গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর
কল্পনা করুন, একটি ফোন যার দাম প্রায় ৫ লক্ষ ডলারের বেশি যা বাংলাদেশের হিসেবে প্রায় ৪ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা। আর স্পেসিফিক বলতে গেলে ভারটু (Vertu) ব্র্যান্ডের সিগনেচার কোবরা লিমিটেড এডিশন (Signature Cobra Limited Edition) ফোনের দাম শুরু হয় ৫ লক্ষ ৪ হাজার ৩০৮ ডলার থেকে, যা একজন সাধারণ মানুষের এক জীবনের আয়ের চেয়ে বেশি। কিন্তু কেন এত দাম?
কারণ এতে ব্যবহার করা হয়েছে ৪৩৯টি রুবি, এমেরাল্ড আর হীরা। সাথে টাইটানিয়াম ও উচ্চমানের চামড়া। প্রতিটি ফোন হাতে তৈরি, আর আর সারা পৃথিবীতে মাত্র ৮টি কপিই তৈরি হয়েছে। অবাক করা বিষয় হলো এটি কেনার পর কাস্টমারকে ডেলিভারি করা হয় হেলিকপ্টার বা প্রাইভেট জেটের মাধ্যমে, যেন এটি একটি রাজকীয় উপহার।
ফোনটি সোনা, হীরা আর রুবি দিয়ে সাজানো একটি সাপের আকৃতির মত, দেখে মনে হয় যেন একটি জীবন্ত শিল্পকর্ম। এই ফোনটি শুধু কথা বলার যন্ত্র নয়, বরং একটি স্ট্যাটাসের সিম্বল, যা ধনীদের জীবনকে আরও চমকপ্রদ করে তোলে।
এই ফোন মূলত কেনেন ধনী ব্যবসায়ী, কর্পোরেট লিডার, সেলিব্রিটি আর রয়্যাল ফ্যামিলির সদস্যরা। কিন্তু তারা এটি ব্যবহার করেন কেন? উত্তর সহজ, স্ট্যাটাস দেখানোর জন্য। কারণ এটি সাধারণ আইফোন বা স্যামসাং থেকে একদম আলাদা। এছাড়া, এতে আছে কোয়ান্টাম এনক্রিপশন (quantum encryption) যা ডেটা সুরক্ষিত রাখে, আর ২৪ ঘণ্টা কনসিয়ার্জ সার্ভিস (concierge service) যা রিজার্ভেশন, ভ্রমণ সহায়তা ও ভিআইপি ইভেন্ট অ্যাক্সেস দেয়। এটি তাদের ব্যস্ত জীবনে সময় বাঁচায় এবং গোপনীয়তা নিশ্চিত করে।
কারা এই ফোন ব্যবহার করছে? ফুটবল তারকা ডেভিড বেকহ্যাম, সংগীত সেলিব্রেটি ম্যাডোনা এবং ভারতের অভিনেতা ফাহাদ ফাসিলের কাছে এই ফোনের একটি করে কপি রয়েছে। বেকহ্যাম এটিকে তার লাক্সারি লাইফস্টাইলের অংশ বলে মনে করেন, যা তার ফুটবল এবং ফ্যাশন জগতের সাথে মানানসই। ম্যাডোনা এর এক্সক্লুসিভ ডিজাইন পছন্দ করেন, আর ফাহাদ ১০ লক্ষ রুপির কিপ্যাড ভারটু ব্যবহার করে এটি প্রকাশ করন যে দেখতে সাধারণ মনে হওয়া জিনিসের কদর বুঝতে হলে তার সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হয়। ঠিক যেমন তার সাধারণ রূপে অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা।
ভারটু (Vertu) ১৯৯৮ সালে ব্রিটিশ কোম্পানি নোকিয়ার অধীনে লাক্সারি মোবাইল ব্র্যান্ড হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তারা হ্যান্ডমেড ফোন তৈরির জন্য বিখ্যাত। সোনা, হীরা, চামড়া দিয়ে কাস্টোমাইজড ফোন তৈরি করে তারা ধনীদের আকর্ষণ করে। ২০১২ সালে ভারটু নোকিয়া থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং নিজেরাই এই ফোন তৈরি করতে থাকে। কিন্তু তারাও আর্থিক ভাবের কারণে সফল হতে পারেনি, ফলে ২০১৫ সালে চীনা কোম্পানি গডিন এটিকে কিনে নেয়। ২০১৭ সালে গডিনও দেউলিয়া হয় যায়। পরে বাফার গ্রুপ ব্র্যান্ড এর রাইট কিনে পুনরায় এটির উৎপাদন ও বিক্রি শুরু করে। ২০২৫ সালে হংকং ভিত্তিক ভারটু এখন অ্যান্ড্রয়েড, কোয়ান্টাম সিকিউরিটি ও কনসিয়ার্জ সার্ভিসের সুবিধা নিয়ে এই ফোনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।


