Logo

ধর্ম

শীতে প্রশস্ত হোক মানবতার চাদর

Icon

রাশেদ বিন শফিক

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৪২

শীতে প্রশস্ত হোক মানবতার চাদর

কুয়াশায় ঢেকে যায় এখন ফজরের আকাশ। চিক চিক করে হেমন্তের বুক মাঝে সোনালী চাদর। হিম শীতল হাওয়া বয় শহর গ্রামে। চৌরাস্তার মোড়ে শুয়ে থাকা পথিক এখন কাঁপে গভীর রাতে। পাতলা কাঁথা টানাটানি করে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে থাকা বিধবা মায়ের কচিকাঁচা ছেলেমেয়ের গতর ঠাণ্ডায় ভীষণ জমাট বাঁধে রাত্রি নিশিতে।

মানুষের ভালোবাসা মানুষ প্রত্যাশা করে, আর সৃষ্টির প্রতি দরদে স্রষ্টার সন্তুষ্টি মিলে। তাই শীতের আগমনী বার্তায় হৃদয়ে জাগুক সমাজের ছিন্নমূল মানুষের প্রতি মায়া। অভাগীর চাহনিতে চেয়ে দেখো হে বৃত্তবান সমাজ, কতোটা মায়া আর দয়া কামণার নদী বয়। চোখের ভাষা বুঝো, হৃদয়ের টান অনুভব করো। তাদের দুঃখবোধে প্রসারিত করো তোমার দানের হাত। তুমি বৃত্তবান, তোমার অর্থবৃত্তে জানো তো কতভাবে জড়িয়ে আছে এমন হতদরিদ্রদের অবদান। তাদের প্রতি দানের হাত বাড়ানো কেবল তোমার দয়া দেখানো নয় বরং তোমার দায়বদ্ধতাও বটে। মহান আল্লাহ পাক কোরআনে ফরমান, ‘তুমি কি জানো, বন্ধুর গিরিপথ কী? এটা হচ্ছে দাসমুক্তি অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে আহার দেওয়া এতিম আত্মীয়কে বা দারিদ্র্য-নিষ্পেষিত নিঃস্বকে। এর পরই সে হবে ঈমানদারের অন্তর্ভুক্ত...। (সুরা : বালাদ, আয়াত : ১২-১৭) কোরআনের এই আয়াতের মর্ম এ কথার শিক্ষা দেয়, অসহায়দের সহায়তা করা, নিঃস্বজনের প্রতি সহৃদয়বান হওয়ার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ঈমানদারদের কাতারে সামিল হতে হবে।

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতী। মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের নির্দেশ দেবে এবং মন্দ কাজে বাধা দেবে।’ (সুরা-৩ আলে-ইমরান, আয়াত: ১১০)

সৃষ্টির মাঝে (আশরাফুল মাখলুকাত) সর্বসেরা প্রাণী হিসেবে মানুষ জাতীকে তিনি সৃষ্টি করেছেন, পরোপকারের মাধ্যমে মানব জাতী নিজের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরবে । একে অপরের কল্যাণে কাজ করার শিক্ষা দেয় মানবতার মুক্তির সনদ আল কোরআন। মানুষের প্রতি মানুষের দয়া ও মমতার বন্ধন গড়ে তুলতে প্রেরণার মহাপুরুষ ছিলেন স্বয়ং রহমতি নবী সারকারে দুজাহান মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা.।

তাঁর জীবনদর্শনে পরোপকারের সবক পরতে পরতে বিদ্যমান। ক্ষুধার্ত কেউ তার নিকট প্রার্থনা করলে কখনো খালি হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার নজির নেই। আপন পর সবার উপকারে তিনি উপস্থিত হতেন। যার যে ধরনের সমস্যা নিয়ে হাজির হতো তিনি তার সবটুকু দিয়ে উপকার করতেন। 

সেই মহামানব, মহা প্রতিপালকের মহানবী সা. আমাদেরকে বলে গেছেন, ‘তোমরা জগদ্বাসীর প্রতি সদয় হও, তাহলে আসমানের মালিক আল¬াহ তাআলা তোমাদের প্রতি সদয় হবেন।’ (তিরমিজি: ১৮৪৭)

রাব্বে কারীমের সদয় এবং দয়া আমরা কেবা না চাই! তাঁর অসীম দয়ার ঝর্ণা পেতেই আমাদের অন্যের প্রতি দয়াশীল হওয়ার আদেশ রাসূল পাকের হাদিসে পাই। অসহায় মানুষের প্রতি সহায় হতে হবে তার অবস্থান ও জরুরত বুঝে। যার যখন যা প্রয়োজন তার প্রতি নিজের সামর্থ দিয়েই সহায়তা করতে হবে। মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, “যে পরিশুদ্ধ হওয়ার জন্য তার সম্পদ দান করে ও কারো কাছে প্রতিদান আশা করে না, শুধুমাত্র তার মহিমাময় প্রভুর সন্তুষ্টি লাভের জন্যই সে দান করে। এবং অচিরেই সে (জান্নাতে প্রবেশ করে) সন্তুষ্ট হবে।” (৯২-সূরা আল লাইল: আয়াত-১৮-২১)

মহান রবের সন্তুষ্টি এবং জান্নাত লাভের প্রত্যাশা আমাদের হৃদয়ে সঞ্চার হোক পরোপকারের তৃষ্ণা। এই আগমনী শীতে আমরা শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই। আপনার নিকটস্থদের প্রতি আপনি উদাসীন হবেন না। আপনার দানশীলতা শুরু হোক পাড়া-প্রতিবেশি এবং আত্মীয় স্বজনদের মাঝে। তাদের মধ্যে শীতার্ত কাউকে উপেক্ষা করে দূরের কারো দিকে ছুটবেন না। সামর্থের সবটুকু দিয়ে পাশে থাকার চেষ্টা আমরা সকলেই করি। 

লেখক: কবি, গীতিকার, প্রাবন্ধিক
রাজনগর, মৌলভীবাজার

বিকেপি/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ইসলাম ধর্ম

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর