
বাংলাদেশের খবর
অস্থির বিশ্ব, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশের খবরের প্রথম পাতায় বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের আকাশ যুদ্ধের আগুনে জ্বলছে। শুক্রবার থেকে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে শুরু হওয়া নজিরবিহীন সংঘাত ষষ্ঠ দিনে এসে এক বিধ্বংসী রূপ নিয়েছে। এ সংঘাত এখন আর শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যকে টেনে আনছে একটি অপ্রতিরোধ্য যুদ্ধের দিকে।
যদি ট্রাম্প প্রশাসন সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়, তাতে অঞ্চলটি 'সর্বাত্মক যুদ্ধ'-এর দিকে এগিয়ে যেতে পারে। তবে ইরান সতর্ক করেছে, সব ধরনের আক্রমণকে তারা 'পূর্ণ যুদ্ধ' হিসেবে বিবেচনা করবে। আগামী ৭২ ঘণ্টার ঘটনাপ্রবাহই নির্ধারণ করবে, এই সংকট কি কূটনৈতিক সমাধানের পথে যাবে, নাকি বিশ্ব তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাবে।
এদিকে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও বিমান হামলায় উভয় দেশেই বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা, সৃষ্টি হয়েছে মানবিক সংকট। একদিকে ইরানের ছোড়া শত শত ক্ষেপণাস্ত্র আর ড্রোনের জবাবে ইসরায়েল চালাচ্ছে ভয়াবহ বিমান হামলা, অন্যদিকে এই সংঘাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সরাসরি হস্তক্ষেপের আশঙ্কায় অঞ্চলজুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির জাতির উদ্দেশে ভাষণকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে তৈরি হয়েছে ব্যাপক কৌতূহল ও উদ্বেগ।
যুদ্ধের ময়দান: দাবি ও পাল্টা দাবির মহড়া
বুধবার দিনভর উভয় পক্ষই সামরিক সাফল্যের নানা দাবি করেছে, যা সংঘাতের তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ইরানের যত দাবি: ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানিয়েছে, সংঘাত শুরুর পর থেকে ইরান ৪০০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র এবং কয়েক শ ড্রোন দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো দাবি করেছে, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরায়েলের একটি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ভারামিন শহরে বিমানটি ভূপাতিত করা হয় বলে জানান স্থানীয় গভর্নর হোসেইন আব্বাসি। এটি নিয়ে ইরান মোট পাঁচটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করল। এ ছাড়াও, ইরানের ফারস নিউজ এজেন্সি দাবি করেছে, তাদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ 'মেরন বিমানঘাঁটি'তে আঘাত হেনেছে। তেহরানের ইমাম হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলি হামলার পর ইরান এই পাল্টা হামলা চালায়।
প্রথম আলো
হামলায় যুক্তরাষ্ট্রকে জড়াতে চায় ইসরায়েল, ইরানের হুঁশিয়ারি
প্রথম আলোর প্রথম পাতায় বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকেও ইরানে হামলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইরানে হামলায় ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও যোগ দেবে কি না, সেটা নিয়ে এখন আলোচনা হচ্ছে বেশি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন মন্তব্য ও তৎপরতায়ও সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে জড়াতে পারে, এমন আলোচনা শুরু হয় কানাডায় জি-৭ সম্মেলন শেষ না করেই ট্রাম্প ওয়াশিংটনে ফিরে আসায়। ট্রাম্প দেশে ফিরেই যুক্তরাষ্ট্র সময় মঙ্গলবার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকেন। মন্ত্রিসভার সদস্য, সামরিক নেতৃত্ব ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে ট্রাম্পের ৮০ মিনিটের এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা চালাবে কি না, সেই আলোচনা হয়।
তবে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ওই বৈঠক নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। আলোচনা সম্পর্কে জানেন, এমন পাঁচটি সূত্র বলেছে, সেই বৈঠকে ইসরায়েলের সঙ্গে মিলে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা শুরু করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে ইরানে হামলা চালানোর বিষয়ে
ট্রাম্পের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ ভিন্নমত পোষণ করেন। ইরানে ওয়াশিংটনের হামলার পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে তেহরান। ইরান আত্মসমর্পণ করবে না মন্তব্য করে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি গতকাল বলেন, এটা করলে যুক্তরাষ্ট্রকে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
