_1753026710-687d128ce885b.jpg)
ছবি : সংগৃহীত
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের পর ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে নতুন পরীক্ষায় নামে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজের সেই পরীক্ষার প্রথম ম্যাচেই লেটার মার্ক পেয়ে পাশ করলো লিটন দাসের দল। সালমান আগার পাকিস্তান দলকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে তাসকিন-মুস্তাফিজদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১১০ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। জবাবে ১৫.৩ ওভারে ৩ উইকেটের বিনিময়ে ১১২ রান তুলে বাংলাদেশ।
এই জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের চতুর্থ জয়। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানকে হারিয়ে ৯ বছরের খরা কাটিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে এশিয়া কাপে ৫ উইকেটে জেতার পর দেশে কিংবা দেশের বাইরে টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। যদিও ২০২৩ সালের এশিয়ান গেমসে দুই দেশের দ্বিতীয় সারির দলের লড়াইয়ে জিতেছিল বাংলাদেশ।
সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সালমান মির্জার বল পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন তানজিদ হাসান তামিম, ফিরেন মাত্র ১ রানে। তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি লিটন। সালমানের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে খুশদিল শাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে তিনিও ফিরেন ১ রানে। ৭ রানেই পড়ে যায় বাংলাদেশের দুই উইকেট।
তবে চাপ সামাল দিয়ে ম্যাচে ফেরান তাওহিদ হৃদয় ও পারভেজ হোসেন ইমন। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দুজন গড়েন ৭৩ রানের দুর্দান্ত পার্টনারশিপ। পাওয়ার প্লেতে আসে ৩৮ রান। নবম ওভারে আবরার আহমেদের ওভারে হৃদয় চার মেরে ৩৬ বলে পূরণ করেন ফিফটি জুটি।
ইনিংসের ১৩তম ওভারে আফ্রিদির বলে বোল্ড হন হৃদয়, ৩৭ বলে ৩৬ রান করে। এরপর ইমন নিজের ছন্দে ব্যাট চালিয়ে তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। ফাহিম আশরাফকে ছক্কা মেরে ৩৪ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৩৯ বলে পাঁচ ছক্কা ও তিন চারে ৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন বাঁহাতি এই ওপেনার। তার সঙ্গে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে ফেলেন জাকের আলি। মাত্র ১০ বলে তিনটি চার মেরে ১৫ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। তাদের ১৮ বলে ৩২ রানের জুটিতে ২৭ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
এর আগে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে টসে জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ। মিরপুরের মন্থর পিচে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ১৯.৩ ওভারে পাকিস্তানকে মাত্র ১১০ রানেই আটকে দেয় তাসকিন-মুস্তাফিজরা। নতুন বলে শেখ মেহেদীকে দিয়ে ওভার শুরু করান লিটন দাস। প্রথম ওভারেই পেতে পারতেন সাফল্যও। কিন্তু ক্যাচ ছেড়ে দেন তাসকিন আহমেদ। ৪ রানে বেঁচে যান ফাখার। ক্যাচ ছাড়ার ক্ষতিপূরণ তাসকিন দেন পরের ওভারে। বোলিংয়ে এসে তিনি ফিরিয়ে দিলেন সাইম আইয়ুবকে। মুস্তাফিজুর রহমানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৪ বলে ৬ রান করে ফেরেন সাইম।
তৃতীয় ওভারে খরুচে বোলিং করলেও শেষ দিকে মোহাম্মদ হারিসকে ফেরালেন শেখ মেহেদী। ৩ বলে ৪ রান করেন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। বোলিংয়ে এসেই বাজিমাত করেন তানজিম সাকিব। তার দুর্দান্ত বোলিংয়ে লিটন দাসের গ্লাভসে তালুবন্দি হয়ে ফেরেন পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আগা। ৩ রান করতে ৯ বল খেলেন আগা।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আরেকটি সাফল্য পায় বাংলাদেশ। বোলিংয়ে এসে পঞ্চম বলে উইকেট নিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। ৪ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি হাসান নাওয়াজ। পাকিস্তান পঞ্চম উইকেট হারিয়েছে ৪৬ রানে। মেহেদী হাসানের বলে ১ রান নিতে চেয়েছিলেন ফখর জামান। স্ট্রাইকিং প্রান্তে মেহেদী বল পাঠালে স্ট্যাম্প ভাঙতে দেরি করেননি লিটন। এতে রান আউট হন মোহাম্মদ নওয়াজ। ৫ বলে ৩ রান করেন তিনি।
এরপর দুইবার জীবন পাওয়া ফখর জামান ফিরলেন রান আউট হয়ে। ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৩৪ বলে ৪৪ রান করেন তিনি। খুশদিল শাহ কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। তবে ২৩ বলে ১৭ রান করে তিনিও ফেরেন মুস্তাফিজের বলে। ইনিংসের শেষ ওভারে ওভারে ফাহিম আশরাফকে আউট করেন তাসকিন। মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ১০ বলে ৫ রান করেন তিনি। পরের বলে রান আউট হন সালমান মির্জা। তৃতীয় বলে তাসকিন ফিরিয়েছেন আব্বাস আফ্রিদিকে। তাসকিনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ নেন লিটন। এতে পাকিস্তানের ইনিংস শেষ হয় ১১০ রানে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানের এই সংস্করণে এটিই দলীয় সর্বনিম্ন। আগের সর্বনিম্ন ১২৯/৭, ২০১৬ সালে মিরপুরেই এশিয়া কাপে। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানকে হারাতে বাংলাদেশের লক্ষ্য ১১১ রান। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে সফল বোলার তাসকিন আহমেদ। ২২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ইনিংস শেষ করেছেন তিনি। মুস্তাফিজুর রহমান ২টি এবং শেখ মেহেদী ও তানজিম সাকিব একটি করে উইকেট নেন।
তবে দুর্দান্ত বোলিংয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৪ ওভার বোলিং করে সবচেয়ে কম রান দেওয়া বাংলাদেশি এখন মুস্তাফিজ। ৪ ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার মুস্তাফিজের। এর আগে রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান ও মোস্তাফিজ নিজে ৪ ওভারে ৭ রান দিয়েছিলেন।