
বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা খন্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা হক্কারোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক নির্বাহী আদেশে নতুন এই শুদ্ধহার ঘোষণা করা হয়। সবশেষ বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে ৩৫ শতাংশ পাল্টা অঙ্কের কথা জানিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। সেই হিসাবে শুল্ক ১৫ শতাংশ কমিয়ে নতুন হার ঘোষণা করা হয়েছে।
ট্রাম্পের ওই নির্বাহী আদেশ হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। আদেশে বাংলাদেশ ছাড়াও কয়েক ডজন দেশের ওপর মার্কিন শুন্ধের হার তুলে ধরা হয়েছে। অন্য দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ, আফগানিস্তানের ওপর ১৫, ভারতের ওপর ২৫, ব্রাজিলের ওপর ১০, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯, মালয়েশিয়ার ওপর ১৯, মিয়ানমারের ওপর ৪০, ফিলিপাইনের ওপর ১৯, শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ ও ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছে ওয়াশিংটন। এদিকে বাংলাদেশি পশোর ওপর গুপ্তহার কমানোর ঘোষনায় দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
আমেরিকার শুষ্ক কমানোর ঘোষনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি লেখেন বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় দফার শুভ আলোচনা শেষ হওয়ার পর হোয়াইট হাউস থেকে স্টেটমেন্ট দিয়ে জানানো হয়-বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ অস্কারোপ করা হয়েছে। এর আগে এই শুদ্ধারোগ করা হয়েছিল ৩৭ শতাংশ। পরে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়।
প্রেস সচিব লেখেন, গতকাল চূড়ান্ত আলেয়না শেষে শুস্ক ২০ শতাংশের ঘোষণা এলো। শুল্ক আলোচনায় বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। বাণিজ্য উপদেষ্টা তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, দেশের ওপর ২০ শতাংশ শুঙ্কারোপ করায় আমরা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় থাকব। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে আমরা ২০ শতাংশের নিচে প্রত্যাশা করেছিলাম। রাজধানীর বেইলি রোডের বাতায় যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুষ্কয়ার কমানোয় এবা প্রতিক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো চুক্তি হয়নি, এই চুক্তি সরকারের জন্য একটি সফলতা।
শফিকুল আলম বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেসব চুক্তি হয়েছে, সেগুলো আসলে নব-ডিসক্লোজার (অপ্রকাশ্য)। অনেক কিছু জানলেও এখন বলা সম্ভব নয়। তবে দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে কোনো চুক্তি করা হয়নি, কোনো সামরিক চুক্তিও হয়নি। সরকারের জন্য একটি সফলতা।'
প্রেস সচিব বলেন, '২০ শতাংশ শুন্ধের সঙ্গে অন্য কোনো শর্ত দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। যতটুকু সম্ভব বিষয়গুলোকে সহজীকরণ করা হবে। প্রতিযোগিতামূলক রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কাছাকাছি শুল্ক থাকায় বানিজ্যের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকছি না। পাশাপাশি বাণিজ্য ঝুঁকিও কমে যাচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিও কমিয়ে আনার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তা আরও কমিয়ে আনা হবে।'
পাল্টা শুদ্ধ দিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছে। শুন্ধ কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে টানা তিন দিন আলোচনা করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। গত মঙ্গল ও বুধবারের পর বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের মতো আলোচনা করা হয়। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ শেখ বশিরউদ্দীন। এ ছাড়াও নাল ছিলেন।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী।
শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে বড় অনিশ্চয়তা থেকে রেহাই পেল বাংলাদেশ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ১ আগস্ট সময়সীমার আগেই বাংলাদেশের ওপর ধার্য করা পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ফেলার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে বাংলাদেশ বড় ধরনের একটি অনিশ্চয়তা থেকে রেহাই পেয়েছে।
তৃতীয় দফার আলোচনা শেষে ১৫ শতাংশ কমিয়ে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ২০ শতাংশ শুল্কারোপের প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশিংটন ডিসি থেকে খলিলুর রহমান গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন।
ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এই দলে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানও ছিলেন। সর্বশেষ বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের কথা জানিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। সে হিসেবে শুল্ক ১৫ শতাংশ কমিয়ে নতুন হার ঘোষণায় করা হলো।
খলিলুর রহমান বলেন, 'ট্রাম্প প্রশাসন ১ আগস্ট সময়সীমার আগেই বাংলাদেশের ওপর ধার্য করা শুল্ক কমিয়ে ফেলার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে আমরা বড় ধরনের একটি অনিশ্চয়তা থেকে রেহাই পেয়েছি। ওই সময়সীমার মধ্যে শুল্কসংক্রান্ত জটিল আলোচনা আমরা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছিলাম। তা না হলে আমরা এ সিদ্ধান্তটি পেতাম না; এবং গত এপ্রিলে ধার্য করা ৩৫ শতাংশ শুল্কের গুরুভার আমাদের বহন করে যেতে হতো।'
খলিলুর রহমান আরও বলেন, 'বাংলাদেশের ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছেন, যা আমাদের প্রধান প্রতিযোগী দেশগুলোর সমান অথবা যৎসামান্য বেশি; এবং ভারতের থেকে ৫ শতাংশ কম। সুতরাং আমেরিকার বাজারে আমাদের রপ্তানি পণ্য প্রতিযোগিতামূলক থাকবে। তৈরি পোশাকশিল্প ও এর ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষের জন্য এটি অত্যন্ত স্বস্তিকর ঘটনা।'
এর আগে, হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে শুক্রবার দেওয়া এক ঘোষণায় জানানো হয়, ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হচ্ছে। ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্কারোপ করা হয়েছে।
গত ২ এপ্রিল বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চ হারে পাল্টা শুল্কারোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়েছিল। পরে ৯ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর ওই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। এ সময় শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন দেশকে আলোচনার সুযোগ দেয় ওয়াশিংটন।
যুক্তরাষ্ট্রের তিন মাসের সময়সীমা গত ৯ জুলাই শেষ হয়। এর আগের দিন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়ে ট্রাম্প জানান, বাংলাদেশের পাল্টা শুল্ক ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। যদিও ৯ জুলাইয়ের পর পাল্টা শুল্ক কার্যকর করেনি মার্কিন প্রশাসন। শুল্কের হার কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তির জন্য ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন দেশকে সময় দেওয়া হয়।
সেই সময়সীমা শেষে গতকাল শুক্রবার থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা। সে হিসাবে গতকাল থেকে বাংলাদেশকে বর্তমানের গড় ১৫ শতাংশ ও নতুন পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ, অর্থাৎ মোট ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করতে হবে। তবে বিবিসির খবরে জানা গেছে কানাডা বাদে ৭ আগস্ট থেকে সব দেশে নতুন এই শুল্ক কার্যকর হবে।
এমবি