এদিকে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো গতকাল বুধবার পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইরান ও ইসরায়েল। ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় ইসরায়েল। ইসরায়েলে ব্যালিস্টিকের পাশাপাশি গতকাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের জ্যেষ্ঠ ফেলো এলি জেরানমায়েহর মতে, ট্রাম্প হামলার সিদ্ধান্ত নিলে ইরান সেটা তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে বিবেচনা করবে। এতে অভূতপূর্ব এক সংকট তৈরি হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যদি এই প্যান্ডোরার বাক্স একবার খুলে যায়, আমরা জানি না পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।’
সমকাল
জড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, প্রস্তুত ইরানও
সমকালের প্রথম পাতায় বলা হয়েছে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত স্তিমিত না হয়ে সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিতে যাচ্ছে। তেহরানের নজিরবিহীন হামলার মুখে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহায়তা চাইলে দেশটি তাতে সাড়া দিতে পারে বলে আভাস মিলছে। এতে তেহরানের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের সরাসরি যুদ্ধে নামার শঙ্কা বাড়ছে। এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়ে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ করতে বলেছেন। এ আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়ালে ‘অপূরণীয় ক্ষতি’র মুখে পড়বে।
নির্বাচনী প্রচারণায় যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে তাদের কোনো ঘাঁটি আক্রান্ত না হলে তারা যুদ্ধে জড়াবেন না। এবার তিনি ভিন্ন কথা বলছেন। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সব সময় অস্ত্র সহায়তা দিলেও সরাসরি হামলায় অংশ নেয়নি।
যদি ওয়াশিংটন চলমান সংঘাতে অংশ নেয়, তাহলে তা নতুন মোড় নেবে। পুরো মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। ইয়েমেন, ইরাকসহ বিভিন্ন দেশে ইরান সমর্থিত যেসব সশস্ত্র সংগঠন রয়েছে, তারা সেসব অঞ্চলে থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালাতে পারে। উপসাগরীয় দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সের ঘাঁটি রয়েছে। এক পর্যায়ে ওই দেশগুলো যুদ্ধে জড়াতে পারে। এর ফলে ইরানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও গ্যাসক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগতে পারে।
গতকাল বুধবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর বিষয়টি বিবেচনা করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। মাটির অনেক গভীরে থাকা বস্তুকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে সক্ষম– এ রকম বোমা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই আছে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তুতে রয়েছে ইরানের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনা। ভূগর্ভের এ স্থাপনা অন্তত ৩০০ ফুট গভীরে পর্বতের নিচে গড়ে তোলা হয়েছে। এ স্থাপনায় ইসরায়েল এরই মধ্যে হামলা চালালেও তাতে ভূপৃষ্ঠে কিছু অংশের ক্ষয়ক্ষতি হয়।
সূত্রের বরাত দিয়ে সিবিএস নিউজ জানায়, কানাডায় অনুষ্ঠিত জি৭ সম্মেলন থেকে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে মঙ্গলবার দেশে ফিরে ট্রাম্প তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন ট্রাম্প; যদিও আগে তিনি উত্তেজনা নিরসন ও কূটনৈতিক সমাধানের কথা বলেছিলেন। এর আগে গত সোমবার ইসরায়েলের দৈনিক হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথমবারের মতো যুদ্ধে ওয়াশিংটনের সরাসরি অংশগ্রহণ চেয়েছে তেল আবিব। পরে গতকাল বুধবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ট্রাম্প।
বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানায়, গত শুক্রবার থেকে ছয় দিনের সংঘাতে ইরানে ইসরায়েলের হামলায় ৫৮৫ জন নিহত ও ১ হাজার ৩২৬ জন আহত হয়েছেন। ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে ২৪ জন নিহত ও ৮০০ জন আহত হয়েছেন। দুই পক্ষের সামরিক ও কৌশলগত বিভিন্ন স্থাপনা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, চার শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান।
যুগান্তর
বিপজ্জনক আগামী ২৪ ঘণ্টা
যুগান্তরের প্রথম পাতায় বলা হয়েছে, রণফুলকি ছুটছে মধ্যপ্রাচ্যে। ইরান-ইসরাইল যুদ্ধে কে কখন ছারখার হয় বলা মুশকিল। অন্তত আগামী ২৪ ঘণ্টায় এর কোনো পূর্বাভাস নেই। ‘নাটের গুরু’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার নিজেই এই ‘বিপজ্জনক’ ইঙ্গিত দিয়েছেন পৃথিবীর কানে। কানাডার জি-সেভেন সম্মেলন শেষের আগেই ফেরার পথে নিজের ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে বলেন, ‘আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বোঝা যাবে ইসরাইলের হামলার গতি কমবে না বাড়বে।’ সে হিসাবে আগামী ২৪ ঘণ্টা কতটা ভয়ংকর হবে; কতটা লোমহর্ষক হবে তার ‘দিকদিশা’ নেই। তবে দমকা হাওয়া লাগা যুদ্ধ-আগুনের আঁচ যে কোনো মুহূর্তে আগ্নেয়গিরির মতো ছড়িয়ে পড়তে পারে মধ্যপ্রাচ্যের মরু রাজনীতিতে তা স্পষ্ট। ট্রাম্পের গত দুদিনের উত্তপ্ত কয়েক দফা পোস্ট-বিবৃতিতে সেই লক্ষণই আরও পরিষ্কার হয়ে উঠেছে।
ইসরাইল নয়-যুদ্ধ যেন যুক্তরাষ্ট্রই করছে। মঙ্গলবারের আরেক পোস্টে প্রথমবারের মতো সেই গোমরই ফাঁস করলেন ট্রাম্প। বললেন, ‘ইরানের আকাশ এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে।’ পরক্ষণেই বললেন, ‘ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি কোথায় লুকিয়ে আছেন আমরা জানি। কিন্তু তাকে আমরা এখনই হত্যা করব না।’ তারপরই আবার বললেন, ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে হবে ইরানকে।’ অর্থাৎ যুদ্ধ এখন আর ইসরাইলের সঙ্গে নেই। নিঃসঙ্গ ইরানের প্রতিপক্ষ বিশ্ব বিশৃঙ্খলার খলনায়ক যুক্তরাষ্ট্র নিজেই। সে হিসাবে আগামী ২৪ ঘণ্টা দূর কি বাত-একটু পর কী ঘটতে যাচ্ছে; কী হবে তা পুরোটাই ধোঁয়াশায়! বড় যুদ্ধের এমন টানটান দশার মধ্যেই সমানে একে অন্যের ভূখণ্ডে হামলা-পালটা হামলা অব্যাহত রেখেছে ইরান-ইসরাইল। সংঘাতের ষষ্ঠ দিনে এদিন প্রথমবারের মতো হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাতে বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে এএফপি।
ইরানের দাবি, ‘ফাত্তাহ’ নামের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে সফলভাবে প্রবেশ করেছে। ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) এক বিবৃতিতে বলেছে, বুধবার ভোরে অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রির একাদশ পর্যায়ে উন্নত ‘ফাত্তাহ’ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। সফলভাবে বহুল আলোচিত ইসরাইলি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে ইসরাইল এবং তাদের পশ্চিমা সমর্থকদের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। ইসরাইলের আকাশের ওপরও নিজেদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে বলে জানিয়েছে ইরান। ইসরাইলের বিরুদ্ধে অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রির মুখপাত্র কর্নেল ইমান তাজিক বলেছেন, ‘মঙ্গলবার রাতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে এটা প্রমাণিত ইসরাইলের আকাশের ওপর আমাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।’
পালটা হামলা চালিয়েছে ইসরাইলও। তেহরান থেকে ৪০ কিমি. দূরের আলবোর্জ প্রদেশের রাজ শহরের পায়াম বিমানবন্দরের কাছে হামলা চালায়। এর আগেও এই বিমানবন্দরটিই ইসরাইলি হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল। তেহরানের পূর্বাঞ্চল থেকেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে এখন পর্যন্ত এসব বিস্ফোরণের লক্ষ্যবস্তু বা ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এদিন দাবি করেছেন, তাদের যুদ্ধবিমান ইরানি সরকারের ‘অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সদর দপ্তর’ ধ্বংস করেছে। শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত দেশটির ১১শ লক্ষ্যবস্তুতে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। ইসরাইলের এক সামরিক কর্মকর্তা জানান, ইরানে এ পর্যন্ত ৪০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ১০০০ ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে।
বণিক বার্তা
হামলার পরিকল্পনায় সম্মতি দিলেও চূড়ান্ত নির্দেশ স্থগিত রেখেছেন ট্রাম্প
বণিক বার্তার প্রথম পাতায় বলা হয়েছে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় নেভি ডেস্ট্রয়ার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে প্রবেশ করেছে এবং দ্বিতীয় ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ আরব সাগরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পেন্টাগনের ভাষ্য অনুযায়ী, এই সামরিক পদক্ষেপ প্রতিরক্ষামূলক।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার রাতে (১৭ জুন) তার জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টাদের জানিয়েছেন, তিনি ইরানের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছেন। তবে দেশটি তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগ করে কি না, তা দেখার জন্য চূড়ান্ত নির্দেশ আপাতত স্থগিত রেখেছেন। বৈঠকের সংশ্লিষ্টরা এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের সুরক্ষিত ফোর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র হতে পারে সম্ভাব্য মার্কিন হামলার লক্ষ্যবস্তু। পর্বতের নিচে অবস্থিত এই ফোর্দো ফ্যাসিলিটির ক্ষতি সাধন কেবল অতি শক্তিশালী ও বিশেষায়িত বোমা দিয়েই সম্ভব বলে ধারণা করা হয়।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি (হামলা) করতে পারি, আবার নাও করতে পারি।‘ একইসঙ্গে তিনি তার আগের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আগামী সপ্তাহটি খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। হয়তো এক সপ্তাহও লাগবে না।‘
এর আগে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ঘোষণা দেন, তার দেশ আত্মসমর্পণ করবে না এবং যুক্তরাষ্ট্র যদি সামরিক হস্তক্ষেপ করে তবে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় নেভি ডেস্ট্রয়ার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে প্রবেশ করেছে এবং দ্বিতীয় ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ আরব সাগরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পেন্টাগনের ভাষ্য অনুযায়ী, এই সামরিক পদক্ষেপ প্রতিরক্ষামূলক। তবে এই পদক্ষেপ ইঙ্গিত করে যে, ট্রাম্প চাইলে ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে ইরানে হামলা চালাতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে এটি ইরানকে চাপ প্রয়োগের কৌশলও হতে পারে, যাতে তারা আত্মসমর্পণ বা কিছু ছাড় দিতে বাধ্য হয়।
কালের কণ্ঠ
কমছে আয় বাড়ছে দায়
কালের কণ্ঠের প্রথম পাতায় বলা হয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব। বিনিয়োগে ভাটা। ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা। লাগামহীন সুদের হারে ব্যবসা-উদ্যোগে স্থবিরতা। পতনে জেরবার পুঁজিবাজার। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। অর্থবছরের শেষ দিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে ফেলার প্রতিবাদে টানা কর্মবিরতি। এত সব বাধার মুখে বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতির মুখে সরকার।
বলতে গেলে থমকে গেছে অভ্যন্তরীণ আয়। এতে টান পড়েছে সরকারের কোষাগারে। কাঙ্ক্ষিত আয় না হওয়ায় অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ঘাটতি এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। কিন্তু থেমে নেই ব্যয়। একদিকে আয় কমে যাওয়া, অন্যদিকে ব্যয় বেড়ে যাওয়া বা বাজেট বাস্তবায়নে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। এ জন্য বাড়ছে ধারকর্জ। দায়দেনার ভারে এ পর্যন্ত সরকারের ঋণ ছুঁয়েছে ২৩ লাখ কোটি টাকার অঙ্ক। জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনবিআরের ঘাড়ে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে হিসাবে প্রতি মাসেই এনবিআরকে আদায় করতে হতো ৪০ হাজার কোটি টাকা।
এই লক্ষ্য অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব নয় জেনে পরে লক্ষ্য কমিয়ে চার লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছিল। ছোট করা লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করতে পারছে না সংস্থাটি। প্রতি মাসে প্রায় ৩৮ হাজার ৬২৫ কোটি টাকার মতো আদায় করার কথা। সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে গত ১১ মাসে ঘাটতি ছাড়িয়েছে লাখ কোটি টাকা।
সংশোধিত লক্ষ্য অনুযায়ী মে মাস পর্যন্ত ১১ মাসে আদায় হওয়ার কথা চার লাখ ২৪ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা। অথচ প্রাপ্ত তথ্য বলছে, এই সময়ে আদায় হয়েছে তিন লাখ ২২ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা, যা নির্ধারিত আদায়ের তুলনায় এক লাখ দুই হাজার ৬৪২ কোটি টাকা কম। সে হিসাবে জুন মাসে লক্ষ্য পূরণ করতে হলে আদায় করতে হবে এক লাখ ৪১ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা।
প্রতিবছরই আয়ের তুলনায় সরকারের ব্যয় বেশি। বাজেটেও সেভাবেই খরচের প্রাক্কলন করা আছে। কিন্তু আয় না হলেও বাজেটের প্রাক্কলন ধরে খরচ মেটাতে সরকারকে বিদেশি উৎস, দেশের ব্যাংকব্যবস্থা ও সঞ্চয়পত্র থেকে ধার করতে হচ্ছে। এতে সরকারের দায়দেনা বেড়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০৩.৬৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে অর্থ বিভাগের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ঋণের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশীয় উৎস থেকে ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। দেশি-বিদেশি উৎস থেকে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) মোট ৪৮ হাজার ৬১৫ কোটি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ৩৬ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা। একই সময়ে গ্রাহকের আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ ৪৩ হাজার ৪৭৬ টাকার দায় শোধ করতে হয়েছে। এ দায়ও প্রতিদিনই বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সরকারের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৫১৬ কোটি ডলার, দেশীয় মুদ্রায় যা ৬২ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ প্রতিদিন
ইরান ঘিরে মার্কিন যুদ্ধবিমান
বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রথম পাতায় বলা হয়েছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের যুদ্ধ এবার সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে গড়াতে চলেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে ‘আত্মসমর্পণ’ করার আহ্বান জানানোর পর যুক্তরাষ্ট্রের তরফে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপজুড়ে ব্যাপক সামরিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন ঘাঁটিতে নতুন করে ৩০টি যুদ্ধবিমানসহ রণতরি ও ট্যাংকার বিমান মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে ইরানও পাল্টা প্রস্তুতি নিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ হামলায় জড়িত জর্ডান-ফ্রান্স-যুক্তরাজ্যকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, সমুচিত জবাব দেওয়ার জন্য ইরান সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বলেছেন, ‘আমেরিকা তার চূড়ান্ত ধ্বংস ডেকে আনতে চলেছে।’ এদিকে মার্কিন সামরিক তৎপরতার বিরুদ্ধে সকর্তবার্তায় রাশিয়া বলেছে, ‘ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালালে তা বিশ্বকে পারমাণবিক মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে।’ এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য জড়িত থাকার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছেন।
এ লক্ষ্যে মঙ্গলবার রাতে তিনি তাঁর নিজস্ব জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন। এ আলোচনা ওয়াশিংটনের মধ্যপ্রাচ্যে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নির্ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
উত্তেজনার পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতাও অব্যাহত রয়েছে। কিছুটা সুর নরম করেছে ইসরায়েল। ইরানও সমঝোতার চেষ্টা করছে বলে বিভিন্ন সূত্রের বরাতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন সামরিক বাহিনী ইসরায়েলকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
মার্কিন যুদ্ধবিমান, জ্বালানি ভরার বিমান ও বিমানবাহী রণতরি এরই মধ্যে এ অঞ্চলে পৌঁছেছে। খবরে বলা হয়, নেতানিয়াহু এ দিন ইসরায়েলের স্থানীয় সময় রাত ১টার দিকে ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপ শেষ করেন। পরে তিনি জানান, গত সপ্তাহে ইরানের ওপর ইসরায়েলের আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি প্রায় প্রতিদিনই ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলছেন। এদিকে তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যে আরও যুদ্ধবিমান মোতায়েন করছে এবং অন্যান্য যুদ্ধবিমান মোতায়েনের সময়সীমা বাড়িয়েছে।
- এটিআর