কৃত্রিম ভালোবাসার উন্মাদনা, মানুষ প্রেম করছে মেশিনের সাথে!
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:৩৬
-68ce5adf05351.png)
বিশ্বজুড়ে আগুনের মত ছড়িয়ে পড়ছে এআই প্রেমিক প্রেমিকা। তরুণ তরুণীরা খুঁজছেন ভার্চুয়াল ভালোবাসা, তবে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলছেন মানবিক অনুভুতি ছাড়া এ ভালোবাসা কতটা আসল?
রাত গভীর। অন্ধকার ঘরে কেউ একজন একা, মোবাইলের স্ক্রীনে চোখ রাখতেই ভেসে আসে কোমল কণ্ঠ ‘আই মিস ইউ… আজ খুব মনে পড়ছে তোমায়।‘ শুনে মনে হবে নিশ্চয়ই প্রেমিক বা প্রেমিকা কথা বলছে । কিন্তু আসলে এ কথাগুলো আসছে এআই চ্যাটবট অ্যাপ থেকে। কল্পনা নয়, এখন বাস্তব পৃথিবীতেই এআই সঙ্গী হয়ে উঠছে এক নতুন ধরনের প্রেমের সঙ্গা।
কোথায় কোথায় ঘটছে এমন ঘটনা
যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সুইডেনসহ বিশ্বের বহু দেশে তরুণর-তরুণী এখন এআই প্রেমে হাবু ডুবু খাচ্ছেন। গবেষণা বলছে, বিশেষ করে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীরা এআইকে ব্যবহার করছেন বন্ধু, সঙ্গী কিংবা রোমান্টিক পার্টনার হিসেবে।
এক জরিপে দেখা গেছে, উল্যেখিত দেশ গুলোর জেন জি তরুণদের মধ্যে আশি শতাংশ পর্যন্ত মানুষ বলেছেন তারা ভবিষ্যতে এআইকে বিয়ে করার কথা ভাবতে পারেন। যদিও এর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আছে, তবু জরিপের ফলাফল চোখে পড়ার মতো।
নারী নাকি পুরুষ কারা এগিয়ে?
এআই প্রেমে পুরুষেরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পুরুষদের মধ্যে ৩১ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ২৩ শতাংশ এআই প্রেমিক প্রেমিকার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। এদের বেশীরভাগই এআই ফ্রেন্ড ব্যবহার করছেন মানসিক সান্ত্বনা ও নিঃসঙ্গতা কাটাতে।
মানুষ নিঃসঙ্গ হলে প্রযুক্তিই হয়ে উঠছে তার সঙ্গী। কিন্তু এ সঙ্গ কি চিরস্থায়ী?
বাংলাদেশের হালচাল
বাংলাদেশেও এই ঢেউ এসে পৌঁছেছে। শহুরে তরুণ তরুণীরা একা রাত কাটাতে কিংবা পড়াশোনার চাপ সামলাতে এআইয়ের সঙ্গে কথা বলছেন। কেউ বলে ‘গুড নাইট, ‘আবার কেউ আক্ষেপ করে বলছে ‘আজ কাল তোমার সঙ্গে কথা না বললে শান্তি লাগে না।‘
টেলিনর এশিয়ার ডিজিটাল লাইভস ডিকোডেড বাংলাদেশ এর রিপোর্ট অনুযায়ী দেশের প্রায় নব্বই শতাংশ অনলাইন ব্যবহারকারী এআই ব্যবহার করছেন কোনো না কোনোভাবে। যদিও এখানে এআইকে বিয়ে করার প্রবণতা চোখে পড়েনি, তবে ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব ও রোমান্টিক অনুভূতির ইঙ্গিত মিলেছে।
আসলেই ভালোবাসা নাকি নিঃসঙ্গতা?
বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলছেন প্রযুক্তি কি সত্যিকারের ভালোবাসা দিতে পারে? মানবিক উষ্ণতা, স্পর্শ, সহানুভূতি এসব ছাড়া কি প্রেম পূর্ণ হয়?
এদিকে অনেক তরুণ তরুণী বলছেন এআই তাদের কাছে এমন এক সঙ্গী, যে কখনো ক্লান্ত হয় না,সন্দেহ করে না, ঝগড়া করে না, প্রশ্ন তুলেনা, সবসময় কথা শুনতে আগ্রহী।
আগামী দিনের প্রশ্ন
কিছুদিন পর হয়তো দেখা যাবে কেউ এআই প্রেমিক/প্রেমিকাকে জন্মদিনে ভার্চুয়াল উপহার পাঠাচ্ছে। হয়তো কোনো একদিন কেউ এআইকে বিয়ে করার জন্য আইনগত আবেদন করবেন।
তাহলে কি প্রেমের সংজ্ঞাই পাল্টে যাবে? মানবিক সম্পর্কের বিকল্প কি মেশিন হতে পারে? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই অগ্রযাত্রা সামনে রেখে এমন প্রশ্ন উদয় হতেই পারে । সময়ই বলবে এআই প্রেম মানুষকে শান্তি দেবে, নাকি তা হয়ে উঠবে নিঃসঙ্গতার এক প্রযুক্তিগত মরীচিকা।