গুগল মহাকাশে নিয়ে যাচ্ছে এআই ডেটা সেন্টার, অবাক পৃথিবী!
প্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:৩৬
গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে গুগল মহাকাশে নিয়ে যাচ্ছে এআই ডেটা সেন্টার। প্রযুক্তি জগতে এক অভূতপূর্ব পদক্ষেপ হিসেবে গুগল ঘোষণা করেছে 'প্রজেক্ট সানক্যাচার'। এটি এমন একটি পরিকল্পনা, যেখানে মহাকাশের স্যাটেলাইটগুলিতে বসবে গুগলের শক্তিশালী এআই চিপ। এটি হবে একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প, যা ভবিষ্যতের কম্পিউটিং ইন্ডাস্ট্রিকে সম্পূর্ণভাবে বদলে দেবে বলে জানিয়েছে গুগল।
সানক্যাচার কী এবং কেন প্রয়োজন?
শুধুমাত্র সার্ভার ঠান্ডা রাখতে এবং নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চালাতে পৃথিবীর ডেটা সেন্টারগুলো এখন লাখ লাখ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করছে। এই কারণেই গুগল সূর্যের দিকে নজর দিয়েছে। সূর্য সৌরজগতের সবচেয়ে বড় শক্তির উৎস, এটি মানব উৎপাদিত বিদ্যুতের চেয়ে ১০০ ট্রিলিয়ন গুণ বেশি শক্তি তৈরি করে। যদি সঠিক কক্ষপথে স্যাটেলাইট স্থাপন করা যায়, তাহলে সেখানকার সোলার প্যানেল পৃথিবীতে ব্যবহৃত প্যানেলের চেয়ে অনেক বেশি শক্তি উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মহাকাশে সূর্যের আলো প্রায় সব সময় পাওয়া যায়। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদনও বন্ধ হবে না।
স্যাটেলাইটে কী থাকবে?
সানক্যাচার প্রকল্পে গুগল প্রায় ৮০টি ছোট স্যাটেলাইট কনস্টেলেশন তৈরি করবে, যেখানে প্রতিটি স্যাটেলাইটে থাকবে গুগলের নিজস্ব ডিজাইন করা প্রসেসর 'টেনসর প্রসেসিং ইউনিট' (টিপিইউ)। এই স্যাটেলাইটগুলি পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০০ মাইল (৬৪০ কিলোমিটার) উচ্চতায় থাকবে, কিন্তু মজার বিষয় হলো এগুলি সূর্যের সাথে তাল মিলিয়ে চলবে। প্রযুক্তিগত ভাষায় একে বলে ডন-টু-ডাস্ক সান-সিঙ্ক্রোনাস লো আর্থ অরবিট। এর মানে স্যাটেলাইটগুলি সর্বদা সূর্যের মুখোমুখি থাকবে তেই কখনও ছায়ায় পড়বে না। ফলে সোলার প্যানেলগুলি প্রায় ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন সৌর শক্তি পাবে।
কত দ্রুত হবে সংযোগ?
স্যাটেলাইটগুলির মধ্যে যোগাযোগ হবে লেজার লাইট ব্যবহার করে, যাকে বলা হয় ফ্রি-স্পেস অপটিক্যাল কমিউনিকেশন। এই প্রযুক্তিতে ডেটা ট্রান্সফার হবে অভূতপূর্ব গতিতে। একটি মুভি মহাকাশের এই লেজার লিংকে মাইক্রোসেকেন্ডে ডাউনলোড হয়ে যাবে।
কবে লঞ্চ হবে?
গুগল পরিকল্পনা করছে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে প্রথম দুটি প্রোটোটাইপ স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠাবে। এজন্য তারা কাজ করছে প্ল্যানেট ল্যাবসের সহযোগিতায়। এটি হবে পরীক্ষামূলক মিশন যাতে পরীক্ষা করা হবে স্যাটেলাইটগুলি কত ভালো কাজ করে এবং লেজার লিংক সত্যিই কতটা কার্যকর।
বিকিরণ সহনশীলতা পরীক্ষায় সাফল্য।
মহাকাশের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো তেজস্ক্রিয় বিকিরণ। ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি মহাকাশের তেজস্ক্রিয়তায় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিন্তু গুগল ইতোমধ্যে এই বাধা অতিক্রম করেছে। তারা তাদের সর্বশেষ প্রজন্মের টিপিইউ চিপ 'ট্রিলিয়াম'কে মহাকাশের বিকিরণ পরিস্থিতি সিমুলেট করে পরীক্ষা করেছে, দেখা গেছে এই চিপগুলি পাঁচ বছরের মিশনের জন্য প্রত্যাশিত বিকিরণের চেয়ে প্রায় ৩ গুণ বেশি শক্তিশালী বিকিরণ সহ্য করতে পারে।
অর্থনৈতিক দিক : কবে লাভজনক হয়ে উঠবে?
এই মুহূর্তে মহাকাশে কোনো কিছু লঞ্চ করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কিন্তু এটাও সত্যি যে এর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৩০ এর মাঝামাঝি সময়ে লঞ্চ খরচ নেমে আসবে প্রতি কিলোগ্রাম মাত্র ২০০ ডলারে। আর এই খরচে নেমে আসলে, মহাকাশ ভিত্তিক ডেটা সেন্টার পৃথিবীর ডেটা সেন্টারের সাথে সমানতালে প্রতিযোগিতা করতে পারবে। শক্তি ব্যয়ের দিক থেকেও মহাকাশ ভিত্তিক সিস্টেম খুবই আশাব্যঞ্জক। নিরবচ্ছিন্ন সৌর শক্তি এবং মহাকাশের ঠান্ডা পরিবেশ খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাবে কারণ সেখানে কোনো কুলিং সিস্টেমের প্রয়োজন হবে না।
পরিবেশবান্ধব সমাধান ।
কুলিংয়ের জন্য ডেটা সেন্টারগুলো পৃথিবীতে বিশাল পরিমাণে পানি খরচ করে। একই সাথে বিশাল আকারের জমিও দখল করে রাখে। মহাকাশে এই সমস্যা নেই। তাই সানক্যাচার শুধু একটি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নয়, এটি পৃথিবীর জন্য একটি পরিবেশ বান্ধব প্রকল্প।
এই প্রোজেক্ট সফল হবে?
গুগল এর আগেও বড় স্বপ্ন দেখেছে এবং সেগুলি বাস্তব করেছে। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রকল্প যখন শুরু করেছিল তখন সবাই হেসেছিল, এখন তা বাস্তবতা। একই ভাবে গুগল স্বয়ংক্রিয় গাড়ির প্রকল্প চালু করেছিল ১৫ বছর আগে, আজ সেটি 'ওয়েমো' নামে কোটি কোটি যাত্রী ব্যবহার করছে।
সানক্যাচার এখনও গবেষণা পর্যায়ে আছে। কিন্তু এটি একটি শক্তিশালী ইঙ্গিত যে ভবিষ্যতের কম্পিউটিং ইন্ডাস্ট্রি পৃথিবীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। গুগলের এই সাহসী পদক্ষেপ শুধু নিজেদের জন্য নয়, বরং সম্পূর্ণ প্রযুক্তি শিল্পের জন্য একটি নতুন দরজা খুলে দিতে যাচ্ছে।
এই ফিচারটি গুগলের সরকারি ব্লগ, 9to5Google এবং India Today এর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও Reddit ও অন্যান্য প্রযুক্তি সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যাতে প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরা যায়।

