ছবির চেয়েও সুন্দর যে গ্রাম রূপ নিয়েছে মিনি পিকনিক স্পটে

বাংলাদেশের খবর
প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২৫, ১৯:৫০
কালী নদীর উপর বাঁশ ও কাঠ দিয়ে নির্মিত সেতু পাল্টে দিয়েছে একটি গ্রামের পরিচয়। গ্রামটি দেখতে ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে প্রতিদিন সেখানে তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি ভিড় জমে বিভিন্ন বয়সী মানুষের। চারদিকে স্বচ্ছ বাতাস আর সবুজের সমারোহে গ্রামটি রূপ নিয়েছে মিনি পিকনিক স্পটে। এ চিত্র ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে। শ্রীরামপুর হলেও দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে গ্রামটি পরিচিতি পেয়েছে কাঠের সেতুর গ্রাম নামে।
ঝিনাইদহ শহর থেকে শ্রীরামপুর গ্রামের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। ছোট্ট এই গ্রামটি কালী নদীর ধার ঘেঁষে অবস্থিত। শ্রীরামপুর ও রতনপুর এই দুটি গ্রামের মানুষের চলাচলের জন্য আগে ছিল একটি বাঁশের সাঁকো। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হতো মানুষের। পরে স্থানীয় উদ্যোগে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সেখানে নির্মাণ করা হয় সেতু। কে জানতো এই সেতুটিই একদিন পাল্টে দিবে গ্রামের পরিচয়। শুনতে অবাক হলেও বর্তমানে গ্রামটির নাম পাল্টে হয়েছে কাঠের সেতুর গ্রাম। যেখানে প্রতিদিন দুপুর হলেই ভিড় বাড়তে থাকে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের। কেউ গল্প করছেন, কেউ বন্ধুদের সাথে ছবি তুলছেন। কেউবা প্রিয় মানুষকে দোলনায় বসিয়ে দোল দিচ্ছেন, করছেন খোশগল্প।
পাশেই নদী পার হচ্ছে গরু, রাখাল গরুর পাল নিয়ে ফিরছেন বাড়িতে। বর্ষার পানিতে নদীতে কেউ সাঁতার কাটছে আবার কেউ মাছ ধরছে এমন দৃশ্যও দেখা যায়। এসবে গ্রামটি যেন মিনি পিকনিক স্পটে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া প্রতিদিন এই সেতু দিয়েই যাতায়াত করে শত শত লোক। দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি হয়। সাথে স্থানীয়রাও টঙে বসে বিকেলের অলস সময় কাটায় চা আর মুখরোচক খাবারের সাথে। চারদিকের এই স্বচ্ছ বাতাস সবুজের সমারোহ যেন ছবির চেয়েও সুন্দর।
স্থানীয়রা জানান, শৈলকুপার ত্রিবেনী ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে কালী নদী। নদীটির দক্ষিণ পাশে তমালতলা-চড়িয়ারবিল ভায়া রতনপুর সড়ক। আর উত্তরে রয়েছে বসন্তপুর-শেখপাড়া সড়ক। দুটি সড়কই পাকা। দুটি সড়কের দুই প্রান্তে বড় বাজার রয়েছে। সেখানে নদী পারাপারের জন্য সেতু রয়েছে। কিন্তু মাঝের অংশে রতনপুর, সিংনগর, আগুনিয়াপাড়া, হড়রা, দিগনগর, শ্রীরামপুর, বসন্তপুর, পদমদী গ্রামের বাসিন্দারা শ্রীরামপুর-রতনপুর ঘাটে কাঠের সেতু দিয়ে পারাপার হন। নদীর উত্তরের পাড় ঘেঁষে রয়েছে পাকা সড়ক আর দক্ষিণে প্রায় দেড় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে পিচঢালা সড়ক। এই কাঁচা সড়ক দিয়ে কাঠের সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করলে অন্তত ছয় কিলোমিটার দূরত্ব কমে।
ব্যতিক্রমী এই সেতটিু একেক সময় একেক রূপ নেয়। শীতকালে শিমুলের লাল ছায়ায় ছেয়ে যায় অন্যদিকে বর্ষায় রূপ নেয় হালকা নীল আকাশ। সাথে স্বচ্ছ পানিতে টইটম্বুর। সেতু, নদী ও আশপাশের প্রাণ-প্রকৃতি দেখতে প্রতিদিনই শত শত মানুষ পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ছুটে আসছেন। অজোপাড়ার এই গ্রামীণ সৌন্দর্যদের দিকে স্থানীয় প্রশাসন নজর বাড়ালে গ্রামটি পর্যটকদের আনাগোনায় আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এমনটিই দাবি স্থানীয়দের।
এইচকে//এমআই/ওকেআর/এনআর