
সমাজে আমরা বিভিন্ন ধরণের মানুষ দেখতে পাই। তাদের মধ্যে কেউ সৎ, কেউ অন্যায়প্রবণ। কিন্তু সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো দ্বিচারী ব্যক্তি, যার কাছে একই বিষয়ে নিজের জন্য এক নিয়ম, অন্যের জন্য আরেক নিয়ম। আমরা অনেক সময় কাউকে মারাত্মক খারাপ বর্ণনা করতে গিয়ে দ্বিচারী বা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড কথাটা বলে থাকি। এরা তাদের দুষ্টু বুদ্ধি বা যুক্তির মাধ্যমে সরল মানুষের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে থাকে, বিশ্বাসঘাতকতা করে থাকে, সামাজিক সম্পর্ক ও প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে। দ্বিচারী ব্যক্তির কয়েকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টা আরও পরিষ্কার হবে।
এক মাংস বিক্রেতা যখন নিজে মাংস বিক্রি করে, তখন মাংসে পানি মিশিয়ে ওজন বাড়ায় এবং ক্রেতাদের ঠকিয়ে থাকে। আর নিজের বিক্রি শেষ হয়ে গেলে, তখন সেই একই লোক অন্য মাংস বিক্রেতাদের উদ্দেশ্যে বলে- যারা মাংসে পানি মিশিয়ে বিক্রি করে, তাদের কোনো নীতি আদর্শ নেই।
আপনি যখন চোর ধরেন, তখন ঘোষণা দেন যে, চুরি করা মহাপাপ, চুরি করলে হাত কেটে দেওয়া উচিত ইত্যাদি। আবার আপনি যখন সুযোগ পাচ্ছেন, তখন নিজেই চুরি করছেন। চুরি করা যে অন্যায় কিংবা অন্যের বেলায় যে ছবক দিয়েছেন, সেটা নিজে চুরি করার সময় বেমালুম ভুলে যান।
আপনার বোনের সাথে কেউ প্রেম করলে, সে অপরাধ করেছে, অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ। আর আপনি অন্যের বোনের সাথে প্রেম করলে, আপনি একজন মহান প্রেমিক, তখন প্রেম শাশ্বত।
এলাকার একটা মেধাবী ছেলে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকার স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করার সুযোগ পেয়েছে। আপনি জানতে পেরে বললেন যে, এসব লেখাপড়া করে জীবনে কোন পরিবর্তন হবেনা, দেশের কোন উপকারে আসবে না। অথচ আপনি নিজেই দীর্ঘদিন এশিয়ার মধ্যে মধ্যম-সারির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
যখন কেউ তার পিতা মাতার সেবা-যত্ন করে না, খোঁজ নেয় না, তখন আপনার মতে সেই সন্তান কুলাঙ্গার। আর আপনি যখন নিজের পিতা মাতার খোঁজ নেন না, তখন তা কাজের ব্যস্ততা, আর্থিক সমস্যাসহ নানা সমস্যার অজুহাত হাজির করে থাকেন।
একজন বস কর্মচারীদের জন্য কঠোর নিয়ম মানেন কিন্তু নিজের বা ঘনিষ্ঠ সহকর্মীর ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানেন না। যেমন, অন্য কাউকে দেরিতে আসার জন্য শাস্তি দেওয়া হয়, কিন্তু নিজের পছন্দের কর্মচারী দেরিতে এলে চোখে দেখেন না।
দ্বিচারী ব্যক্তিদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো লুকিয়ে রাখা স্বার্থপরতা। তারা নিজের সুবিধার জন্য সত্য ও ন্যায়ের নিয়মকে বিকৃত করে। এরা মারাত্মক পরশ্রীকাতর হয়ে থাকে এবং নিজেদের প্রয়োজন বিবেচনা করে একই বিষয়ের বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা দাঁড় করায়। এদের কোন ব্যক্তিত্ব থাকে না।
এজন্য, সতর্কতার সাথে এই ধরণের ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে হবে। কারণ দ্বিচারী ব্যক্তি বিপজ্জনক। তারা সমাজ, সম্পর্ক এবং ব্যক্তিগত জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই এদের থেকে দূরে থেকে ও সচেতনতা অবলম্বন করে নিজেদের এবং চারপাশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।
লেখক : যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক
- বাংলাদেশের খবরের মতামত বিভাগে লেখা পাঠান এই মেইলে- bkeditorial247@gmail.com