Logo

প্রযুক্তি

ফাঁস হতে পারে ব্যক্তিগত আলাপের তথ্য , বাংলাদেশেও বাড়ছে উদ্বেগ

Icon

প্রযুক্তি ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৫, ১২:৫৩

ফাঁস হতে পারে ব্যক্তিগত আলাপের তথ্য , বাংলাদেশেও বাড়ছে উদ্বেগ

আপনি কি আপনার ব্যক্তিগত সমস্যা বা গভীর কোনো অনুভূতি নিয়ে চ্যাটজিপিটির সঙ্গে আলাপ করেন? যদি করে থাকেন, তবে জেনে রাখুন, আপনার সেই গোপন কথা সম্পূর্ণ গোপন নাও থাকতে পারে। আদালতের নির্দেশ পেলে আপনার ব্যক্তিগত সব আলাপ প্রকাশ করতে বাধ্য থাকবে চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই।


সম্প্রতি এমনই এক বিস্ফোরক তথ্য জানিয়েছেন ওপেনএআই এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্যাম অল্টম্যান। তার এই বক্তব্যে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, বাংলাদেশেও দুশ্চিন্তার বাইরে নয়।


মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে চ্যাটজিপিটির জনপ্রিয়তা আকাশ ছুঁয়েছে। ওপেনএআই এর তথ্যমতে, প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে ব্যবহারকারীরা প্রায় ২৫০ কোটিরও বেশি প্রশ্ন বা নির্দেশনা (প্রম্পট) দিচ্ছেন, যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। এর মধ্যে একটি বড় অংশ তরুণ-তরুণী, যারা এটিকে কেবল তথ্য খোঁজার যন্ত্র হিসেবে নয়, বরং বন্ধু, পরামর্শদাতা এমনকি লাইফ কোচ হিসেবেও ব্যবহার করছে। সম্প্রতি এক পডকাস্টে স্যাম অল্টম্যান জানান, ব্যবহারকারীদের সঙ্গে চ্যাটজিপিটির আলাপচারিতা আইনত গোপনীয় নয়। এর অর্থ হলো, কোনো আইনি প্রক্রিয়ার জন্য আদালত যদি কোনো ব্যবহারকারীর ডেটা চায়, তবে ওপেনএআই তা সরবরাহ করতে বাধ্য।


এই বিষয়টি  কিশোর কিশোরীদের জন্য বিশেষভাবে উদ্বেগ জনক। যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক সংস্থা কমনসেন্স মিডিয়ার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশটির ৭২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী গত এক বছরে চ্যাটজিপিটিকে সঙ্গীর মতো ব্যবহার করেছে। তাদের প্রায় অর্ধেকই এআই এর দেওয়া পরামর্শে আস্থা রাখে। স্যাম অল্টম্যান নিজেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, চিন্তা ও বিশ্লেষণের দক্ষতা পুরোপুরি অর্জনের আগেই তরুণ প্রজন্ম এআই এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে যা তাদের মানসিক বিকাশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা এই প্রবণতাকে জিপিএস প্রযুক্তির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার সঙ্গে তুলনা করছেন, যার ফলে মানুষের স্বাভাবিক দিকনির্দেশনা চেনার ক্ষমতা কমে গেছে। একইভাবে, এআই এর ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা তরুণদের সামাজিক ও মানসিক দক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছে।


বাংলাদেশেও চ্যাটজিপিটিসহ বিভিন্ন এআই টুলের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাজীবীদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক। তবে ডিজিটাল সাক্ষরতার হার তুলনামূলক কম হওয়ায় এখানকার ব্যবহারকারীরা আরও বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের একজন অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দুটি বড় ঝুঁকি রয়েছে। প্রথমত, ব্যবহারকারীরা না জেনেই তাদের ব্যক্তিগত, আর্থিক বা স্পর্শকাতর তথ্য শেয়ার করছেন। দ্বিতীয়ত, দেশের সাইবার নিরাপত্তা আইনে এআই সম্পর্কিত ডেটা সুরক্ষার বিষয়টি এখনো ততটা স্পষ্ট নয়। ফলে কোনো ব্যবহারকারীর তথ্য ফাঁস হলে তার প্রতিকার পাওয়া বেশ জটিল হতে পারে।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিঃসন্দেহে একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি, কিন্তু এর ব্যবহার হতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। ব্যবহারকারীদের বুঝতে হবে, এআই চ্যাটবটের সঙ্গে তাদের আলাপ ব্যক্তিগত ডায়েরির মতো নয়। প্রযুক্তির এই নতুন যুগে একদিকে যেমন এর সুবিধাগুলো গ্রহণ করতে হবে, তেমনি ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার এবং ব্যক্তি উভয় পর্যায় থেকেই সচেতনতা ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।


ডি আর/এম এন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর