
বাংলাদেশের খবর
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত
পূর্ব জেরুজালেমে আল আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার পর নতুন করে বিস্ফোরিত হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধাবস্থা। শনিবার গভীর রাতে ইরান ইসরায়েলে হামলা চালালে দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চূড়ান্ত বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। যুদ্ধের প্রথম প্রহরেই ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর ঘাঁটি, সামরিক সদরদপ্তর, স্থল ও নৌসেনা কেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইরানের দাবি, হামলায় অন্তত ১০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েল বলছে, তেহরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে পারলেও তেল আবিব ও ইয়েরুশালেমে আঘাত হানে বেশ কয়েকটি ড্রোন ও মিসাইল। ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েলের ৭২০টি সামরিক স্থাপনা তারা গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
গাজা যুদ্ধের জের ধরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ে নামা এটিই ইরানের প্রথম হামলা। এর আগে শত্রুপক্ষের সঙ্গে ইরান ছায়াযুদ্ধ করে এসেছে। এবার আল কুদস বাহিনী ও বিপ্লবী গার্ড বাহিনী যৌথভাবে চালিয়েছে এই অভিযান। লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুতি গোষ্ঠী ইরানের পক্ষ নিয়ে এই হামলায় অংশ নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদরদপ্তর পেন্টাগন জানিয়েছে, তেহরানের ছোড়া ৩০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের আঘাত হানে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে। এ ঘটনায় শনিবার গভীর রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত তেল আবিবজুড়ে বাজতে থাকে সাইরেন। বন্ধ করে দেয়া হয় বিমান চলাচল।
রোববার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু করতে চায় না তেহরান। ইসরায়েল হামলা বন্ধ করলে আর আক্রমণ চালাবে না তারা। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান বলেছেন, ‘আত্মরক্ষার অধিকার থেকেই আমরা হামলা করেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল শুধুই সামরিক স্থাপনা।’
অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তেল আবিবে চালানো হামলা ছিল ইরানের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ। বহু সামরিক ও বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। এর প্রতিশোধ নেবে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি নাগরিকদের কাছে এটি যেন গাজার ধ্বংসযজ্ঞের পুনরাবৃত্তি। বহু মানুষ ঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। যাদের যাওয়ার জায়গা নেই, তারা ঢুকে পড়েছেন বোমা শেল্টারে। একটি ইসরায়েলি টেলিভিশন চ্যানেল জানিয়েছে, বহু ভবন ধসে পড়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন বহু মানুষ।
ইরানের হামলার নিন্দা জানিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। রোববার তিনি বলেন, এ ধরনের যুদ্ধ বন্ধে এখনই পদক্ষেপ নেয়া উচিত আন্তর্জাতিক মহলের।
ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি আরও জোরদার করেছে হোয়াইট হাউস। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী বলছে, ইরানকে ঠেকাতে প্রস্তুত আছে তারা।
যুগান্তর
পালটাপালটি হামলায় দুই দেশ
বিভীষিকাময় রাত পার করল ইরান-ইসরাইল
সন্ধ্যা নামছে। রাত বাড়ছে। ঢুলুঢুলু চোখেই পার হয়ে যাচ্ছে মধ্যরাতও । তবু ঘুম নেই! উলটো আতঙ্ক। বদ্ধ ঘরে শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ। ছাদ-মেঝে, দেওয়াল-বেলকনিতে একটু ছন্দপতনেই আঁতকে উঠছে সবাই। চঞ্চল হয়ে উঠছে ভয়ে বিবর্ণ পরিবার-এই বুঝি উড়ে এলো ক্ষেপণাস্ত্র দানব! সাঙ্গ হলো ভবলীলা! গত তিন দিন ধরে এই আতঙ্কেই ঘুম উড়ছে ইরান-ইসরাইলের জনপদে। এর মধ্যে শনিবার রাতটাই ছিল সবচেয়ে বিভীষিকাময়। মৃত্যুভয়ে ঘুম উড়ে গিয়েছিল দুদেশের চোখেই। বিশেষ করে রাজধানী ও সীমান্তবর্তী শহরগুলোতে। রাতভর দুই বাহিনীর হামলা-পালটাহামলার দাপটে অবস্থা এমন হয়ে উঠেছিল যেন পলক ফেললেই আগুনের কুণ্ডলী হয়ে ক্ষিপ্রগতিতে ছুটে আসবে প্রাণঘাতী ক্ষেপণাস্ত্র। কিংবা খানিক অসাবধানেই পাশের দুমড়ে-মুচড়ে ধসে পড়া ভবনটি গায়ে এসে পড়বে। মধ্যরাতের বিশ্রাম; নিশ্চিন্ত নিদ্রা-দিনশেষের এ চিত্র এখন ইরান-ইসরাইলে পুরোটাই উলটো। রাত বাড়লেই মৃত্যু নামছে সেখানে। শোকের মাতম উঠছে দুদেশেই। রোববার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইসরাইলের ১৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত ৩৯০। ইরানের রাষ্ট্রীয় বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১২৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত ৯০০ জন। তবে গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, ইরানে ৪০৬ জন নিহত এবং ৬৫৪ জন আহত হয়েছেন। এএফপি, আলজাজিরা।
শনিবার রাতভর পালটাপালটি হামলা চালিয়েছে ইরান-ইসরাইল। একের পর এক। এক শহর থেকে অন্য শহর। ৫০টি যুদ্ধবিমানে ইরানের ৮০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে পালাক্রমে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। তছনছ করে দিয়েছে তেহরানসহ বেশ কয়েকটি এলাকা। ভয়ে রাজধানী ছেড়ে পালাচ্ছেন তেহরানবাসী। রোববার মধ্যরাতে বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দোকানপাট বন্ধ করে যে যার মতো রাজধানী ছাড়ছেন বাসিন্দারা। অপর দিকে রাতভর শত শত মিসাইল ছুড়ে ইসরাইলের দুই শহর হাইফা ও বাত ইয়াম লন্ডভন্ড করে দিয়েছে ইরান। সাইরেন-ক্ষেপণাস্ত্রের শব্দে থেমে থেমেই আঁতকে উঠেছে দুই শহর। জেরুজালেম, লেবানন সীমান্তবর্তী শহর গ্যালিলি, উত্তরাঞ্চলের তামরাসহ গুরুত্বপূর্ণ সব শহরই কেঁপে উঠেছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রে।
তেল আবিবের উপকূলীয় শহর বাত ইয়ামে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইরান। ধুলোয় মিশে গেছে ছোট-বড় প্রায় ডজনখানেক ভবন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক ডজন ভবন। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, গাজার মতো কঙ্কালসার শরীর নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে বাত ইয়ামের আধুনিক নগর সভ্যতার বিরাট একটি অংশ। শনিবার রাতভর শহরটিতে প্রায় ১০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। রোববার বাত ইয়ামের মেয়র তজভিকা ব্রট শভা ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ‘ব্যাপক ধ্বংস এবং ডজন ডজন ভবনের ক্ষতি হয়েছে। মৃত্যুর পাশাপাশি ১০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। অন্যরা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন।’ গিমেল নামের ৫০ বছর বয়সি এক নারী স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেটকে বলেন, ‘আমি তখন বাড়িতে একা। সাইরেনের শব্দ শুনেই বোম্ব শেল্টারে যাওয়ার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু প্রথমে দৌড়ে বাথরুমে যাই। আমি দুটি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনি, ভেবেছিলাম এটা শেষ হয়েছে। পরে যখন শুনলাম উত্তর দিকে চার নারী নিহত হয়েছেন, তখনই হঠাৎ আমার মাথার ওপর সবকিছু ভেঙে পড়ল। পুরো ছাদ ধসে পড়ল। আমি নিজেকে বলছিলাম, আমি মারা যাচ্ছি।’
আরেক বাসিন্দা বারুচ বলেন, ‘আমি আমার জীবনে এমন কিছু দেখিনি। আমি যুদ্ধ করেছি। ছয় দিনের যুদ্ধে গোলান মালভূমিতে আমি লড়াই করেছিলাম। কিন্তু সেখানে এমন কিছু ঘটেনি।...বোমার শক্তি দেখে আমি সত্যিই ভয় পেয়েছিলাম।’ দিনের আলো ফুটতেই বাত ইয়ামের একটি বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার জন্য ইরানকে খুবই চড়া মূল্য দিতে হবে। জনমনে সাহস যোগাতে বলেন, ‘আমরা অস্তিত্বের লড়াই চালাচ্ছি। আমি মনে করি এখন প্রতিটি ইসরাইলি নাগরিক তা বুঝতে পারছে।’
বন্দরনগরী হাইফা শহরেও ভয়ংকর ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান। টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, ইরানি বাহিনী রাতারাতি ইসরাইলে প্রায় ৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। যার মধ্যে ৪০টি উত্তরাঞ্চল হাইফায় আঘাত হেনেছে। এতে অনেক ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। বেশ কিছু ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। এছাড়া ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হাইফার তেল শোধনাগার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে পাইপলাইন এবং ট্রান্সমিশন লাইনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরাইলের সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগার এই শহরে। একটি নৌঘাঁটিও রয়েছে হাইফাতে। হামলার সময় স্থানীয়রা বেশির ভাগই সরকার নির্দেশিত বাংকারে আশ্রয় নেয়। পূর্ণ নিরাপত্তা সত্ত্বেও বাংকারগুলোতেও ভয়ার্ত রাত কেটেছে ইসরাইলিদের। টাইমস অব ইসরাইলের এক ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, একসঙ্গে অনেকে থাকলেও