Logo

বিশেষ সংবাদ

নাহিদের স্ট্যাটাস

রাজনীতিতে আলোচনা, বিতর্ক, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে বাড়ছে অস্থিরতা

নুর মোহাম্মদ মিঠু

নুর মোহাম্মদ মিঠু

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৫, ২১:৪৮

রাজনীতিতে আলোচনা, বিতর্ক, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে বাড়ছে অস্থিরতা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

৩১ জুলাই, বৃহস্পতিবার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। যার বক্তব্যে উঠে আসে অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী জাতীয় সরকার গঠনে নেপথ্যের ঘটনাপ্রবাহ। যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে। এরপর থেকেই শুরু হয় তীব্র বিতর্ক। কে ছিল আসলে সেই সময়কার নেতৃত্বে। কারা রাজনৈতিক মঞ্চের পেছন থেকে করছিল টানাটানি এবং সত্যিই কী বিএনপি জাতীয় সরকার চায়নি?

নাহিদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে সবচেয়ে জোরালো দাবি, জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব তাদের পক্ষ থেকেই প্রথম আসে। যা সরাসরি দেওয়া হয়েছিল বিএনপিকে। সেই প্রস্তাবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘প্রধান উপদেষ্টা’ করার কথা বলা হয়। কিন্তু তার বক্তব্য অনুযায়ী, বিএনপি সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি, বরং সরাসরি বিরোধিতা করে। 

স্ট্যাটাসে নাহিদ লিখেন, আমরা ৫ আগস্ট রাতেই বিবৃতি দিয়েছিলাম। যেখানে ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান করার কথা বলেছিলাম। সে রাতেই তারেক রহমান একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দেন এবং জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব নাকচ করে দেন। যদিও নাহিদের এ বক্তব্য সরাসরি সাংঘর্ষিক বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের সঙ্গে। তিনি গত সপ্তাহেই বলেছিলেন, জাতীয় সরকারের কোনো প্রস্তাব ছাত্রদের কাছ থেকে আসেনি।

নাহিদের পাল্টা অভিযোগ, ফখরুল সাহেব আজ মিথ্যা বলছেন। ইতিহাস বিকৃতি করলে দায় নিতে হবে। তবে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশের খবর-এর কাছে নাহিদের দাবি সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, নাহিদ যা বলছে, সেটা সত্য নয়।

নাহিদের স্ট্যাটাসের আরেক আলোচিত অংশ—জুলাই অভ্যুত্থানে শিবিরের ‘ভূমিকা’ নিয়ে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা সাদিক কায়েম দাবি করেছিলেন, সেই আন্দোলনে তাদের ‘নেতৃত্ব’ ছিল বা অন্তত তার নির্দেশে মাঠপর্যায়ে কাজ হচ্ছিল। কিন্তু নাহিদের ভাষায়, সহযোগিতা থাকলেও তারা নেতৃত্বে ছিল না। তারা ছাত্রশক্তির কেউ না। বরং তারা ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে চেয়েছিল।

এ বক্তব্যের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় ‘কে আসলে নেতৃত্বে ছিল’ তা নিয়ে প্রবল বিতর্ক। কেউ বলছেন, নাহিদরা মূল পরিকল্পনায় ছিলেন। কেউ আবার দাবি করছেন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্রঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে ঘটেছিল অভ্যুত্থান। এ নিয়ে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন দলটির নেতাকর্মীদের বিভিন্ন সমালোচনানির্ভর লেখালেখিতে বিতর্কের ঝড় উঠছে। কেউ কেউ গত জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থান চলাকালীন সময়ে তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন।

নাহিদের বক্তব্যের বিরোধিতা করে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী কিংবা সমর্থকরা ফেসবুকে বলছেন, মাইক, খাবার, পানি কোথায় থেকে এসেছিল সেসময়। এসব খবর যার জানা নেই—সাদিক কায়েমের ভূমিকার বিষয়ে কী জানবে তারা। এমন নানা সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠছে ফেসবুক। যেখানে কমেন্টস বক্সে নানা নেতিবাচক মন্তব্যও করতে দেখা গেছে নেটিজেনদের।

তবে জানতে চাইলে সাদিক কায়েম বলেন, আমি তখন সম্ভাব্য সব অংশীদার, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ রেখেছিলাম। আমার ভূমিকা কমবেশি সবারই জানা। আমার মতে, নাহিদ ইসলাম এসব কথাবার্তা বলে নিজেই নিজের ক্ষতি করছেন।

শুধু মির্জা ফখরুল কিংবা সাদিক কায়েম নয়, নাহিদ তার স্ট্যাটাসে আরও একটি ভয়াবহ অভিযোগ করেন প্রবাসী সাংবাদিক ও জুলাই অভ্যুত্থান সৃষ্টির অন্যতম অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট জুলকারনাইন সায়েরের বিরুদ্ধেও।

গত ২ আগস্ট রাতে সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের ও তার কয়েকজন সহযোগী ‘একটি সেনা ক্যু’ চালাতে চেয়েছিলেন—এমন অভিযোগ তুলে নাহিদ লিখেন, আমাদের একসঙ্গে একটি সেফ হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। চাপ দেওয়া হয়েছিল ‘একদফা’ দাবি করতে। আমরা জানতাম, এটি এক ধরনের সামরিক হস্তক্ষেপের চেষ্টা।

এ অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন জুলকারনাইন সায়ের। তিনি বলেন, এটা মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হাস্যকর। কেউ সেনা ক্যু করানোর কথা বললে তার প্রমাণ থাকা উচিত।

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে বলছেন, সাংবাদিকদের একটি অংশ ‘ছাত্রদের কাঁধে ভর করে’ অভ্যুত্থানকে নিয়ন্ত্রণে নিতে চেয়েছিল। অন্যদিকে ছাত্রনেতারা এ ধরনের যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছিল।

নাহিদের স্ট্যাটাস ঘিরে এখন পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি টকশো, পডকাস্ট ও ইউটিউব চ্যানেলে একটাই প্রশ্ন ঘুরেছে—জাতীয় সরকার গঠনের চেষ্টা প্রকৃতপক্ষে কে করেছিল? টুইটার (বর্তমান এক্স), ফেসবুক ও রেডিটভিত্তিক পলিটিক্যাল ফোরামগুলোতেও দেখা গেছে বিভক্ত মত।

বিএনপিপন্থি বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব হচ্ছে এখন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো। বিএনপি দায়িত্ব নিয়ে সরকার গঠন করেছে। অন্যদিকে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের এক নেতা বলছেন, তারেক রহমান বরাবরই ইউনূসের নামে খিঁচে ছিলেন। মূলত ছাত্রদের প্রস্তাব ছিল খুবই স্পষ্ট। সেটি খারিজ করা ইতিহাস বিকৃতি।

এখন রাজনীতি ও এর বাইরে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের ইতিহাসে কারা স্থান পাবে ‘মূল নেতৃত্ব’ হিসেবে? যারা মাঠে ছিল? নাকি যারা পরে এসে তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে?

যদিও নাহিদ তার স্ট্যাটাসের শেষাংশে এও লিখেন, ৫ আগস্ট পতন নিশ্চিত হলেও ষড়যন্ত্র তখনও থেমে ছিল না। অনেকেই রাজপথে আসেননি। কিন্তু টেলিভিশনের টকশোতে ছিলেন সারাক্ষণ।

এনএমএম/এমবি 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর