আবর্জনা থেকে সোলার প্যানেল, বদলে যেতে পারে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:১৬
-68e7997f3e6e6.png)
প্রতীকী ছবি
বাংলাদেশে প্রতিদিন টনকে টন ফল ও সবজির বর্জ্য ফেলা হয়। এই বর্জ্য যেমন পরিবেশ দূষণ বাড়ায়, তেমনি ডেঙ্গু ও অন্যান্য রোগের কারণও হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এবার সেই আবর্জনাই হতে পারে বিদ্যুতের উৎস। অবাক হচ্ছেন? চমক কিন্তু আরও বাকি।
ফিলিপাইনের তরুণ উদ্ভাবক কারভি এহন ম্যাইগ (Carvey Ehren Maigue) এমন এক প্রযুক্তি তৈরি করেছেন, যা এককথায় বলা যেতে পারে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন বিপ্লব। তার তৈরি সোলার প্যানেল আউরিয়াস (AuREUS) সূর্যের সরাসরি আলো ছাড়াও কাজ করে। এমনকি মেঘলা দিন বা ছায়াময় জায়গায়ও। সবচেয়ে বড় চমক হলো, এই প্যানেল তৈরি হয় ফল ও সবজির ফেলে দেওয়া আবর্জনা থেকে।
কীভাবে কাজ করে আউরিয়াস?
প্রচলিত সোলার প্যানেল কাজ করে সূর্যের সরাসরি আলোয়। তাই আকাশে মেঘ থাকলে বা আলো কমে গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনও থেমে যায়। কিন্তু আউরিয়াস প্রযুক্তিতে ব্যবহার করা হয় ফল ও সবজির বর্জ্য থেকে তৈরি বিশেষ কণা, যা সূর্যের অদৃশ্য আল্ট্রাভায়োলেট (UV) আলো শোষণ করে এবং তা দৃশ্যমান আলোয় রূপান্তরিত করে। অর্থাৎ, আল্ট্রাভায়োলেট থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করে। ইউভি আলো মেঘ কুয়াশা কিংবা দেয়াল ভেদ করেও যেকোনো স্থানে প্রবেশ করতে পারে। আর আউরিয়াস সেই আলো ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। অর্থাৎ, রোদ না থাকলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে অবিরাম।
প্রচলিত সোলার বনাম আউরিয়াস
প্রচলিত সোলার প্যানেল সাধারণত প্রয়োজনের ১৫ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। রোদ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় না। তাই রাতে এসব সোলার প্যানেল হয়ে পড়ে অকার্যকর। অন্যদিকে, কিছুটা কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেও আউরিয়াস প্যানেল দিনে-রাতে কিংবা মেঘলা পরিবেশে নিয়মিত বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। এভাবে তুলনা করলে দুই প্যানেলের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার পার্থক্য অনেক কমে আসে। আর সবচেয়ে বড় কথা, এটি শত ভাগ পরিবেশবান্ধব ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য। ফল সবজির বর্জ্যকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপকরণে পরিণত করায় উৎপাদন খরচ ও দূষণ দুটিই কম হয়।
বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা
বাংলাদেশে বছরের বেশ কিছু দিন মেঘলা আকাশ, কুয়াশা আর ছায়াযুক্ত আবহাওয়া থাকে। আবার প্রতিদিন বাজার, হাট আর বাড়িঘর থেকে টনকে টন খাদ্যবর্জ্য তৈরি হয়, যা বর্তমানে পরিবেশের বোঝা। এই বর্জ্য যদি আউরিয়াস প্রযুক্তিতে ব্যবহার করা যায়, তাহলে তা হতে পারে দুই দিকেই লাভজনক সমাধান। একদিকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সহজ হবে, অন্যদিকে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস বাড়বে। ভাবুন তো, ঢাকার কোনো বাজারের সবজির বর্জ্য দিয়ে যদি কোনো স্কুল বা হাসপাতালের জানালায় আউরিয়াস প্যানেল তৈরি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, তাহলে বিষয়টি কি বিশ্বে উদাহরণ হতে পারে না?
টেকসই শক্তির পথে বাংলাদেশ
শহরের উঁচু ভবনের কাঁচের জানালা, গ্রামীণ ক্লিনিক, স্কুল, হাট-বাজার, এমনকি নৌকাতেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা সম্ভব।
প্রচলিত সোলার প্যানেল যেখানে বসানো কঠিন, সেখানে আউরিয়াস হতে পারে বাংলাদেশের টেকসই শক্তির নতুন পথ।
সরকারের সহায়তা দরকার
বাংলাদেশ এখন নবায়নযোগ্য শক্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এ সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে আউরিয়াস প্রযুক্তি গ্রহণ করলে তা শুধু বিদ্যুৎ সংকট কমাবে না, বরং পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের পথেও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি তরুণ উদ্ভাবকদের এমন প্রযুক্তিতে উৎসাহ দেয়, তাহলে আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ- এই স্বপ্ন বাংলাদেশেও বাস্তব হতে পারে।
এমএন/এইচকে