বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ দ্বৈরথ, এল ক্লাসিকো। রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার লড়াই মানেই আবেগ, ইতিহাস, মর্যাদার সংঘর্ষ। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এবারের এল ক্লাসিকোর আলোচনায় কেন্দ্রবিন্দুতে দুই তরুণ তারকারিয়ালের ফরাসি ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পে আর বার্সার বিস্ময়বালক লামিন ইয়ামাল। আজ বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ১৫ মিনিটে মুখোমুখি হবে রিয়াল মাদ্রিদ বার্সেলোনা। লা লিগায় মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকো ঘিরে এরই মধ্যে বাড়তে শুরু করেছে উত্তাপ।
মৌসুমের প্রথম এই ক্লাসিকোয় ফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে নানা ধরনের ছোট-বড় ফ্যাক্টর।
দুই দলের আক্রমণভাগে এখন যেন ভবিষ্যতের ফুটবলের প্রতিচ্ছবি। এমবাপ্পে বিশ্বজয়ী ফুটবলার। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ব্যালন ডি’অর এখনো তাঁর অধরা। সাফল্য পাননি লা লিগাতেও। তাই এ মৌসুমটা এমবাপ্পের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এরই মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে দারুণ কিছু করার আভাস দিয়েছেন তিনি। অপেক্ষা শুধু ধারাবাহিকতা ধরে রাখার এবং ব্যক্তিগত সাফল্যকে দলীয় সাফল্যে বদলে দেওয়ার।
এমবাপ্পে নিজের ক্ষিপ্রতা, নিখুঁত ফিনিশিং আর ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে গোল করার ক্ষমতার জন্য ইতিমধ্যেই রিয়াল ভক্তদের হৃদয় জয় করেছেন। অন্যদিকে মাত্র ১৮ বছর বয়সেই বার্সেলোনার আক্রমণের মূল ভরসা হয়ে উঠেছেন ইয়ামাল। তাঁর ড্রিবলিং, বুদ্ধিদীপ্ত পাস ও আত্মবিশ্বাসী খেলা অনেককেই মনে করিয়ে দিচ্ছে তরুণ মেসিকে। ইয়ামাল বর্তমান সময়ের সবচেয়ে সৃষ্টিশীল ফুটবলারদের একজন হিসেবে ধরা হয়। ১৭ পেরোনোর আগেই তিনি অনেক রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন।
ব্যালন ডি’অরে গতবার রানার্সআপ হলেও, ইয়ামালের লক্ষ্যটা আরও বড়। নিজেদের সেই লক্ষ্য পূরণে এমবাপ্পে ও ইয়ামাল দুজনের জন্য আজ রাতের ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইতিহাস: শতাধিক বছরের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়েছিল ১৯০২ সালে। এরপর থেকে প্রায় ২৬০টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। রিয়াল মাদ্রিদের জয়: প্রায় ১০৫টি, বার্সেলোনার জয়: প্রায় ১০১টি, ড্র: প্রায় ৫২টি
ব্যক্তিগত রেকর্ড: এল ক্লাসিকো মানেই কিংবদন্তিদের গল্প। সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক লিওনেল মেসি, যিনি একাই করেছেন ২৬ গোল যা এখনও রেকর্ড। অন্যদিকে, সবচেয়ে বেশি ক্লাসিকো খেলার রেকর্ড রয়েছে সার্জিও বুসকেটসের, যিনি ৪৮টিরও বেশি ম্যাচে অংশ নিয়েছেন।
প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঐতিহ্য: এই লড়াই কেবল ফুটবলের নয়, দুই সংস্কৃতি ও দর্শনেরও প্রতীক। রিয়াল মাদ্রিদের রাজকীয় ঐতিহ্য আর বার্সেলোনার “মোর দ্যান আ ক্লাব” দর্শন দু’টি আলাদা দুনিয়ার সংঘর্ষ। সময় বদলেছে, কিন্তু উত্তেজনা কমেনি একটুও। এখন এমবাপ্পে ও ইয়ামালের মতো তরুণ তারকারা সেই ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যোগ করছেন।
একটি বড় ম্যাচের আগে দুজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে পরিসংখ্যান দিয়ে বিবেচনা করার সুযোগ সামান্য। তাই শেষ পর্যন্ত এমন দ্বৈরথে কাউকে এগিয়ে রাখা যায় না। ডিফেন্সে এমবাপ্পের কম অবদান রাখা কিংবা ইয়ামালের কম গোলের অভ্যাস তেমন প্রভাব ফেলবে না যদি তাঁরা নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করতে পারেন। অর্থাৎ এমবাপ্পে ডিফেন্সে না নেমে যেমন নায়ক হতে পারেন, তেমনি ইয়ামাল গোল না করেও। আবার পুরো ম্যাচে নিষ্প্রভ থেকেও তাঁরা হঠাৎ এমন কিছু করে বসতে পারেন, যা ম্যাচের ভাগ্য মুহূর্তের মধ্যে বদলে দিতে পারে। ফলে পরিসংখ্যান ও অতীতের হিসাব–নিকাশ বাদ দিয়েই এই ম্যাচে এমবাপ্পে ও ইয়ামালের ওপর চোখ রাখতে হবে। তবেই ম্যাচটা সত্যিকার অর্থে উপভোগ্য হয়ে উঠবে ।
বিকেপি/এমবি


