রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে অন্তত ছয়জন নিহত এবং ছয় শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ছবি : বাংলাদেশের খবর
রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে অন্তত ছয়জন নিহত এবং ছয় শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে অনেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ ভূমিকম্পে রাজধানীসহ দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে শক্তিশালী এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.৭ এবং কেন্দ্রস্থল ছিল নরসিংদীর ঘোড়াশাল।
ভূমিকম্পের প্রভাবে পুরান ঢাকার বংশাল এলাকায় তিনজন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এক শিশু এবং নরসিংদীতে এক শিশু ও এক বৃদ্ধ মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, হতাহতদের চিকিৎসায় দেশের সব হাসপাতালে জরুরি মেডিকেল টিম কাজ করছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিস্থিতি সরাসরি মনিটর করছে।
দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. মঈনুল আহসান জানান, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজন মারা গেছেন।
পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন বলেন, ভূমিকম্পের সময় পুরান ঢাকার কসাইটুলি এলাকার একটি ভবনের রেলিং ধসে পড়ে তিনজন ঘটনাস্থলে নিহত হন। তারা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে সকালে নিহত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভূমিকম্পে সড়কের পাশের একটি পুরোনো দেয়াল ধসে ফাতেমা নামের কয়েকদিন বয়সী এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় নবজাতকের মা কুলসুম বেগম (২৫) ও প্রতিবেশী জেসমিন বেগম (৩০) গুরুতর আহত হয়েছেন। চিকিৎসকদের মতে, দু’জনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। তবে চিকিৎসা চলছে।
ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোখলেসুর রহমান বলেন, ভূমিকম্পের সময় দেয়াল ধসের ঘটনায় এক নবজাতক মারা গেছে। এতে আহত দুই নারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নরসিংদীতে ভূমিকম্পে আহত দুইজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ৬৭ জন আহত ব্যক্তি এখন পর্যন্ত নরসিংদী মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন।
নরসিংদী মেডিকেলের বরাত দিয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় সাংবাদিক আইয়ুব খান সরকার। তিনি জানান, জেলার গাবতলী এলাকায় নির্মাণাধীন ভবন থেকে ইট পড়ে একই পরিবারের ছয়জন আহত হন। এর মধ্যে গুরুতর আহত দুই জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওমর মিয়া নামে একজনের মৃত্যু হয়।
এছাড়া নরসিংদীর পলাশে ভূমিকম্পের সময় মাটির দেয়াল ধসে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান স্থানীয় প্রশাসন।
এদিকে, গাজীপুরের শ্রীপুরে ভূমিকম্পের সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় সিঁড়িতে হুড়োহুড়িতে ‘ডেনিম্যাক’ নামের একটি পোশাক কারখানার পাঁচ শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। শ্রীপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কেওয়া পূর্ব খণ্ড গারো পাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকরা দ্রুত ভবন থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে সিঁড়ি ও কারখানার গেট এলাকায় প্রচণ্ড ভিড়ের সৃষ্টি হয়। ধাক্কাধাক্কি, পড়ে যাওয়া ও চাপাচাপির কারণে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক আহত হন।
আহতদের মধ্যে চার শতাধিক শ্রমিক শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৩০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরও ২০ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মামুনুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শ্রীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চার শতাধিক শ্রমিক চিকিৎসা নিতে এসেছে। তারা সবাই আতঙ্কে দ্রুত নিচে নামতে গিয়ে আহত হয়েছে।’
শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মাহমুদুল হাসান জানান, ভবনের কোনো কাঠামোগত ক্ষতি বা নিহতের খবর পাওয়া যায়নি। আতঙ্ক ও অসচেতনতার কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে।
এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে ভূমিকম্পে তিনজনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় আহত হয়ে এখন পর্যন্ত ২০৮ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।
ডিআর/এমবি