প্রত্যেকের ভেতরই আতঙ্ক-ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। ইসরাইলের কেন্দ্রীয় শহর রেহোভে গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় উইজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকটি স্থাপনা নষ্ট হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তবে এই হামলায় কেউ হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট। ইরানের হামলার ভয়াবহতা ফুটে উঠেছে খোদ ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগের মুখেও। রোববার সামাজিকমাধ্যম এক্সের পোস্টে রাতভর হামলার পরের সকালকে ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও কঠিন’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। শোকাহত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেন, এই ভয়াবহ ক্ষতির কারণে তিনি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে শোক ভাগ করে নিচ্ছেন। আহতদের সুস্থতা কামনা করছেন। নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করছেন।
কালের কণ্ঠ
ব্যাংক খাতে অস্থিরতা, খেলাপি ঋণ, বিনিয়োগ স্থবিরতা, মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানিসংকটে নাজুক দেশের আর্থিক ভিত্তি। বলতে গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নানা সূচকে নেমে এসেছে উদ্বেগের ছায়া, বেড়েছে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি। চলমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নীতিগত দুর্বলতা যোগ হয়ে দেশের সার্বিক অর্থনীতির মন্দা কোনোভাবেই কাটছে না।
ব্যাংক খাতে অস্থিরতা : নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মোট ১৪টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর চরম তারল্য সংকটে পড়েছে ব্যাংকগুলো। এখনো সেই চাপ সামলে উঠতে পারেনি কিছু ব্যাংক। এসব দুর্বলতার মধ্যে পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করতে কাজ চলছে প্রথম ধাপে।
পলাতক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের আমলে ব্যর্থ হওয়া পদ্ধতি বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে আলোচিত ও বিতর্কিত এক ইস্যু ‘মার্জার’ বা একীভূতকরণ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২৪ সালের শেষ ভাগ থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যদিও এর লক্ষ্য ব্যাংক খাতকে আরো সুশৃঙ্খল ও স্থিতিশীল করা; তবে বাস্তবে এই সিদ্ধান্ত গ্রাহক, কর্মকর্তা ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি করেছে। কারণ ইতিহাস বলছে, একাধিক প্রতিষ্ঠান মার্জ হলে কিছু না কিছু কর্মকর্তার চাকরি হারানো নিশ্চিত।
খেলাপি ঋণে নতুন রেকর্ড : বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত আবারও নতুন এক বিপজ্জনক রেকর্ডে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। মাত্র তিন মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। এই ঋণের হার এখন দাঁড়িয়েছে মোট বিতরণ করা ঋণের ২৪.১৩ শতাংশে, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের তুলনায় বিপজ্জনকভাবে বেশি। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এত দিন লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ এখন বেরিয়ে আসছে।
সমকাল
মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত
হামলার জবাবে হামলা চলছে, ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে
ইরান ও ইসরায়েল সংঘাতের তৃতীয় দিনে ব্যাপক হামলা-পাল্টা হামলা হয়েছে। এক ঝাঁক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে ইরান। এতে ১৩ জন নিহত ও ৩৫ জন নিখোঁজ হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৪৯ জন। গত শনিবার রাত ও গতকাল রোববার চালানো হামলায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ইরানেরও। দেশটির পারমাণবিক স্থাপনায় নতুন করে হামলা হয়েছে। এ ছাড়া তেহরানে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইরানও গতকাল পাল্টা হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েলের আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র দৃষ্টিগোচর হলে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) তা রুখে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। সতর্কতা হিসেবে সাইরেন বেজে ওঠে।
আগের হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইসরায়েলের বাত ইয়াম এলাকা। সেখানে আবাসিক ভবন ধসে ছয়জন নিহত এবং অনেকে নিখোঁজ হয়েছেন। ইসরায়েলের উদ্ধার দল জানায়, তারা ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে হামলা চালানোর বিষয়ে সতর্ক করে বলেছেন, এ সংঘাত সহজেই শেষ করা সম্ভব। তিনি একটি চুক্তির বিষয়ে আশাবাদী।
ইরানের হামলায় ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও প্রাণহানি হয়েছে কম। লোকজন সাইরেনের শব্দ শুনেই ভূগর্ভস্থ বোমা আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান। ইরান থেকে সবচেয়ে দ্রুতগামী ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে পৌঁছতে কমপক্ষে ১০ মিনিট সময় লাগে। মাঝে সিরিয়া, জর্ডান পাড়ি দিতে হয়। ইসরায়েলের বাসিন্দারা সতর্ক বার্তা পেয়েই নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান। ইরানে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই। হামলার হুমকির মুখে অনেক বাসিন্দা তেহরানের বাইরে চলে যাচ্ছেন।
ইসরায়েলে ইরানের সর্বশেষ আঘাতের ঢেউ শুরু হয় স্থানীয় সময় শনিবার রাত ১১টার পর। জেরুজালেম ও বন্দরনগরী হাইফাতে সাইরেন বেজে ওঠে। প্রায় ১০ লাখ মানুষ ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যান। রাত আড়াইটার দিকে আরেক ঝাঁক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েল অভিমুখে ছুটে আসতে থাকে। আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে আবারও নির্দেশনা দেয় আইডিএফ। এ সময় শূন্যে ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের চেষ্টা চালানো হয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে। এদিকে ইয়েমেন থেকে জাফফা ও তেল আবিবে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে হুতিরা।
ইসরায়েলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়েছে তেহরান। ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় শহর রেহোভতে গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় উইজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট জানায়, এতে কেউ হতাহত হননি। ইরানের চালানো আগের রাতের হামলার প্রসঙ্গ টেনে গতকাল রোববার ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারগোজ বলেন, এটি বেদনাদায়ক ও কঠিন এক সকাল।
ইরানের হামলায় ইসরায়েলে শিশুসহ প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বিশেষ করে উত্তর ও মধ্য ইসরায়েলে আঘাত হানে। তামরা শহরে চার নারী নিহত হয়েছেন। মধ্যাঞ্চলের বাত ইয়ামে বহুতল ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। বেঁচে যাওয়া স্যামুয়েল বার ডেভিড নামে ওই ভবনের এক বাসিন্দা জানান, তিনি সেখানে ৩৫ বছর ধরে থাকছেন। হামলায় অলৌকিকভাবে তাঁর পরিবার বেঁচে গেছে।
হতাহত ও নিখোঁজের খবর নিশ্চিত করে দ্য টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, বাথ ইয়ামে আবাসিক ভবনে ইরানের একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। উদ্ধার অভিযান চলছে, যা শেষ করতে এক দিন লাগবে। ওই এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সাংবাদিকদের ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ।
সিএনএন জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ইসরায়েলের হামলায় ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২৮। আহত ৯০০ জন। এর মধ্যে গত শুক্রবার রাতে তেহরানে একটি ১৪ তলা আবাসিক ভবন বিধ্বস্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ৬০ জন নিহত হন। ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ-রেজা জাফরগান্দ বলেন, ইসরায়েলের বিমান হামলায় যারা নিহত হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এদিকে তেহরানে সামরিক স্থাপনার আশপাশ থেকে লোকজনকে সরে যেতে বলেছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবা জানিয়েছে, রোববার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর উত্তর ইসরায়েলের হাইফায় কমপক্ষে চারজন আহত হয়েছেন। হাইফায় বিস্ফোরণের খবরও মিলেছে। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সত্ত্বেও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের সংখ্যা দেখে ইসরায়েলিরা হতবাক হচ্ছে।
ইরানে বৃহত্তর মার্কিন সামরিক সম্পৃক্ততা খুঁজছে ইসরায়েল। ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করেছি। ইস্পাহানের একটি পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা করেছি।’
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা পশ্চিম ইরানে বিমান হামলা চালিয়েছে। ইরাকে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস মার্কিন স্থাপনাগুলোতে সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছে। ইরান জানিয়েছে, তারা ৪৪টি ইসরায়েলি ড্রোন এবং কোয়াডকপ্টার ভূপাতিত করেছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত শান্ত হবে বলে আশাবাদ দিয়েছেন। রোববার গ্রিনল্যান্ড সফরের তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, ইরান থেকে রোববার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর তারা তা প্রতিরোধ করেছে।
মানবজমিন
পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নিচ্ছে ইসরাইল ও ইরানের সংঘাত। একটি পুরো মাত্রার যুদ্ধ বলতে যা বোঝায়, তার প্রায় সব উপাদান উপস্থিত। লক্ষণীয়, ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম’কে ভেদ করে দেশটিতে ভয়াবহ হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে ইরান। ফলে তছনছ হয়ে গেছে ইসরাইল। বহু ভবন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। নিহত হয়েছে কমপক্ষে ১৩ জন। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, ইসরাইলের ভয়াবহ ক্ষতিতে শোকার্ত দেশ। খুব দুঃখজনক ও কঠিন সময় পার করছে ইসরাইল। ক্ষয়ক্ষতি কেমন হলে প্রেসিডেন্ট এমন মন্তব্য করতে পারেন, তা সহজেই অনুমেয়। এমন অবস্থায় আশার বাণী শুনিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেছেন, সাম্প্রতিক ভারত ও পাকিস্তানের মতো সহসাই যুদ্ধ বন্ধ হবে। এই যুদ্ধে ইরানে ক্ষয়ক্ষতি অবর্ণনীয়। ইসরাইল দাবি করেছে তারা শনিবার রাতভর ইরানের ৮০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। তিনদিনে ইরানের কমপক্ষে ৭২০টি সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে। পাশাপাশি ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ডের প্রধান এবং সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের ও বিপুল সংখ্যক পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে ইসরাইল। সঙ্গে তো বেসামরিক স্থাপনা, প্রাণহানির খবর আছেই। এই ক্ষতির সঙ্গে ইসরাইলের ক্ষতি তেমন বড় নয়। কারণ তারা ইসরাইলের সামরিক বা প্রশাসনিক কোনো স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে এমন কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।
তবে বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা ইসরাইলের বিধ্বস্ত ভবনগুলোর যে ছবি প্রকাশ করেছে তা ভয়াবহ। গত রাতে এ খবর লেখার সময়ও ইসরাইলের হামলায় তেহরানের আকাশ ছিল ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে তেহরান। পশ্চিমাঞ্চলে একাধিক আবাসিক এলাকায় বিস্ফোরণ হয়েছে। ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেস জানিয়েছে, ইরানে হামলা অব্যাহত আছে। ওদিকে পাল্টা জবাব দিচ্ছিল ইরানও। ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষায় অনেক মিডিয়া সেখানে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি প্রকাশ করছে না। তারপরও যেসব তথ্য বেরিয়ে আসছে, তাতে বলা হয়েছে বিপুল পরিমাণ আবাসিক ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইসরাইলের কেন্দ্রস্থলে, তেল আবিবে হামলায় বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছে বহু মানুষ।
অন্যদিকে ইরানে তেলের ডিপো সহ বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন জ্বলছে। একইভাবে আগুন জ্বলতে দেখা যায় ইসরাইলের বিভিন্ন স্থানে। সেখানে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছে। সেখানে স্থানীয়দের বিভিন্ন বাংকারে অবস্থান নিতে নির্দেশনা দিয়েছে ইসরাইল কর্তৃপক্ষ। লোকজন এমন গোপন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন এমন ছবি প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মিডিয়া। ইসরাইলের এই যে অবস্থা এমনটাও হওয়ার কথা ছিল বলে অনেকে মনে করেন না। কারণ, তাদের আছে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম। তা ভেদ করে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছে বিভিন্ন ভবনে। ইসরাইল যতই বলুক তারা আকাশে ধ্বংস করে দিয়েছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র, তা যে পুরো সত্য এমন না।
