আমজনতার দলের সাধারণ সম্পাদক তারেক রহমান অভিযোগ করেছেন ‘জামায়াত ভোটাধিকার নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করছে’। 

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাতে নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি রাজনীতি, জামাত, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপপ্রচারের বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।

স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন— ‘আমাকে যদি ফেভার নিতে বলা হয়, জামাত বা লীগ কোনটাকে বেছে নেব। চ্যানেল আই এর সিনিয়র সাংবাদিক সাইদুর রহমান এর নামটি সামনে আসে। পরিবারের সকল সদস্যকে পাক বাহিনী হত্যা করে ১৯৭১ সালে। গণ অভ্যুত্থানের পর আমীর হামজারা যখন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করছিল, একদিন তিনি ফোন দিলেন বললেন, তারেক এ কী অভ্যুত্থান করলা, আমাদের ত্যাগ আর কষ্ট নিয়ে কটাক্ষ করছে এরা। আমার লুকিয়ে থাকা পরিবারের সদস্যদের রাজাকাররা খুঁজে খুঁজে পাক বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে।

পিনাকি বলল, মুক্তিযুদ্ধে ২ হাজার নাগরিক নাকি নিহত হয়েছে। ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর সংখ্যা ছিল ৫৩ হাজার, যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানে ফিরে গিয়েছিল ৪৫ হাজার। আর যুদ্ধে মারা গিয়েছিল ৮০০০। পিনাকি বট বাহিনীর অকুন্ঠ সমর্থন নিয়ে ভিডিও ভাইরাল করে বলে দিল ২০০০ নাগরিক নিহত হয়েছে। যদি সশস্ত্র ৮০০০ পাকিস্তানি নিহত হয়, তাহলে তাদের দ্বারা নিরীহ, নিরস্ত্র কত বাঙ্গালী মারা গিয়েছিল সে হিসাব করুন।’

তারেক লিখেছেন, ‘আজ জামায়াত ভোটাধিকার নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করছে। তাদের পছন্দমত উপায়ে ছাড়া তারা ভোট হতে দেবে না। অর্থাৎ গণ অভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশকে তারা সুস্থ হতে দেবে না। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে প্রতিদিন বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে মিটিং করছে। জামায়াতের হিন্দুস্তান আর লাহোরের অংশ সক্রিয় হয়েছে।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে জুলাই নামে একটা কিছু খুব করে দাঁড় করানোর চেষ্টা বহু আগে হতেই করে আসছে। যেমন, একজন বক্তা দিয়ে বলালো, রাজাকার শব্দ এখন সম্মানের। কত বড় জালিম এরা ভাবতে পারেন? আর একজন বক্তা দিয়ে যুক্তি দাঁড় করালো, ২৪ এসে গেছে, এখন আর ৭১-এর বয়ান চলবে না।’

তারেক আক্ষেপ করে লিখেছেন, ‘এই যখন অবস্থা, মুক্তিযোদ্ধাদের লাগাতার অসম্মান কলার ধরে টানাটানি, তখন নিজের মাঝে পাপ বোধ জাগে।’ 

তিনি মনে করছেন, ‘এক বড় গায়েবের সাথে লড়াই করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে তাদের গায়েব বানিয়ে দিয়েছে ইউনূস সরকার, এনসিপি ও জামায়াত ‘ 

‘সম্প্রতি বাসে আগুন লাগছে। এখানে দুটো ঘটনা ঘটতে পারে, আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরতে না পারায় প্রতিবাদ হিসাবে এই আগুন লাগাতে পারে। আবার আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দিতে চায় না এমন গোষ্ঠী বাসে আগুন লাগিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী হিসাবে হাজির করতে পারে,’ মন্তব্য করেছেন তারেক রহমান।

তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘কিন্তু সমাধান কী? এভাবেই জ্বলবে বাংলাদেশ।’

তারেক লিখেছেন, ‘আমি মনে করি রাজনীতি একটি সামাজিক চুক্তি, যে চুক্তিতে পরাজিতকেও এডজাস্ট করতে হয়, সুস্থ হবার সুযোগ দিতে হয়। যারা যতটা অপরাধী সেটুকুকে বাদ দিয়ে নির্দোষদের রাজনীতির অধিকার দিতে হবে।’

এরপর তিনি লেখেন, ‘আর মূল কথায় আসি, যেখানে শুরু করেছিলাম, কাকে ফেভার দেব? আমি উত্তর দেই, লীগের চেয়ে জামায়াত হাজার গুণে অপরাধী। কারণ লাহোরে হেড কোয়ার্টার জামায়াত দেশকে পাকিস্তানের হাতে তুলে দিতে চেয়েছে স্বাধীনতার পরেও। আর লীগ তো শুধু ক্ষমতা চেয়েছে। ক্ষমতা চাওয়ার অপরাধ দেশ বিক্রির চেয়ে বেশি নয়। আর পিনাকি আমার দলকে হেয় করেছে গতকাল। যখন আমার দল এখনের চেয়ে ৫০ গুণ ছোট ছিল, তখন সে সেনাপতি বলেছিল আমাদের। আজ দল বড় হলেও সে তাচ্ছিল্য করছে। পিনাকির পক্ষে থাকলে আমাকে বীরশ্রেষ্ঠ বানিয়ে দিত। অবশ্য পিনাকির তালিকায় আমি ভিলেন না হিরো, তার চেয়েও বড়— শেখ হাসিনার আসামির তালিকায় এক নাম্বার ছিলাম আমি। এর পরেও জামায়াতকে ফেভার দিচ্ছি না আমি। কারল ওরা সার্বভৌমত্বের বিরোধিতাকারী গোষ্ঠী, যারা নিজ দেশের মানুষের মাংস ভিনদেশী শকুনকে সাথে নিয়ে খেয়েছে।’

আমজনতার দলের সাধারণ সম্পাদক লিখেছেন, ‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের হত্যার বিচার আমি অবশ্যই চাই। কিন্তু আসামি পক্ষে তো আইনজীবী জামায়াতের, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জামায়াতের। এমন ভুয়া বিচার আমি চাই না। জামায়াতের হাতে আওয়ামী লীগের বিচার আমি চাই না ‘

সবশেষে তিনি লেখেন, ‘আর সাংবাদিক পান্না ভাইকে যদি কথা বলার জন্য জেলে যেতে হয়, তাহলে জামাতের ৩ প্রজন্মকে আজীবন জেলে থাকতে হবে।

হাসপাতাল থেকে লেখা...’

এমএইচএস