Logo

বিশেষ সংবাদ

ভোটের নেই দৃশ্যমান তৎপরতা

রাজনৈতিক দলগুলোয় স্বস্তি-সংশয়

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ০৯:৪০

রাজনৈতিক দলগুলোয় স্বস্তি-সংশয়

বিচার-সংস্কার ছাড়া নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না- এনসিপি

ভোট যেন আওয়ামী লীগ আমলের মতো না হয়- জামায়াত

নির্বাচন নিয়ে সরকারের ঘোষণা অত্যন্ত ইতিবাচক- বিএনপি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলে হতে যাচ্ছে। এমন ধারণায় রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মতো করে কাজ করছে। তবে লেভেল প্লেইং ফিল্ড এবং জুলাই সনদ ও গণহত্যার বিচার ইস্যুতে দ্বিমত এখন চরমে পৌছেছে। নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক প্রস্তুতিগুলো আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এ নির্দেশ দেওয়ার পর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে যে সংশয় তৈরি হয়েছিল তা অনেকটাই কেটে গেছে। তবে বিচার-সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের পরিকল্পনা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে কোনো কোনো দল।

গতকাল যশোরের খেজুর চত্বর এলাকায় এক পথসভায় দেওয়া বক্তব্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বিচার আর সংস্কার ছাড়া নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণ মেনে নেবে না। যারা বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের পরিকল্পনা করে তারাই নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। নির্বাচন ও ভোটাধিকারের পক্ষে গণঅভ্যুত্থানের তরুণ নেতৃত্বরাই লড়াই করে যাচ্ছে। সরকারের দেওয়া ভোটের সময়সীমার ওপর জামায়াতে ইসলামী আস্থাশীল বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তবে এই ভোট যেন আওয়ামী লীগ আমলের মতো না হয়, সে নিশ্চয়তা চায় দলটি। অন্যদিকে, এ বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গত বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করেন। বৈঠকে নির্বাচনের নানা প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়। 

বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলে হবে। এর অর্থ হলো, নির্বাচনের জন্য যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দরকার, সেটি প্রস্তুত করতে যা কিছু প্রয়োজন, তা এখনই শুরু করতে হবে। প্রেস সচিব বলেন, এ জন্য সব প্রস্তুতি, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক প্রস্তুতিগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে নতুন নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ এ সময়ের মধ্যে শেষ করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সরকারের ঘোষণা কিংবা সিদ্ধান্ত অবশ্যই ইতিবাচক। এখন দেখতে হবে এটা কতটুকু বাস্তবায়ন করা হয়।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, অবশ্যই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। সংস্কার এবং বিচারের অগ্রগতিও করতে হবে নির্বাচনের আগে।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, নির্বাচনকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা দিতে সক্ষম কী না-তা নিশ্চিত করতে হয়। এ ছাড়া কীভাবে নির্বাচন হবে? প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের কথায় নির্বাচন দিয়ে চলে যেতে চাইছেন। শুধু নির্বাচন দেওয়ার জন্য কিংবা তার মামলা খালাসের জন্য তাকে বসানো হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কার করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, কিছুদিন ধরে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা রকম আলোচনা চলছে। এর মধ্যে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। সংস্কার, জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতির প্রক্রিয়ার কথা জানায় সরকার। এর মধ্য দিয়ে বিএনপিসহ সংশয়ে পড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে এই বার্তা দেওয়া হলো যে সরকার নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। সরকারের দিক থেকে এ ঘোষণায় নির্বাচন ফেব্রুয়ারির মধ্যে হওয়া নিয়ে সংশয়ে থাকা দলগুলোয় স্বস্তি ফিরেছে, বিশেষ করে বিএনপিতে। কারণ, গত জুনে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা দেওয়া হয় যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে আগামী বছরের পবিত্র রমজান মাসের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে।

এ ঘোষণার পর অনেক দিন পার হয়ে গেলেও নির্বাচন নিয়ে সরকারের দিক থেকে কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছিল না। এর মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন সাক্ষাৎ করেন। তারা দীর্ঘ সময় একান্তে কথা বলেন। কিন্তু এই সাক্ষাতে নির্বাচনের সময় নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কোনো কথা হয়নি বলে পরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন সিইসি।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। বক্তব্যে মির্জা ফখরুল প্রস্তুতি শেষ হওয়া সাপেক্ষে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে সরকারের তরফ থেকে যে বার্তা এসেছে, সে জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, আমি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ দিতে চাই এই ফোরাম থেকে যে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব কাজ গুছিয়ে রাখার জন্য নির্বাচন কমিশনকে, এটা অত্যন্ত ইতিবাচক ব্যাপার।

অন্যদিকে সরকারের দেওয়া ভোটের সময়সীমার ওপর জামায়াত আস্থাশীল বলে জানান মিয়া গোলাম পরওয়ার। তবে এই ভোট যেন আওয়ামী লীগ আমলের মতো না হয়, সে নিশ্চয়তা চেয়েছেন তিনি। তিনি এ-ও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যেতে চাইছি। কিন্তু বারবার একটি অপশক্তি সেই পথে বাধার সৃষ্টি করছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে বলছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলে হবে-প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণা নতুন কিছু নয়।

গত পবিত্র ঈদুল আজহার আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণেও তিনি এ কথাই বলেছিলেন। তবে লন্ডন বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সব প্রস্তুতি শেষ করা গেলে ২০২৬ সালে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও (ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে) নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে। সেই শর্তগুলো এখনো বহাল রয়েছে এবং রাজনৈতিক পক্ষগুলো এসব বিষয়ের ব্যাপারে তৎপর রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, এনসিপি নির্বাচনের আগে জুলাই ঘোষণাপত্র ও মৌলিক সংস্কারের জুলাই সনদ দেখতে চায়। এ ছাড়া জুলাই গণহত্যার বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতিও আমরা দেখতে চাই। এর আগে আমরা নির্বাচনের বিষয়ে ভাবছি না। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ হয় এবং বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি সম্ভব হয়, তাহলে নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।

এমবি 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর