-68ea1b78edc58.png)
মানুষ চাঁদে গিয়েছে এই কথাটা শুনলেই আমাদের মনে জেগে ওঠে বিস্ময়, কৌতূহল। আর এটি প্রযুক্তি বিজ্ঞানের এক অপার জয়গাথা। সেই চন্দ্র জয়ের কৃতিত্ব কিন্তু আজও একমাত্র অ্যামেরিকার দখলে। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে মোট ১২ জন অ্যামেরিকান নভোচারী চাঁদের মাটিতে পা রেখেছেন। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের মানুষ এখনও পর্যন্ত চাঁদের বুকে পদচিহ্ন আঁকতে পারেনি। অন্য দেশ রকেট পাঠিয়েছে ঠিকই, মানুষ পাঠাতে পারেনি।
চাঁদ যাত্রার পেছনের প্রতিযোগিতা
চাঁদে মানুষ পাঠানোর আগেই শুরু হয়েছিল স্পেস রেস। অ্যামেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চলছিল চাঁদ জয় করার প্রতিযোগিতা। অ্যামেরিকা তাদের মহাকাশ সংস্থা নাসাকে সামনে রেখে তৈরি করেছিল অ্যাপোলো মিশন। সোভিয়েত ইউনিয়ন রকেট ও মনুষ্যবিহীন যন্ত্রের মাধ্যমে চাঁদে স্পর্শ করলেও মানুষ পাঠাতে পারেনি। অবশেষে ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই অ্যাপোলো ১১ মিশনের মাধ্যমে নীল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন মানুষ হিসেবে চাঁদের বুকে পা রাখেন।
চাঁদের বুকে মার্কিনদের পদচিহ্ন
অ্যাপোলো ১১ থেকে অ্যাপোলো ১৭, এসব মিশনে অংশ নেন মোট ১২ জন নভোচারী। তারা হলেন নীল আর্মস্ট্রং, বাজ অলড্রিন, পিট কনরাড, অ্যালান বিন, অ্যালান শেপার্ড, এডগার মিচেল, ডেভিড স্কট, জেমস আয়ারউইন, জন ইয়ং, চার্লস ডিউক, ইউজিন সারনান এবং হ্যারিসন শমিট।
তাঁরা চাঁদের মাটিতে মার্কিন পতাকা স্থাপন করেছেন, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন, মাটি-পাথরের নমুনা সংগ্রহ করেছেন, পৃথিবীর মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং সেই মুহূর্ত পৃথিবীর কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ করেছেন টেলিভিশনের পর্দায়।
সাহসী অভিযান আর জাতির গৌরব
অ্যামেরিকার এই সাফল্য এক দিনের নয়। এটি ছিল বছরের পর বছর পরিকল্পনা, গবেষণা, প্রযুক্তি উন্নয়ন, অর্থের যোগান আর অগণিত মানুষের শ্রমের ফসল । ভয়, ঝুঁকি, অজানা মহাকাশ, বিকিরণ সব বাধা পেরিয়ে অ্যামেরিকান নভোচারীরা এগিয়ে গিয়েছিলেন শুধুমাত্র দেশকে ভালবেসে, মানবজাতির নতুন পথের সন্ধানে।
রহস্য ও বিতর্ক
চাঁদে মানুষের যাত্রা নিয়ে বরাবরই নানা রহস্য ও বিতর্ক ঘুরপাক খেয়েছে। কেউ কেউ একে 'ছদ্ম অভিযান' বলেও দাবি করেছে। তবে মার্কিন বিজ্ঞানীরা তাদের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ, ছবি, ভিডিও, সরাসরি সম্প্রচার এবং চাঁদ থেকে আনা নমুনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিয়েছেন এটি সত্যিকারের মানব সাফল্য, ইতিহাসের এক বাস্তব অধ্যায়।
কেন শুধু অ্যামেরিকানরা?
চাঁদে মানুষ পাঠানোর পেছনে প্রয়োজন ছিল বিপুল অর্থনৈতিক যোগান, আধুনিক প্রযুক্তি, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সাহসী নভোচারী এবং বৈজ্ঞানিক নেতৃত্ব। আর এর সবই ছিল অ্যামেরিকার কাছে। অ্যাপোলো মিশন ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো দেশ এমন বিশাল বাজেট বা রাজনৈতিক আস্থা দিতে পারেনি। ফলে আজও চাঁদের বুকে মানুষের পদচিহ্ন কেবল অ্যামেরিকানদের দখলেই রয়ে গেছে।
আবার চাঁদ ছোঁয়ার প্রস্তুতি
এখন নাসা নতুন করে শুরু করেছে ‘আর্টেমিস’ কর্মসূচি, যার লক্ষ্য আবার মানুষকে চাঁদে পাঠানো। এবার নভোচারীদের দলে থাকবেন নারী ও বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরাও। ৫০ বছর পর আবারও চাঁদ ছোঁয়ার এই উদ্যোগে অ্যামেরিকা দেখাতে চায় মানুষের স্বপ্নের কোনো সীমা নেই।
চাঁদ জয় কেবল অ্যামেরিকার নয়, গোটা মানবজাতির অহংকার। এটি প্রমাণ করেছে, বিজ্ঞান ও সাহস একসঙ্গে কাজ করলে অসম্ভব বলে কিছু থাকে না। চাঁদের মাটিতে স্থাপিত সেই প্রথম পদচিহ্ন আর অ্যামেরিকার পরাকা আজও মনে করিয়ে দেয় মানুষ চাইলে তার সীমারেখা ভেঙে পৌঁছে যেতে পারে মহাবিশ্বের অজানা প্রান্তরেও।