-68e0d0c6a89b0.png)
আজকের দিনে ভিডিও দেখলেই আমরা বিশ্বাস করি। আসলে চোখে যা দেখা যায় তা সত্যি মনে হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রযুক্তির খেলায় এখন সেই বিশ্বাসই সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশ সবখানেই ডিপফেইক প্রযুক্তির ফাঁদে পড়ছে মানুষ।
সম্প্রতি ব্রাজিলে সংঘবদ্ধ প্রতারকরা বিশ্বের সুপারমডেল গিসেলি বুন্ডচেনের চেহারা আর কণ্ঠ নকল করে একের পর এক ভিডিও বানিয়েছে। ইনস্টাগ্রাম আর ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নকল বিজ্ঞাপন। গিসেলিকে দেখানো হয়েছে স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টের প্রমোশনাল বিজ্ঞাপনে। অফার আর ফ্রি গিফট পেতে হাজারো মানুষ টাকা পাঠিয়েছে, কিন্তু কেউ কিছুই পায়নি। পুরটাই ছিল ডিজিটাল বাটপারি। পুলিশ অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে মেটা ভুয়া বিজ্ঞাপনগুলো তাদের সাইট থেকে ডিলিট করে দেয়।
বাংলাদেশেও এমন ঘটনা ঘটেছে। সাকিব আল হাসানের নামে বেটিং সাইটের প্রচারণায় ব্যবহার করা হয়েছে ভুয়া ভিডিও। আবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ডিপফেইক ভিডিও দিয়ে প্রচার করা হয়েছে অনলাইন গেম্বলিং অ্যাপ। একইভাবে সেলিব্রেটিদের নকল ভিডিও বানিয়ে ছড়ানো হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে, এসবই ডিপফেইকের অপব্যবহার।
ডিপফেইক কী?
এটি হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর মেশিন লার্নিংয়ের এমন প্রযুক্তি যা একজন মানুষের চেহারা, কণ্ঠ এমনকি অভিব্যক্তি পর্যন্ত হুবহু নকল করতে পারে। টার্গেট ব্যক্তির কিছু ছবি আর ভিডিও সফটওয়্যারে দিয়ে দিলেই সেটিকে প্রম্পটের মাধ্যমে চাহিদামতো কথা বলিয়ে ভিডিও তৈরি করে দিতে পারে এই ডিপফেইক অ্যাপ। পরে এটি দেখলে মনে হয় আসল মানুষটিই কথা বলছে।
এই প্রযুক্তি যেমন সিনেমা বা গবেষণায় কাজে আসছে, তেমনি ভুয়া খবর প্রতারণা আর প্রোপাগান্ডার হাতিয়ারও হয়ে উঠছে। সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে পড়ছে আমাদের বিশ্বাস।
প্রতিকারের উপায় কী?
এসব ক্ষেত্রে প্রথমত সন্দেহকে অভ্যাসে রূপান্তর করতে হবে। অবিশ্বাস্য অফার, ভিডিও বা ভয়েস মেসেজ পেলে যাচাই ছাড়া বিশ্বাস করা যাবে না। অফিশিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া বা সংবাদমাধ্যমে মিলিয়ে দেখা জরুরি। অপরিচিত লিংকে ক্লিক না করা, নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য জটিল পাসওয়ার্ড আর টুস্টেপ ভেরিফিকেশন চালু রাখা। নিজের ছবি ভিডিও অযথা যেখানে সেখানে পাবলিক না করা। সবচেয়ে বড় বিষয় সচেতনতা। পরিবার, বন্ধু, সহকর্মী সবাইকে জানাতে হবে ডিপফেইক কীভাবে কাজ করে আর কীভাবে এই ধরনের ভিডিও শনাক্ত করা যায়। কারণ প্রযুক্তি যতই এগিয়ে যাক মানুষের বিশ্বাসকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে আমাদেরই সতর্ক হতে হবে।
আপনার সাথে এমন হলে কি করবেন?
এমন ঘটনা ঘটলে ভুক্তভোগীরা সাইবার ক্রাইম ইউনিট, বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইট www.police.gov.bd অভিযোগ করতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও সরাসরি রিপোর্ট করা সম্ভব। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, টুইটার ইত্যাদি সাইটে রিপোর্ট ফিচারের মাধ্যমে ভুয়া ভিডিও বা অ্যাকাউন্টের বিষয়ে জানানো যায়। প্ল্যাটফর্মগুলো সাধারণত দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।
এছাড়া বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) অনলাইন প্রতারণা ও অবৈধ ডিজিটাল কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। তাদের ওয়েবসাইট www.btrc.gov.bd সাইটে ডিপফেইক বা অনলাইন স্ক্যামের অভিযোগ করা যায়।
সচেতনতা বাড়াতে ফ্যাক্টচেকিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো ভুয়া ভিডিও যাচাই করা যায়। ভুক্তভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হলো প্রমাণ সংরক্ষণ করা যেমন ভিডিও, স্ক্রিনশট, লিংক, অর্থ লেনদেনের তথ্য ইত্যাদি, যেন পরে এসব তদন্তের কাজে ব্যবহার করা যায় ।
ডিজিটাল দুনিয়ার এই অদৃশ্য খেলায় একটাই প্রশ্ন ঘুরে ফিরে সামনে আসছে, আমরা যাদের চিনি ভালোবাসি আর বিশ্বাস করি তাদের চেহারা আর কণ্ঠও যদি নকল হয়ে যায় তাহলে আসল আর নকলের সীমানা কোথায়?