ইসরাইলের ধ্বংসস্তূপ দেখে বলে দেয়া যায় ইরানের পাশাপাশি ইসরাইলও এখন তছনছ হয়ে গেছে। তবে যে কোনো সময় ‘তেহরানকে জ্বালিয়ে দেয়ার’ হুমকি দিচ্ছে ইসরাইল। ইরানও পাল্টা হুমকি দিচ্ছে। তবে তাদের সামরিক সক্ষমতা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে দেশকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য সামরিক, পারমাণবিক ও রেভ্যুলুশনারি গার্ডের যেসব শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন, তাদের শেষ করে দিয়েছে ইসরাইল। পারমাণবিক স্থাপনা, তেলক্ষেত্র বা তেলের ডিপোতে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। জবাবে ইরান বলছে, ইসরাইল হামলা বন্ধ করলে ইরানও বিরত হবে। এ যুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করছে তারা। মার্কিন প্রশাসন থেকে তা অস্বীকার করা হলেও বিষয়টি অনেকটাই স্পষ্ট। অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বের নীরব দর্শকের ভূমিকায় এই যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বের মদতে ইসরাইল এই যুদ্ধ করছে। তাদের সমর্থনকারী বিশ্ব মোড়লরা আছেন। সেক্ষেত্রে দৃশ্যত একা লড়াই করছে ইরান। তাকে সমর্থন দেয়ার কেউ নেই। এমন সময়ে লড়াইয়ের তৃতীয় দিনে বন্ধু হিসেবে ইয়েমেনকে পাশে পেয়েছে ইরান। রোববার ইয়েমেন থেকে ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করা হয়েছে।
একইসঙ্গে তেল আবিব থেকেও ইয়েমেনের যোদ্ধাগোষ্ঠী হুতিদের লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে। ইসরাইল জানিয়েছে, তাদের নিশানায় ছিলেন হুতিদের সামরিক বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ মুহাম্মদ আল-ঘামারি। তবে তার কোনো ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। এমন অবস্থায় একের পর এক হামলা-পাল্টা হামলায় জ্বলছে ইরান ও ইসরাইল। এর মধ্যে দৃশ্যত ক্ষয়ক্ষতি ইরানে বেশি। তবে ইসরাইলেও কম নয়। সেখানে কমপক্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধসে পড়া ভবনের নিচে আটকা পড়ে আছে অনেক মানুষ। তাদের পরিণতি জানা যায়নি। গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদেরকে উদ্ধারের চেষ্টা করছিল ইসরাইলি উদ্ধারকর্মীরা।
শনিবার রাতে ইসরাইল ও ইরান উভয়েই হামলা-পাল্টা হামলা তীব্র থেকে তীব্রতর করে তোলে। সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে। এই যুদ্ধ শুধু দুটি দেশের দ্বন্দ্ব নয়- এটি গোটা মুসলিম বিশ্ব, পশ্চিমা শক্তি এবং বৈশ্বিক কূটনৈতিক কাঠামোর জন্য এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বনেতাদের মধ্যে যৎসামান্য যে নড়াচড়া দেখা যাচ্ছে তাতে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, সহসাই বা কয়েকদিনের মধ্যে এই সংঘাত থেমে যাবে।
হোয়াইট হাউস ও ইসরাইলি কর্মকর্তাদের মতে, এই লড়াই চলবে সপ্তাহের পর সপ্তাহ। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, আয়াতুল্লাহ (আলি খামেনি)-এর শাসকগোষ্ঠীর প্রতিটি স্থাপনা ও প্রতিটি টার্গেটে হামলা করছে ইসরাইল। ইরানও পাল্টা হুমকি দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ইসরাইল শত্রুতা অব্যাহত রাখলে তাদের হামলা আরও তীব্র হবে। ওদিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর সহ রাজধানী তেহরানে অনেক টার্গেটে ব্যাপক হামলা করেছে ইসরাইলের বিমান বাহিনী। ইরানের বার্তা সংস্থা তাসনিম রিপোর্টে বলেছে, প্রশাসনিক ভবনের অল্প ক্ষতি হয়েছে।
বণিক বার্তা
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক
শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ক্ষত তৈরি করেছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও অটোপাস
সর্বশেষ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে জুলাই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থগিত হওয়া ২০২৪ সালের এইচএসসির পরীক্ষাগুলোয় অটোপাস দেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জেরে ২০২০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অটোপাস দিয়েছিল তৎকালীন সরকার। আর ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা এবং উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। সর্বশেষ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে জুলাই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থগিত হওয়া ২০২৪ সালের এইচএসসির পরীক্ষাগুলোয় অটোপাস দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হবে পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাস অনুযায়ী। শিক্ষক, অভিভাবকসহ শিক্ষার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২০ সালের পর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অটোপাস, সিলেবাস সংক্ষিপ্তকরণের মতো ঘটনা শিক্ষার মানে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার বিষয়বস্তু ভালোভাবে আয়ত্ত করার জন্য শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে