Logo

প্রযুক্তি

এআই ভয়েস ক্লোনিং, ডিজিটাল যুগের নতুন আতঙ্ক, বাঁচার উপায় কী?

Icon

প্রযুক্তি ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৩৩

এআই ভয়েস ক্লোনিং, ডিজিটাল যুগের নতুন আতঙ্ক, বাঁচার উপায় কী?

সকালে ঘুম ভাঙতেই অরিজিৎ সিং এর ম্যানেজারের কাছে  ফোন এলো। ওপাশ থেকে ভেসে এলো পরিচিত কণ্ঠস্বর। তিনি জানালেন, তাড়াতাড়ি দেখেন, অরিজিৎ সিং এর কণ্ঠ নকল করে অনলাইনে কনসার্ট চলছে। অথচ ম্যানেজার এর কিছু জানে না!

বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও, এআই ভয়েস ক্লোনিংয়ের এই ভয়ঙ্কর ঘটনার শিকার হয়েছেন অনেকেই যা দিন দিন বাড়াবাড়ি পর্যায় চলে যাচ্ছে। শুধু বলিউডের সুপারস্টার অরিজিৎ সিং নন, অপরাহ উইনফ্রে, স্কারলেট জোহানসন, স্টিভ হার্ভে এবং জনপ্রিয় ইউটিউবাররাও এমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভয়েস ক্লোনিং এর  শিকার হয়েছেন। তাদের কণ্ঠস্বর অনুমতি ছাড়াই চুরি হয়ে যাচ্ছে এবং ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ও ভার্চুয়াল কনসার্টে। অরিজিৎ সিংয়ের ক্ষেত্রে তো ঘটনা এতদূর গড়িয়েছে যে, অনুমতি ছাড়া তার কণ্ঠ ব্যবহার করায় ভারতীয় আদালতে নজিরবিহীন মামলা হয়েছে, যা সেলিব্রিটিদের পরিচয় সুরক্ষার ইতিহাসে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

বিপদটা শুধুমাত্র তারকাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই ডিজিটাল আতঙ্ক এখন সাধারণ মানুষের জীবনেও ছড়িয়ে পড়েছে। আমেরিকার এক মায়ের কাছে তার মেয়ের কান্নাভরা কণ্ঠ নকল করে টাকার দাবি করা হয়। মা সরল বিশ্বাসে হাজার হাজার ডলার পাঠিয়ে দেন, পরে জানতে পারেন সবটাই ছিল প্রতারণার ফাঁদ। এমন আরও ঘটনা ঘটেছে যেমন, বাবা আমি হাসপাতালে... বলে ছেলের কণ্ঠে ফোন আসে, আর পরিবার তড়িঘড়ি করে টাকা পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে তারা জানতে পারে, এটি ছিল ভয়েস ক্লোনিংয়ের এক দুর্ধর্ষ প্রতারণা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন লোন এবং ব্যাংকিং সবক্ষেত্রেও ভুয়া কণ্ঠস্বর ব্যবহার করে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে।

এই ডিজিটাল দুনিয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো, আধুনিক এআই সফটওয়্যার মাত্র ৩ থেকে ৫ সেকেন্ডের অডিও রেকর্ড থেকে একজন মানুষের কণ্ঠস্বরের নিখুঁত ক্লোন তৈরি করতে পারে। আজ হয়তো আপনার বন্ধুর একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার হলো, আর কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেই ক্লোন করা কণ্ঠস্বর আপনার পরিবার বা অফিসে বিপদের সংকেত পাঠইয়ে দিল। ২০২৫ সালের তথ্যানুসারে, প্রতি ৪৬ সেকেন্ডে কোথাও না কোথাও ভয়েস ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে নতুন প্রতারণা ঘটছে। গত বছরের তুলনায় এসব ঘটনা ১৩০০% বৃদ্ধি পেয়েছে।

তাহলে কি আমরা এআই এর অধীনে চলে যাচ্ছি? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তির বিরুদ্ধে প্রযুক্তিই এখন সবচেয়ে বড় ঢাল। ভয়েস ক্লোনিং ঠেকাতে এআই ভয়েস ডিটেক্টর এখন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। Detecting-AI.com, Intel FakeCatcher এর মতো সফটওয়্যার বা অ্যাপ রিয়েল টাইমে কথা বিশ্লেষণ করে বলে দিতে পারে এটি আসল কণ্ঠস্বর, নাকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তৈরি।

এছাড়াও, মাল্টিফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন যেমন কণ্ঠস্বরের পাশাপাশি ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ওটিপি বা পাসওয়ার্ড ব্যাংকিং, অফিস, এমনকি ভিডিও কলেও চালু হচ্ছে।

সাইবার বিশেষজ্ঞরা সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে পরিবার বা অফিসের জন্য একটি সেফ ওয়ার্ড নির্ধারণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন। কল করার সময়য় এমন একটি গোপন শব্দ ব্যবহার করা যা শুধুমাত্র ঘনিষ্ঠ মানুষজনই জানবে। কোনো জরুরি কাজের সময়য় সেই শব্দ ব্যবহার না করলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন যে কণ্ঠস্বরটি আসল নয়। একই সঙ্গে, ব্যক্তিগত তথ্য ও ভয়েস ক্লিপ সামাজিক মাধ্যমে অতিরিক্ত শেয়ার করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্ট ভয়েস ক্লোনিং টুল এবং কনটেন্ট ফিল্টারও পাওয়া যাচ্ছে, যা অডিও ফাইল নকল কিনা তা শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

তবুও, প্রযুক্তির নিরাপত্তা প্রাচীর যত উঁচু হোক না কেন, সাইবার অপরাধীরা যেন সবসময়ই এক ধাপ এগিয়ে থাকতে চায়। মানবিক সতর্কতাই আমাদের শেষ ভরসা। এই নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জেনে রাখা এবং নিয়মিত অনুশীলন করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, আগামী ডিজিটাল পৃথিবীতে আপনার কণ্ঠস্বরই হতে পারে সবচেয়ে বড় হুমকি।

মোহাম্মাদ নেসার

বাংলাদেশের খবর

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর