‘আমাকে বাঁচতে দিন, আমি বাঁচতে চাই। আমি অনেক কষ্ট পাচ্ছি’— এভাবেই নিজের জীবন ভিক্ষা চেয়ে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানায় ১২ বছর বয়সী তাসলিমা আক্তার। একমাত্র সন্তানের বাঁচার আকুতি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা-মা। তার এই আকুতির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরই পাশে দাঁড়িয়েছে ক্যান্সার ফাউন্ডেশন, বগুড়া।

গত ২০ জুন দৈনিক বাংলাদেশের খবর–এ ‘মৃত্যুর প্রহর গুনছে ক্যান্সার আক্রান্ত ১২ বছরের তাসলিমা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি নজরে আসে ক্যান্সার ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষের। এরপর ২৪ জুন বিকেলে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু মুসা মো. আরিফ বিল্লালের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল তাসলিমার গ্রামের বাড়িতে যান। তারা শিশুটির শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেন।

ডা. আবু মুসা বলেন, তাসলিমার চিকিৎসা যেন কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়, সেজন্য আমরা পাশে থাকার চেষ্টা করছি। প্রয়োজনে সহায়তা অব্যাহত থাকবে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ফাউন্ডেশনের বগুড়া আহ্বায়ক নাঈম ইসলাম, সদস্য সচিব আবদুল রউফসহ আরও অনেকে।

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার দুর্গাহাটা ইউনিয়নের বেতুয়াকান্দি গ্রামের দরিদ্র কৃষক তাজুল ইসলামের একমাত্র মেয়ে তাসলিমা। ছয় মাস আগে তার বাঁ পায়ের হাড়ে ধরা পড়ে বোন ক্যান্সার। এরপর থেকে চিকিৎসা চলছে সিরাজগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে তিনটি কেমোথেরাপি, সামনে রয়েছে জরুরি অপারেশন ও আরও কেমো।

তাসলিমার মা শাজিনা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মেয়েটার অনেক স্বপ্ন ছিল। ডাক্তার হতে চেয়েছিল। এখন শুধু ব্যথায় কাতরায়, কিছুই করতে পারে না। আপনারা দয়া করে ওকে বাঁচাতে সাহায্য করুন।

বড় ভাই শাখিন আহম্মেদ বলেন, বোনের চিকিৎসার জন্য বাড়ি ছাড়া সবকিছু বিক্রি করে দিয়েছি। ধারদেনায় ডুবে গেছি। এখন কারও সাহায্য ছাড়া ওকে বাঁচানো সম্ভব না।

চাচা চাঁন মিয়া বলেন, তার অপারেশন ও কেমোথেরাপিতে প্রায় ২০ লাখ টাকার মতো খরচ হবে। আমার ছোট ভাই তার মেয়ের চিকিৎসার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। বাড়ি ছাড়া সব কিছু বিক্রি করে দিয়েছে। এখন অন্যের জমিতে কাজ করে কোনো মতে বেঁচে আছে। কিন্তু চিকিৎসার খরচ চালানো আর সম্ভব নয়। দরিদ্র এই পরিবার এখন তাকিয়ে আছে সমাজের সহৃদয় মানুষের দিকে।

স্থানীয়রা ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের এ সহায়তাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ সমাজে বড় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাসলিমার মতো অসহায় শিশুদের পাশে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত।

সহযোগিতা করতে চাইলে
তাসলিমার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে এই নম্বরে- ০১৭৯১৭৩৬৬০৫ (বিকাশ/নগদ)। এ ছাড়া যে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সাহায্য পাঠানো যাবে সেটি হলো, সোনালী ব্যাংক, গাবতলী শাখা, অ্যাকাউন্ট নম্বর- ০৬১৩০০১০৩৫৭২৭।

• জুয়েল হাসান/এটিআর