ঠা ও অন্যকে হেয়প্রতিপন্ন করার মতো গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

৫. পূর্বনির্ধারিত পাঠ্যসূচি অনুসরণ করে কিংবা কারণবশত পরামর্শের ভিত্তিতে পরিবর্তিত পাঠ্যসূচি সমাপ্ত করার জন্য নির্দিষ্ট উপায়ে পাঠদান করা। অন্যথায় এ প্রতিষ্ঠান সুপ্রতিষ্ঠিত হবে না। হলেও পরিপূর্ণ উপকারিতা হাসিল করা সম্ভব নয়।

৬. প্রতিষ্ঠান যত দিন পর্যন্ত অনির্ধারিত আয়ের ওপর নির্ভরশীল থাকবে, তত দিন পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা কুদরতিভাবেই আর্থিক সব ব্যবস্থা করে দেবেন ইনশাআল্লাহ। কিন্তু যদি স্থায়ী আয়ের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাহলে আল্লাহমুখী হওয়ার মূল পুঁজি হাতছাড়া হয়ে যাবে। গায়েবি সাহায্যও বন্ধ হয়ে যাবে, মাদরাসার শিক্ষক ও কর্মকর্তাগণের মাঝে পারস্পরিক বিদ্বেষ ও কলহ দেখা দেবে। মোট কথা, আয় ও আমদানি, নির্মাণ ও ইমারত প্রভৃতি কাজে সম্পূর্ণ তাওয়াক্কুল করতে হবে।

৭. সরকারি কর্মকর্তা ও আমির-উমারাদের সংশ্লিষ্টতা প্রতিষ্ঠানের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই যথাসম্ভব নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে এড়িয়ে চলা।

৮. যথাসম্ভব আদায়কৃত অনুদানই প্রতিষ্ঠানের জন্য অধিক বরকতময়। যারা অনুদানের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোনো লাভের প্রত্যাশা করেন না, তাদের অনুদান ও নেক নিয়ত প্রতিষ্ঠানের জন্য অধিক স্থায়িত্বের কারণ।

লেখক : পরিচালক, ইসলাহ বাংলাদেশ
আশরাফবাদ, ঢাকা-১২১১
Kayisikandar83@gmail.com 

বিকেপি/এমবি 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর