ঢাকা থেকে মহাকাশের পথে, বিজ্ঞানী ইয়নের সাফল্যে গর্বিত বাংলাদেশ
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ২২:০০

বাবার সাথে ইয়ন। ছবি: বাংলাদেশের খবর
ঢাকার এক তরুণ আজ কাজ করছেন বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসায়। তাঁর নাম ড. রেহমান এস. ইয়ন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রচেস্টার ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আরআইটি) এর চেস্টার এফ. কার্লসন সেন্টার ফর ইমেজিং সায়েন্সে গবেষণা অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি তিনি নাসা ও মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) পরিচালিত ল্যান্ডস্যাট উপগ্রহ মিশনের গুরুত্বপূর্ণ গবেষক দলের সদস্য।
উপগ্রহ প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধি
ল্যান্ডস্যাট হলো পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ পর্যবেক্ষণের অন্যতম দীর্ঘমেয়াদি উপগ্রহ প্রকল্প। এই মিশনের থার্মাল চিত্রায়ণ, ক্যালিব্রেশন ও ডাটা অ্যানালাইসিসের দায়িত্বে রয়েছেন রেহমান ইয়ন। তিনি ল্যান্ডস্যাট ৮ ও ৯ উপগ্রহের থার্মাল ইনফ্রারেড সেন্সর থেকে প্রাপ্ত ডাটা অ্যানালাইসিসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি ল্যান্ডস্যাট নেক্সট নামের পরবর্তী প্রজন্মের উপগ্রহ মিশনের জন্যও কাজ করছেন, যেখানে তিনি ডাটা কমপ্রেশন, সেন্সর পরীক্ষা ও অ্যাকিউরেসি অ্যানালাইসিস অ্যালগরিদম তৈরি করছেন। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আরআইটি ঘোষণা করে, নাসা ও ইউএসজিএসের যৌথ অর্থায়িত ল্যান্ডস্যাট থার্মাল সেন্সর ক্যালিব্রেশন প্রকল্পে ড. ইয়ন সহ-মুখ্য গবেষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সাম্প্রতিক গবেষণাপত্র 'লসলেস ইমেজ কমপ্রেশন মেথড' (২০২৫) ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানমহলে আলোচিত হয়েছে।
ঢাকা থেকে মহাকাশের পথে
ড. রেহমান ইয়নের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। শৈশবে বাবার কর্মসূত্রে কিছু সময় যুক্তরাজ্য ও জাপানে কাটান তিনি। তিনি ঢাকার মাস্টারমাইন্ড স্কুল থেকে ও লেভেল এবং এ লেভেল সম্পন্ন করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিটার্বো ইউনিভার্সিটি থেকে গাণিতিক পদার্থবিদ্যা ও রসায়নে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে রচেস্টার ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আরআইটি) থেকে ইমেজিং সায়েন্স বিষয়ে ডক্টরেট (পিএইচডি) সম্পন্ন করেন। তাঁর বাবা, প্রফেসর ড. এম ছায়েদুর রহমান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ছিলেন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি অধ্যাপক। শিক্ষায় ও গবেষণায় বাবা ছেলের এই মিল যেন এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে জ্ঞানের বিবর্তন।
শিক্ষকতা ও সম্মাননা
গবেষণার পাশাপাশি ড. ইয়ন আরআইটিতে শিক্ষকতা করেন। সেখানে তিনি ডিজিটাল ইমেজ প্রসেসিং ও প্রোগ্রামিং ফর ফটোগ্রাফিক সায়েন্সেস বিষয়ে পাঠদান করেন। ২০২৪ সালে তাঁর প্রাক্তন বিশ্ববিদ্যালয় ভিটার্বো ইউনিভার্সিটি তাঁকে বিশিষ্ট প্রাক্তন ছাত্র পুরস্কার প্রদান করে।
গবেষণা ও শিক্ষায় তাঁর অবদানকে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক গবেষণা সংস্থা ইতোমধ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে।
তরুণদের জন্য বার্তা
ড. ইয়ন মনে করেন উপগ্রহের চিত্র হলো পৃথিবীর আয়না এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি মানুষ ও প্রকৃতি কোন পথে এগোচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণেরা যদি কৌতূহলী, পরিশ্রমী ও একনিষ্ঠ হয়, তবে বিশ্বমানের গবেষণায় অংশ নেওয়া অসম্ভব নয়। তাঁর ভাষায় “স্বপ্নে যদি ভালোবাসা ও অধ্যবসায় জড়িয়ে থাকে, তবে কোনো সীমান্তই বাধা হতে পারে না।'
দেশের জন্য গর্ব
একজন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী যখন নাসার মতো প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন, তখন তা গোটা জাতির জন্যই গর্বের বিষয়। ড. রেহমান ইয়ন আজ সেই গর্বের প্রতীক। তিনি দেখিয়েছেন প্রতিভা ও পরিশ্রম থাকলে বাংলাদেশের তরুণরাও আন্তর্জাতিক মহলে নিজেদের স্থান করে নিতে পারে।