টাইফয়েড টিকা কার্ড পেতে জন্মনিবন্ধনের ওটিপি সংকট
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৪৯
গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর
আগামী ১২ অক্টোবর থেকে সারাদেশে শুরু হচ্ছে টাইফয়েড টিকার কার্যক্রম। তবে জন্ম নিবন্ধন না থাকলে শিশু এই টিকা পাবে না। একদিকে টিকা নেওয়ার চাপ, অন্যদিকে জন্ম নিবন্ধন করতে গিয়ে অনলাইন সেবায় ভোগান্তি— সব মিলিয়ে বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকরা। ডিজিটাল সেবার নামে চলছে প্রহসন, বাধ্য হয়ে দোকানদারদের কাছে দিতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
জন্ম নিবন্ধন আবেদন প্রক্রিয়া নাগরিকদের জন্য একটি মৌলিক সেবা। কিন্তু বাস্তবে এটি এখন এক বিশাল যন্ত্রণার নাম। ডিজিটাল সেবার কথা বলে সহজ আবেদন ব্যবস্থা চালুর ঘোষণা বহু আগেই এসেছে, তবে বর্তমানে তা রূপ নিয়েছে অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের চূড়ান্ত উদাহরণে। জন্ম নিবন্ধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে গেলেই বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ওয়েবসাইটের ওটিপি ব্যবস্থা। নাগরিকরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড পাচ্ছেন না। সিস্টেম বারবার হ্যাং করে, আবেদন সম্পন্ন হচ্ছে না। এর ফলে সাধারণ মানুষ বাধ্য হন বেসরকারি দোকান বা এজেন্টদের দ্বারস্থ হতে।
আরও পড়ুন : টাইফয়েড টিকা শতভাগ নিশ্চিতের নির্দেশ স্বাস্থ্য উপদেষ্টার
ঢাকার রূপগঞ্জের বাসিন্দা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার সন্তানের জন্মনিবন্ধনের জন্য ওয়েবসাইটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেছি, ওটিপি আসেনি। শেষমেশ বাধ্য হয়ে ৩৫০ টাকা দিয়ে বাসার পাশের দোকান থেকে আবেদন করেছি।’
এই চিত্র শুধু ঢাকায় নয়, দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত এলাকাতেও একই। দোকানদাররা সুযোগ নিচ্ছেন— আবেদনপ্রতি নিচ্ছেন ২০০ থেকে ১,০০০ টাকা। অথচ এটি একটি ফ্রি সরকারি সেবা।
একই সমস্যার ভুক্তভোগী হয়েছেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকার নুর মজুমদার। তিনি তার দুই সন্তানের জন্য গত কয়েকদিন ধরে ওয়েবসাইটে আবেদন করতে গিয়েও ওটিপি সংকটের কারণে আবেদন সম্পন্ন করতে পারেননি। দোকানে কথা বললে তাকে জানানো হয়, শুধুমাত্র আবেদনের জন্য দিতে হবে ২০০ টাকা। আবার জন্মনি বন্ধন করালে দিতে হবে ১,০০০ টাকা। সারাদেশেই একই অবস্থা বিরাজ করছে।
কেবল ওয়েবসাইটের সমস্যা নয়। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা কিংবা সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়েও সঠিক সেবা পাওয়া যায় না। আবেদন করতে গেলে প্রয়োজন ছাড়াও নানা কাগজ চাওয়া হচ্ছে। অফ দ্য রেকর্ড কিছু দিতে বলা হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অফিসে গেলে বলা হয়, ‘সাইট কাজ করছে না, পরে আসতে হবে।’ আবার ফর্ম জমা দিয়েও মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়— কোনও উত্তর পাওয়া যায় না।
১২ অক্টোবর থেকে সারা দেশে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের টাইফয়েড টিকা প্রদান করবে সরকার। তবে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে— জন্মনিবন্ধন না থাকলে টিকা মিলবে না। এতে বিপাকে পড়েছেন লাখো অভিভাবক, বিশেষ করে যাদের শিশুদের জন্মনিবন্ধন এখনও হয়নি। জরুরি প্রয়োজনে আবেদন করলেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি। ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রার জেনারেল বা উপ-রেজিস্ট্রার জেনারেলের কোনো ফোন নম্বর পাওয়া যায়নি। যাদের নম্বর পাওয়া গেছে, তারাও ফোন রিসিভ করেননি।
সরকারি এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি সেবায় যখন এত অনিয়ম ও সিস্টেম ত্রুটি চলছে, তখন দায়িত্বপ্রাপ্তদের নীরবতা উদ্বেগজনক।
রফিকুল ইসলাম ও নুর মজুমদারসহ একাধিক ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলছেন, অনলাইন সেবায় ওটিপি সমস্যার দ্রুত সমাধান, জন্মনিবন্ধন আবেদন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, স্থানীয় কার্যালয়গুলোতে সেবা নিশ্চিতে তদারকি এবং ফ্রি সরকারি সেবায় দোকানদারদের বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে।
এমএইচএস