একটা ভালো ভিত্তি গড়ে ওঠা অত্যন্ত জরুরি। করোনাকালে অটোপাস, সিলেবাস সংক্ষিপ্তকরণের মতো সিদ্ধান্তের কারণে এ জায়গাটিতে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এখন আমরা ক্লাসে যখন শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছি তখন অনেক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে দেখতে পাই, তারা এমন অনেক বিষয় বুঝতে পারছেন না যেটি তাদের উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেই শিখে আসার কথা। এছাড়া আগের শিক্ষার্থীদের তুলনায় বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে অমনোযোগিতার হারও বেশি।’
বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হলে বিকল্প পদ্ধতি ভাবলেও কোনো বোর্ড পরীক্ষায় ছাড় দেয়া ঠিক নয় বলে মনে করেন এ শিক্ষাবীদ। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কখনো বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হলে আমাদের বিকল্প পদ্ধতি ভাবতে হবে। কিন্তু মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অটোপাস বা সিলেবাস সংক্ষিপ্তকরণের মতো সিদ্ধান্ত কোনো অবস্থায়ই কাম্য নয়। এটি শুধু শিক্ষার্থীদের জন্যই ক্ষতিকর নয়, বরং দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করলে দেশের জন্যও ক্ষতিকর।’
২০২০ সালে এসএসসিতে অটোপাস দেয়ার পর ২০২১ সালে এসএসসি ও সমমানের তিনটি এবং এইচএসসি ও সমমানের ছয়টি বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে প্রতিটি বিষয়ের পরীক্ষা ছিল ৩২ নম্বরের। পরের বছরও এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষাই হয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। ওই বছর এসএসসিতে ছয়টি এবং এইচএসসিতে সাতটি বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আবশ্যিক বিষয়ে ৫০ নম্বরের, ব্যবহারিক আছে এমন বিষয়ে ৪৫ নম্বরের আর ব্যবহারিক নেই এমন বিষয়ে ৫৫ নম্বরের পরীক্ষা হয়েছিল। পরের বছর থেকে সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও তা নেয়া হয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের অধীন। ২০২৪ সালেও এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নরতরা উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পার হয়েছেন অটোপাস বা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আগের শিক্ষার্থীদের তুলনায় তারা তুলনামূলক খারাপ ফল করছেন। এছাড়া বিভিন্ন বিষয় বুঝতে তাদের অধিক সময় প্রয়োজন হচ্ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীমা সুলতানা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা স্নাতক পর্যায়ে যাদের পড়াচ্ছি তারা সবাই-ই ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেদের প্রমাণ করে এসেছেন। তারা নিঃসন্দেহে মেধাবী। তবে এর পরও তাদের অনেকের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ঘাটতিটা বোঝা যাচ্ছে। আমরা যখন পরীক্ষার খাতায় শিক্ষার্থীদের উত্তর মূল্যায়ন করি তখন তাদের অনেকের লেখা তুলনামূলক দুর্বল মনে হয়। এর প্রভাব অনেক সময় ফলাফলেও দেখা যায়। এছাড়া এসব শিক্ষার্থীর অনেকের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে। অটোপাস বা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষার বিষয়গুলো নিয়ে তারা নিজেরাও হীনম্মন্যতায় ভোগেন।’
হীনম্মন্যতায় ভোগার বিষয়টি উঠে এসেছে শিক্ষার্থীদের বক্তব্যেও। ইমরান আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অটোপাসের বিষয়টি নিয়ে চার বছর পর এসেও কথা শুনতে হয়। এখন ভালো ফল করলেও সবার কাছে এইচএসসির বিষয়টিই যেন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি শঙ্কিত কোথাও চাকরির আবেদন করলে হয়তো এ বিষয়টি বিরূপ প্রভাব ফেলবে।’
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭। এছাড়া ২০২১ সালে পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৯৯ হাজার, ২০২২ সালে ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮, ২০২৩ সালে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ ও ২০২৪ সালে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন। সে হিসাবে গত পাঁচ বছরে প্রায় ৭০ লাখ শিক্ষার্থী তাদের উচ্চ মাধ্যমিক স্তর শেষ করেছেন অটোপাস বা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। শিক্ষকদের মতে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কলেজগুলোয় অটোপাসের বিরূপ প্রভাব আরো বেশি দেখা যাচ্ছে।
- এমআই