
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বাড়ছে। সোমবার বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন তাদের প্যানেল ঘোষণা ও কার্যক্রম চালিয়ে ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করেছে। এর মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্র অধিকার পরিষদ তাদের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে।
অন্যদিকে, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল শেষ মুহূর্ত পর্যন্তও পূর্ণাঙ্গ প্যানেল চূড়ান্ত করতে পারেনি। এ সময় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচনের পরিবেশ ও প্রক্রিয়া নিয়ে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেছে। নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর।
ইসলামী ছাত্রশিবির এবারের ডাকসু নির্বাচনে ২৮ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছে। ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম, আর সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সভাপতি এস এম ফরহাদ। এছাড়া বিভিন্ন সম্পাদক ও সদস্যপদেও প্রার্থী রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে শিবিরের নেতারা বলেন, ‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করতে চাই। আমাদের প্যানেলে যোগ্য নেতৃত্ব নিশ্চিত হয়েছে।’
সোমবার শিবিরের কর্মীরা ক্যাম্পাসে পোস্টার বিতরণ, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং ভোটার সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
অন্যদিকে, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এখনও পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করতে পারেনি। তবে ভিপি পদে মনোনয়নপত্র তুলেছেন তিন নেতা— মমিনুল ইসলাম জিসান, বি এম কাউসার ও আবিদুল ইসলাম খান। জিএস পদে ফরম নিয়েছেন তানভীর বারী হামীম এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে লড়তে পারেন তানভীর আল হাদী মায়েদ।
ছাত্রদলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চূড়ান্ত প্যানেল ঘোষণার দায়িত্ব বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। শিক্ষার্থীরা এখন দেখছে, কে কোন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ দুপুরে তাদের ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ প্যানেল ঘোষণা করেছে। ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, জিএস পদে সাবিনা ইয়াসমিন এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে রাকিবুল ইসলাম। এছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সমাজসেবা, ক্রীড়া, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন, স্বাস্থ্য, মানবাধিকার ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক পদেও প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। সংগঠনটি ভোটারদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সভা ও প্রচারণা চালাচ্ছে।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন অভিযোগ করেছে, ডাকসু নির্বাচনে বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও নিপীড়ক প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু সংবাদ সম্মেলনে ছয় দফা দাবিও উত্থাপন করেছেন। দাবিগুলো হলো—
- ডাকসু ভোটের অন্তত ১৫ দিন আগে পরীক্ষা স্থগিত রাখতে হবে।
- রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের তালিকা প্রকাশ ও বহিষ্কার করতে হবে।
- প্রচারণার জন্য স্পষ্ট নীতি প্রণয়ন করতে হবে।
- অনলাইন ভিত্তিক গুজব ও মিথ্যা তথ্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
- শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পরিবেশ ও বাড়তি পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
- ক্যাম্পাসে মব পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রশাসনের রূপরেখা থাকা জরুরি।
ছাত্র ইউনিয়ন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, নিপীড়ক বা সন্ত্রাসীদের প্রার্থী করা হলে তারা অন্যান্য অংশীদারের সঙ্গে মিলিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
তফসিল অনুযায়ী ডাকসু ভোটগ্রহণ হবে ৯ সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২০ আগস্ট, প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ ২১ আগস্ট, মনোনয়ন প্রত্যাহার ২৫ আগস্ট এবং চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ ২৬ আগস্ট। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভোটকে ঘিরে উৎসাহিত হলেও অনেকে সহিংসতা ও অনিয়ম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষী ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র ৩৭ বার। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে হয়েছে ২৯ বার। স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৩ বছরে ডাকসু ভোট হয়েছে মাত্র ৮ বার। তাই এবারের নির্বাচন শিক্ষার্থীদের কাছে কেবল নেতৃত্ব নির্বাচনের সুযোগ নয়, গণতান্ত্রিক চর্চা ফিরিয়ে আনারও একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এনএমএম/এমএইচএস