ডিবি হেফাজত থেকে ছাড়া পেয়ে যা জানালেন সাংবাদিক সোহেল
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৩৫
মিজানুর রহমান সোহেল। ছবি : সংগৃহীত
গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজত থেকে মুক্তি পেয়েছেন সাংবাদিক মিজানুর রহমান সোহেল। তিনি দৈনিক ভোরের কাগজের অনলাইন হেড এবং অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে সোহেল নিশ্চিত করেন, তিনি প্রায় সাড়ে ১০ ঘণ্টা ডিবির হেফাজতে থাকার পর বাসায় ফিরে এসেছেন।
ছাড়া পাওয়ার পরে এখন নিজের বাসায় আছেন বলে বাংলাদেশের খবরকে তিনি নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকা মহানগর ডিবির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলামও বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, বুধবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে মিজানুর রহমান সোহেলকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
সোহেল জানিয়েছেন, ‘দীর্ঘ সময় পর বুঝতে পারলাম, সরকারের একজন উপদেষ্টার ইশারায় মাত্র ৯ জন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীকে মনোপলি ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়ার জন্যই আমাকে আটক করা হয়েছিল। আমার সঙ্গে সংগঠনের সেক্রেটারি আবু সাঈদ পিয়াসকেও আটক করা হয়। তিনি এখনো ডিবি কার্যালয়ে আছেন। আজ (বুধবার) ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্টার (এনইআইআর) নিয়ে ডিআরইউতে মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ (এমবিসিবি)-এর প্রেস কনফারেন্স করার কথা ছিল। আমি সেখানে মিডিয়া পরামর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। সেই প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করাই তাদের প্রধান টার্গেট ছিল। কিন্তু তাদের জন্য আফসোস, যে উদ্দেশ্যে তারা প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করতে চাইল সেটা দেশের সবাই জেনে গেল।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মুক্তবাণিজ্য নীতির সঙ্গে এনইআইআর স্পষ্টতই সাংঘর্ষিক। প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে দেশে প্রতিযোগিতা কমিশনও রয়েছে। অথচ মাত্র ৯ জন ব্যবসায়ীকে সুবিধা দিতে সারাদেশে ২৫ হাজার মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীকে পথে বসানোর গভীর চক্রান্ত চলছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গ্রামের সাধারণ মানুষ, প্রবাসীসহ অনেকেই বিপদে পড়বেন। একটা চেইন ভেঙে পড়বে। অনেক ব্যবসায়ী পথে বসে যাবে। জেনে রাখা ভালো, এই ৯ জনের একজন ওই উপদেষ্টার স্কুল-বন্ধু।’
সোহেল প্রশ্ন তুলেছেন, ‘একটা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বললে সরকার কেন ভয় পায়? শুধু প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করতেই কি আমাকে গভীর রাতে জোর করে তুলে নিতে হলো? যারা মুখে ‘বাকস্বাধীনতা’র বুলি আওড়ান, তারাই কি আমাকে বাকরুদ্ধ করতে এই আয়োজন করলেন? মগের মুল্লুকে এই কি তবে বাকস্বাধীনতার বাস্তব চিত্র?’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমাকে আটক করার ঘটনা জানাজানি হতেই বহু শুভাকাঙ্ক্ষী, ভাই, বন্ধু, সহকর্মী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। অনেকেই খবর নিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দিয়েছেন, বিবৃতি দিয়েছেন, সংবাদ প্রকাশ করেছেন। তাদের এই সমর্থন ও আওয়াজের কারণে আমি দ্রুত মুক্তি পেয়েছি বলে বিশ্বাস করি। যারা আমার পাশে ছিলেন, তাদের প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ।’
এর আগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ডিবি পরিচয়ে পাঁচজন পোশাকধারী ব্যক্তি তাকে রাজধানীর নতুন বাড্ডার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যান। সোহেলের স্ত্রী সুমাইয়া সীমা বলেন, ‘ডিবি পরিচয়ে তারা বাসায় ঢুকে সোহেলকে জোর করে সঙ্গে নিয়ে যায়।’
ঘটনার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক এবং বিদেশে অবস্থানরত অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘বুধবার রাত ১২টার পর মিজানুর রহমান সোহেলকে তার নতুন বাড্ডার বাসা থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে। ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।’
জুলকারনাইন আরও উল্লেখ করেন, ‘কেন মধ্যরাতে একজন সাংবাদিককে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো, তা জানা দরকার। এটি নেদারল্যান্ডের নাগরিক এবং বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়বের ইশারায় মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীদের সংবাদ সম্মেলন বন্ধ করার প্রচেষ্টা বলে মনে হচ্ছে। সাংবাদিক মিজানুর রহমান সোহেল সেখানে মিডিয়া পরামর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।’
সায়ের তার পোস্টের শেষে লিখেছেন, ‘পুলিশকে ব্যবহার করে এভাবে মধ্যরাতে একজন সাংবাদিককে হেনস্থা করা নিন্দনীয়। যদি ফয়েজ এই ঘটনায় প্রভাব রেখেই থাকেন, তাহলে সকল গণমাধ্যম কর্মীর উচিত এটি নজরে রাখা এবং তার কার্যক্রম কভার করা।’
এমএইচএস/

