ব্রিজবেন টেস্টে দাপুটে জয়ে অ্যাশেজ ২-০ তে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:০১
জফ্রা আর্চারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় যেন তেতে উঠলেন স্টিভেন স্মিথ। ইংলিশ গতিময় পেসারের পরের বলটিই ফাইন লেগ দিয়ে উড়িয়ে গ্যালারিতে ফেললেন তিনি। আর পরের ওভারে গাস অ্যাটকিনসনকে ছক্কায় উড়িয়ে জয় নিশ্চিত করে হুঙ্কার ছুড়লেন অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। ব্যাটিং-বোলিংয়ের পাশাপাশি শরীরী ভাষায়ও ইংলিশদের গুঁড়িয়ে সিরিজে আরও এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা।
পার্থ টেস্টে দুই দিনেই জয় তুলে নেওয়া অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ম্যাচে জিতল চতুর্থ দিনে। ব্রিজবেনে গোলাপি বলের টেস্টে ৮ উইকেটের জয়ে অ্যাশেজে ২-০ তে এগিয়ে গেল তারা।
বড় জয়ের ভিতটা আগের দিনই গড়ে ফেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। তাদের বোলারদের তোপের মুখে একটা সময় তো ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ের শঙ্কায় পড়েছিল ইংল্যান্ড। রোববার বেন স্টোকস ও উইল জ্যাকসের দৃঢ়তায় সেই বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচলেও, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের খুব বড় লক্ষ্য দিতে পারেনি ইংলিশরা।
৬৫ রানের লক্ষ্য ১০ ওভারেই ছুঁয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার জয়ের নায়ক মিচেল স্টার্ক প্রথম ইনিংসে ছয় উইকেটসহ ম্যাচে ধরেন মোট আট শিকার। সঙ্গে ৭৭ রানের ইনিংস খেলেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। পার্থেও ইংলিশ ব্যাটিংয়ে ধস নামিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন তিনি।
অ্যাশেজের প্রথম দুই টেস্টেই ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতা স্রেফ তৃতীয় ক্রিকেটার স্টার্ক। অন্য দুইজনও অস্ট্রেলিয়ান; ২০০৬/০৭ মৌসুমে রিকি পন্টিং ও ২০১৩-১৪ মৌসুমে মিচেল জনসন সিরিজের প্রথম দুই টেস্টেই হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা। ওই দুই অ্যাশেজেই ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ (৫-০) করেছিল অস্ট্রেলিয়া।
এই জয়ে অবদান কম নয় দ্বিতীয় ইনিংসে ৪২ রানে পাঁচটিসহ ম্যাচে ছয় উইকেট নেওয়া মাইকেল নিসারের। ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমে প্রথমবারের মতো ইনিংসে পাঁচ উইকেটের স্বাদ পেলেন তিনি, সেটাও আবার নিজের ঘরের মাঠ ব্রিজবেনে। অভিজ্ঞ স্পিনার ন্যাথান লায়নকে বসিয়ে তাকে খেলানোর পরিকল্পনা কাজে লেগেছে অস্ট্রেলিয়ার।
গ্যাবায় নতুন দিনের শুরুটা ইংল্যান্ডের জন্য ছিল আশা জাগানিয়া। ৬ উইকেটে ১৩৪ রান নিয়ে খেলতে নেমে ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে প্রথম সেশন কাটিয়ে দেন আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান স্টোকস ও জ্যাকস।
প্রতিপক্ষকে কোনো সুযোগ না দিয়ে সাবধানী ব্যাটিংয়ে দলের রান বাড়াতে থাকেন তারা। দিনের সপ্তম ওভারে এসে লিড পায় ইংল্যান্ড।
জমে যাওয়া এই জুটি কোনোভাবেই ভাঙতে পারছিল না অস্ট্রেলিয়া। দীর্ঘ অপেক্ষার পর তাদেরকে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দেন নিসার। যেখানে বড় অবদান স্মিথের। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে বাঁ হাতে উইল জ্যাকসের যে নিচু ক্যাচ নিয়েছেন তিনি, তা ছিল অবিশ্বাস্য।
২ চারে ৯২ বলে ৪১ রান করেন জ্যাকস। তার বিদায়ে ভাঙে ২২১ বল স্থায়ী ৯৬ রানের জুটি।
পরের ওভারে পঞ্চাশে পা রাখেন স্টোকস, ১৪৭ বলে। ইংল্যান্ডের বাজবল (২০২২ সালের জুন থেকে) যুগ শুরু হওয়ার পর যা সবচেয়ে মন্থরতম ফিফটি।
ইংলিশ অধিনায়ক স্টোকসকে নামের পাশে আর রান যোগ করতে দেননি নিসার। স্মিথের মতো অতোটা চমৎকার না হলেও, উইকেটের পেছনে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে স্টোকসকে ফেরান অ্যালেক্স কেয়ারি।
পরের ওভারেই গাস অ্যাটকিনসনকে বিদায় করেন ব্রেন্ডান ডগেট। ব্রাইডন কার্সকে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন নিসার। অ্যাটকিনসন ও কার্স, দুইজনেই ধরা পড়েন স্মিথের হাতে।
দুই দলের ফিল্ডিংই এই টেস্টে বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। ইংল্যান্ড যেখানে তাদের প্রথম ইনিংসে পাঁচটি ক্যাচ ছেড়েছে, যেখানে অস্ট্রেলিয়া একের পর এক দুর্দান্ত সব ক্যাচ নিয়ে ম্যাচের লাগাম নিজেদের হাতে রেখেছে।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় আত্মবিশ্বাসী শুরু করেন ট্রাভিস হেড ও জ্যাক ওয়েদেরল্ড। মনে হচ্ছিল, ১০ উইকেটেই জিতে যাবে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু অ্যাটকিসনের বল স্টাম্পে টেনে এনে বিদায় নেন হেড, করেন এক ছক্কা ও ২ চারে ২২ রান।
অ্যাটকিনসনের বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে কট বিহাইন্ড হয়ে যান মার্নাস লাবুশেন। ক্রিজে গিয়ে মুখোমুখি দ্বিতীয় বলে আর্চারকে চার মারেন স্মিথ। এক বল পরই বাকবিতণ্ডায় জড়ান তারা। এরপর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান স্মিথ।
দুটি করে ছক্কা-চারে ৯ বলে ২৩ রান করেন স্মিথ। ২ চারে ১৭ রান করে অপরাজিত থাকেন ওয়েদেরল্ড।
আগামী ১৭ ডিসেম্বর অ্যাডিলেইডে শুরু তৃতীয় টেস্ট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস : ৩৩৪
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস : ৫১১
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস : ৭৫.২ ওভারে ২৪১ (আগের দিন ১৩৪/৬) (স্টোকস ৫০, জ্যাকস ৪১, অ্যাটকিনসন ৩, কার্স ৭, আর্চার ৫*; স্টার্ক ১৮-২-৬৪-২, নিসার ১৬.২-২-৪২-৫, ডগেট ১৭-২-৫৬-১, স্কটল্যান্ড ১৭-৪-৪৭-২, গ্রিন ৫-১-১৫-০, হেড ১-০-১-০, লাবুশেন ১-০-৩-০)
অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস : (লক্ষ্য ৬৫) ১০ ওভারে ৬৫/২ (হেড ২২, ওয়েদেরল্ড ১৭*, লাবুশেন ৩, স্মিথ ২৩*; আর্চার ৫-০-২৮-০, অ্যাটকিনসন ৫-০-৩৭-২)
ফল : অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ : মিচেল স্টার্ক
সিরিজ : ৫ ম্যাচের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ২-০তে এগিয়ে
আইএইচ/

