Logo

সোশ্যাল মিডিয়া

‘টেনশন আর নিতে পারছেন না সাংবাদিকরা’

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৪

‘টেনশন আর নিতে পারছেন না সাংবাদিকরা’

এআই দিয়ে তৈরি ছবি

গণমাধ্যমকর্মীদের সংকটের চিত্র তুলে ধরে লেখক, গণমাধ্যম বিশ্লেষক ও সাংবাদিক নিয়ন মতিয়ুল মন্তব্য করেছেন, ‘টেনশন আর নিতে পারছেন না সাংবাদিকরা’। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে তিনি সাংবাদিকতার বর্তমান বাস্তবতা, চাকরির অনিশ্চয়তা, বেতন সংকট, কর্মপরিবেশের অবনতি এবং শারীরিক-মানসিক চাপ নিয়ে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন। পোস্টটি ইতোমধ্যে সাংবাদিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

নিয়ন মতিয়ুলের লেখায় ফুটে উঠেছে দেশের বহু গণমাধ্যম হাউজে অভ্যন্তরীণ আর্থিক সংকট চরমে পৌঁছানোর চিত্র। বাংলাদেশের খবরের পাঠকদের জন্য তার পোস্টটি হুবহু দেওয়া হলো—

টেনশন আর নিতে পারছেন না সাংবাদিকরা 
গণমাধ্যমের একটি করপোরেট হাউজে তিন মাস ধরে বেতন বন্ধ। সাবেক এক সহকর্মী নিরূপায় হয়ে যোগ দিয়েছেন আরেক হাউজে। তবে প্রচণ্ড আর্থিক চাপ সামলাতে না পেরে গত রাতে হার্ট অ্যাটাক করেছেন। হাসপাতালে ভর্তির পর কয়েকটি ব্লক ধরা পড়েছে। এখন তার চিকিৎসার বিপুল খরচের টাকা কোথায় পাবেন? খবর পেলাম, বকেয়া না পেয়ে আরেক সাংবাদিকও যেকোনো সময় স্ট্রোক করতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন।

এক ছোট ভাই সম্প্রতি এক মাল্টিমিডিয়া হাউজে যোগ দিয়েছে। তাকে ২৪ ঘণ্টার আনলিমিটেড ফিল্ড রিপোর্টিং করতে বলা হয়েছে। বাইক না থাকায় হেঁটে হেঁটে ইভেন্ট কাভার করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। রাতে ফোন দিয়ে জানাল, ডাক্তার দেখাতে হবে। কিছুদিন আগে এক নারী সংবাদকর্মীর সঙ্গে আলাপ। জানালেন, বছরখানেক হলো বেকার। কোথাও চাকরি পাচ্ছেন না। সিনিয়র হওয়ায় বেশি বেতন দিতে হবে—তাই তাকে নিচ্ছেন না কেউ। অন্য কিছু করার মতো সঞ্চয়ও নেই। মনের চাপ গিয়ে পড়েছে শরীরে। উদ্যম হারাতে বসেছেন।

গত দেড় বছর ধরে ভালো হাউজে ভালো বেতনে চাকরির জন্য চেষ্টা করছেন সাবেক এক সহকর্মী, কিন্তু হচ্ছে না। কাজের তৃপ্তি না থাকায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। সিনিয়র এক সাংবাদিক প্রায়ই রাতে ফোন দিয়ে বলেন, হাউজে আর কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। এমনিতেই বেতনে পোষায় না, তার ওপর কাজের পরিবেশ নেই। হাউজ পাল্টাতে চেয়েও পারছেন না। প্রতিদিন কাটছে অসহনীয় টেনশনে।

সিনিয়র আরেক সাংবাদিক আলাপে জানান, সাংবাদিকতায় হাউজে হাউজে ভয়ঙ্কর সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। জুনিয়ররা সেই সিন্ডিকেটে ঢুকতে পারলেও সিনিয়ররা পারছেন না। কারণ, সিনিয়র পোস্টের নিয়োগে হাউজ পরিচালনাকারীদের বিশেষ নীতি থাকে। যত ব্র্যান্ড ভ্যালুই থাক, নেটওয়ার্কের বাইরের কারও সুযোগ থাকে না। ফলে শত শত দক্ষ, ভালো সাংবাদিকও বেকারত্বের টেনশনে কাহিল। মাল্টিমিডিয়ার জন্য প্রতিদিন যেসব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আসছে, সেখানে তরুণ বা ফ্রেশারদের চাহিদাই বেশি।

ঘনিষ্ঠ এক সহকর্মী জানালেন, ছোট আর মাঝারি গোছের প্রায় সব গণমাধ্যম হাউজেই বেতন সংকট। এমনিতেই বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বেতন কম— তার ওপর মাসের পর মাস বকেয়া। ফলে চাকরি করেও থাকতে হচ্ছে অনটনে। নতুন এক পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক দিলেন ভয়াবহ তথ্য। সাংবাদিক পরিচয়ে অনেকদিন ধরে বাসা পাচ্ছিলেন না। পরে পেশা গোপন রেখে বাসা ভাড়া নিয়েছেন। তার মতে, বাসার মালিকরা জেনে গেছেন সাংবাদিকরা নির্ধারিত সময়ে, ঠিকঠাক মতো ভাড়া দিতে সক্ষম নন। ফলে পেশার আর্থিক সংকট সাংবাদিকদের সামাজিকভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে।

বছর চারেক আগে ইউল্যাব ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশনা সংস্থা আইজিআই গ্লোবাল পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, ৭১ শতাংশ সাংবাদিক পেশা ছাড়তে চান। আর পেশা নিয়ে বিষণ্নতায় ভুগছেন ৪৩ শতাংশ। পিআইবির অর্থায়নে চলতি বছরে করা আরেক গবেষণার তথ্যমতে, ৯২ শতাংশ সাংবাদিক মনে করেন তাদের চাকরির নিরাপত্তা নেই। ৩১ শতাংশ মনে করেন তারা যোগ্যতা অনুযায়ী বেতনভাতা পান না— যা-ও পান তা দিয়ে জীবন চালানো কঠিন।

গত প্রায় চার দশক ধরে বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি মিডিয়ায় সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করা এক সিনিয়র সাংবাদিক জানালেন, সাংবাদিকতা আর সাংবাদিকতার জায়গায় নেই। মালিকদের রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণে সাংবাদিকতায় দলবাজি, তথ্যপ্রযুক্তির বড় ধাক্কা, মিথ্যা প্রচারসংখ্যা দেখিয়ে বিজ্ঞাপনের রেট পাওয়া এবং টেকসই বিজনেস মডেল না থাকায় গণমাধ্যম তার গতিপথ হারিয়েছে। যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে তথ্যসেবায় রক্তঘাম করা সংবাদকর্মীদের।

এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

গণমাধ্যম

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর