আজ আন্তর্জাতিক মানবীয় সংহতি দিবস
মানবতার সেবায় ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:০৯
মানুষই পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সৃষ্টি। ইসলামের মূল শিক্ষা হলো মানুষের কল্যাণ ও সংহতি। প্রতি বছর ২০ ডিসেম্বর পালিত হয় আন্তর্জাতিক মানবীয় সংহতি দিবস, যা আমাদের মনে করায় মানবতার সেবা, সহমর্মিতা ও সমাজের দুর্যোগকালীন সাহায্যের গুরুত্ব।
মানবতার জন্য ইসলামের নির্দেশ
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- ‘তিনি কি আপনাকে এতিমরূপে পাননি? অতঃপর তিনি আশ্রয় দিয়েছেন। তিনি আপনাকে পেয়েছেন পথহারা, অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন। তিনি আপনাকে পেয়েছেন নিঃস্ব, অতঃপর অভাবমুক্ত করেছেন। সুতরাং আপনি এতিমের প্রতি কঠোর হবেন না, সওয়ালকারীকে ধমক দেবেন না।’ (সুরা দুহা : ৬-১০)।
তিনি আরও ইরশাদ করেন, যে আল্লাহ ও আখিরাতের বিশ্বাস রাখে, তারা প্রিয়জন, অনাথ, দরিদ্র ও যাত্রীদের সাহায্য করবে।-(সূরা বাকারা: ১৭৫) এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, ইসলামে মানবতার কল্যাণ সমাজের সকল স্তরে প্রয়োগের বিষয়।
হাদিসে মানবিক সহমর্মিতা
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) বলেছেন:- যে ব্যক্তি মানুষের কষ্ট দূর করতে সাহায্য করে, আল্লাহ তায়ালা তার সব পাপ ক্ষমা করবেন।
(সহীহ মুসলিম : ২৬৯৯) এছাড়াও তিনি বলেছেন, মুসলিম মুসলিমের জন্য দড়ির মতো; তিনি একে অপরের জন্য সহায়ক ও ক্ষমাশীল। (সহীহ বুখারি: ২৪৪৯)
হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে; আল্লাহপাক কেয়ামতের দিন বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রƒষা করোনি। বান্দা বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আপনি তো বিশ্বপালনকর্তা, কীভাবে আমি আপনার শুশ্রƒষা করব? তিনি বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল? অথচ তাকে তুমি দেখতে যাওনি। তুমি কি জান না, যদি তুমি তার শুশ্রƒষা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে। হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে আহার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাওনি। বান্দা বলবে, হে আমার রব! তুমি হলে বিশ্বপালনকর্তা, তোমাকে আমি কীভাবে আহার করাব? তিনি বলবেন, তুমি কি জান না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাদ্য দাওনি। তুমি কি জান না যে, তুমি যদি তাকে আহার করাতে তবে আজ তা প্রাপ্ত হতে? হে আদম সন্তান! তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাওনি। বান্দা বলবে, হে আমার প্রভু! তুমি তো রাব্বুল আলামিন, তোমাকে আমি কীভাবে পান করাব? তিনি বলবেন, তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে পান করাওনি। তাকে যদি পান করাতে তবে নিশ্চয়ই আজ তা প্রাপ্ত হতে।’ (সহিহ মুসলিম)
এই হাদিসগুলো মানবিক সংহতি এবং একে অপরের প্রতি সহানুভূতির গুরুত্ব নির্দেশ করছে।
আন্তর্জাতিক সংহতি ও ইসলামের শিক্ষা
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- “পুণ্যবান তারা যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর ওপরে, আখেরাত, ফেরেশতা ও সকল কিতাবের ওপরে যারা সম্পদের প্রতি ভালোবাসা সত্ত্বেও অর্থ দান করে আত্মীয় স্বজন, ইয়াতিম, মিসকিন, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী ও দাস মুক্তির জন্য এবং সালাত কায়েম করে স্বীয় অঙ্গীকার পূর্ণ করে এবং বিপদে-অনটনে ও হক-বাতিলের সংগ্রামে ধৈর্য ধারণ করে; তারাই সৎ ও সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই মুত্তাকি।” (সূরা বাকারা : ৭৭)
আন্তর্জাতিক মানবীয় সংহতি দিবস মানবতার সেবা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা উদযাপন করে। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এ ধরনের সংহতি ন্যায়পরায়ণতা ও সহমর্মিতার সঙ্গে সম্পর্কিত। কোরআন ও হাদিসে বারংবার নির্দেশ রয়েছে যে, মানবকল্যাণে এগিয়ে আসা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
মানবিক সংহতি বাস্তবায়ন
ইসলামিক দৃষ্টিতে মানবিক সংহতি বাস্তবায়নের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক:
১. দরিদ্র ও অসহায়দের সহায়তা করা -জাকাত ও সাদাকা।
২. দুর্যোগকালীন সাহায্য প্রদান -খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা।
৩. ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখা -সমাজে শোষণ প্রতিরোধ করা।
৪. সহমর্মিতা ও ক্ষমাশীলতা -মানসিক সমর্থন ও উপদেশ।
কোরআন বলছে: “যারা আল্লাহর পথে অন্যদের সাহায্য করে, আল্লাহও তাদের সাহায্য করবেন।-(সূরা আনফাল : ৬০) এটি প্রমাণ করে যে, মানবিক সংহতি কেবল সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম।
পরিশেষে বলতে চাই, আন্তর্জাতিক মানবীয় সংহতি দিবস আমাদের মনে করায় যে, মানবতার সেবা একান্ত দায়িত্ব। ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী, সহমর্মিতা, সাহায্য এবং ন্যায়পরায়ণতা আমাদের প্রতিটি কর্মে প্রতিফলিত হওয়া উচিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মানবতার সেবায় নিয়োজিত হবার তাওফিক দান করুন।
লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি

