Logo

লাইফস্টাইল

মালদ্বীপ : শব্দহীন রাস্তাঘাট আর শৃঙ্খল জীবনের স্মৃতিচিহ্ন

Icon

কামরুল ইসলাম মাহি

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ১২:১৬

মালদ্বীপ : শব্দহীন রাস্তাঘাট আর শৃঙ্খল জীবনের স্মৃতিচিহ্ন

নিশ্ছিদ্র নীল জলরাশি, সাদা বালির সমুদ্রতট আর সারি সারি খেজুর-নারকেল গাছ—এ যেন স্বর্গের এক খণ্ড। মালদ্বীপের মাফুশি দ্বীপে অবস্থিত কানি বিচে দাঁড়িয়ে লেখক দেখছেন স্রষ্টার নিপুণ মুনশিয়ানা | ছবি : লেখক

পেশাগত ব্যস্ততার মাঝেও একটুখানি প্রশান্তির খোঁজে ছুটে গিয়েছিলাম মালদ্বীপে। সময় অল্প, কিন্তু অভিজ্ঞতা ছিল গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী। একটি দেশের পরিবেশ, মানুষ আর নীতিনিষ্ঠ আচরণ কতটা সুন্দর হতে পারে—তা চোখে দেখেছি।

মালদ্বীপ— বারোশ ছোট প্রবাল দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি ইউনিক দেশ। মহাসাগরে ছড়িয়ে থাকা দ্বীপগুলোর মধ্যে মাত্র ২০০টিতে মানুষের বসবাস। এর মাঝেই সুশৃঙ্খল এক দ্বীপজীবন গড়ে তুলেছে মানুষ।

ভ্রমণের শুরু সিলেট থেকে। রাত ১টার বাসে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা। যানজট আর ভাঙাচোরা রাস্তা পেরিয়ে সকাল ৭টায় পৌঁছাই উত্তরায়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢুকে বোর্ডিং পাস হাতে নিয়ে ইমিগ্রেশন পেরোতে সময় লেগেছিল মাত্র দুই মিনিটি। মালদ্বীপে পৌঁছেও ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চার মিনিটেই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

সেখানকার ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা প্রথমেই আমার পাসপোর্ট হাতে নিয়ে পেশা জানতে চাইলেন। সাংবাদিক পরিচয় শুনে অফিসের এনোসি দেখতে চাইলেন। রিটার্ন টিকিট, সঙ্গে কত ডলার তা জিজ্ঞেস করলেন। দ্রুত সব প্রক্রিয়া শেষ হলো।

ভ্রমণের কাগজপত্র যাচাইয়ের সময় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার ভদ্রতা ও পেশাদারত্ব ভ্রমণের প্রথম ধাপ সহজ করে দিয়েছিল। তবে, সবচেয়ে বিস্মিত হয়েছিলাম ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নান্দনিকতা দেখে। সাগরের ঢেউ ছুঁয়ে থাকা রানওয়েতে অবতরণ—এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।

মালে শহরের সড়কজুড়ে পার্কিং করে রাখা শত শত স্কুটি | ছবি : লেখক

শব্দহীন শহর
বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে প্রথম গন্তব্য হুলেহুলেমালে শহর। ছোট-নিরিবিলি দ্বীপ শহরটি সাজানো হয়েছে আধুনিক পরিকল্পনায়। নারিকেল গাছ আর সমুদ্রবাতাসে ঘেরা শহরটিতে পরিবহনব্যবস্থা দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারিনি। স্কুটি এখানকার প্রধান বাহন। পুরুষ-নারী সবাই সমানভাবে চালান। নেই হর্ন, নেই চিৎকার। পুরো শহর যেন শব্দহীন এক সভ্যতার প্রতীক। এই শহরেই দেখা হয় কিছু প্রবাসী বাংলাদেশির সঙ্গে। প্রবাসে তাদের আন্তরিকতা কিছুটা হলেও দেশের গন্ধ এনে দেয়।

রাজধানী মালে শহরের ঐতিহাসিক মসজিদ-আল-সুলতান মুহাম্মদ তাকুরুফানু আল আউযাম। ১৯৮৪ সালের নভেম্বরে রাষ্ট্রপতি মামুন আব্দুল গাইয়ুম এই মসজিদ নির্মাণ করেন | ছবি : লেখক
মালা রিপাবলিক স্কয়ার | ছবি : লেখক

অন্য এক রাজধানীজীবন
ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন গেল রাজধানী মালেতে। রাষ্ট্রপতি ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পুলিশ সদর দপ্তরের মতো প্রশাসনিক এলাকাগুলো খুবই গোছানো। জনসংখ্যার ঘনত্ব থাকা সত্ত্বেও শহরটি পরিচ্ছন্ন। মানুষ শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনযাপন করছে। সবচেয়ে মুগ্ধ হই মালদ্বীপের জাতীয় মসজিদ ‘হুকুরু মিস্কি’ দেখে। শত শত বছরের পুরোনো এই মসজিদ কেবল ধর্মীয় স্থান নয়, এটি ইতিহাস আর সংস্কৃতির জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। পাশাপাশি মনে পড়ে ঢাকার কথা। ঢাকাও তো জনবহুল, জায়গা সংকট সেখানে কম নয়। কিন্তু পার্থক্য শৃঙ্খলা ও নাগরিক দায়িত্ববোধে।

একান্ত নিজের জন্য একটি দিন
তৃতীয় দিনটা রেখেছিলাম শুধুই নিজের জন্য। সমুদ্রের ধারে বসে, ঢেউয়ের শব্দ আর নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে সময় কাটাই আত্মমগ্নভাবে। বিকেলে ঘুরে দেখি কিছু পর্যটন স্পট। প্রত্যেকটিতে প্রকৃতি নিজেকে সাজিয়েছে রঙে-রূপে। রাত ১১টায় হোটেল থেকে বের হয়ে শহরের রাস্তায় হাঁটি। রাত ১২টাতেও শহর সরব, জমজমাট। ছেলেমেয়েরা আড্ডা দিচ্ছে, হেঁটে বেড়াচ্ছে। শহরের এই নিরাপত্তা ও স্বস্তি দেখে আবারও মনে পড়ে আমাদের ঢাকা কিংবা অন্যান্য বিভাগীয় শহরের কথা, যেখানে রাত ১২টা মানেই আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তা।

ফিরে এসে যা রয়ে গেল
সংক্ষিপ্ত এই সফরে অনেক কিছু শিখেছি, উপলব্ধি করেছি। মালদ্বীপের পরিচ্ছন্নতা, নাগরিক শৃঙ্খলা, সংস্কৃতি এবং প্রশাসনিক দক্ষতা হৃদয়ে গেঁথে গেছে। ফিরে এসেও মন পড়ে থাকে সেই নীরব দ্বীপে। সময় ও সুযোগ হলে আপনিও ঘুরে আসুন। দেখে আসুন সুন্দরের রাজধানী।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী

  • এটিআর
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর