Logo

বিশেষ সংবাদ

১৩ বছর পরে ঢাকায় পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী : সই হচ্ছে সাত চুক্তি ও সমঝোতা

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৫, ০৯:১৭

১৩ বছর পরে ঢাকায় পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী : সই হচ্ছে সাত চুক্তি ও সমঝোতা

পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিনেটর মোহাম্মদ ইসহাক দার দুই দিনের সফরে এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। গতকাল শনিবার বেলা ২টায় বিশেষ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন তিনি। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ইসহাক দারকে নিয়ে পাকিস্তানের মন্ত্রিসভার তৃতীয় সদস্য ঢাকায় এলেন। গত জুলাইয়ে ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভী। আর গত বুধবার ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান।

এটি বাংলাদেশ-পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। এর আগে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হলেও তা হয়েছে কোনো অন্য বৈঠকের ফাঁকে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি পারভেজ মোশাররফের ঢাকা সফরের সময় উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল। তবে এবারই প্রথম শুধু দ্বিপাক্ষিক বৈঠককে কেন্দ্র করে ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দার। ঢাকা সফরে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনসহ বিভিন্ন নেতার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করার কথা রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা তার।

গতকাল শনিবার বিকেলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে অভ্যর্থনার আয়োজন করে ঢাকায় দেশটির হাইকমিশন। এর ফাঁকে বাংলাদেশের শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করার কথা ইসহাক দারের।

গতকালই সফররত পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকাস্থ পাকিস্তান দূতাবাসে এ বৈঠক শুরু হয় বলে বিএনপির মিডিয়া সেল সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।

প্রতিনিধিদলে থাকা অন্য সদস্যরা হলেন, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।

এর আগে ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। গতকাল বিকেল পৌনে ৫টার পর ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনে বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব দেন দলের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।

জামায়াতের আগে ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতিনিধিদল। এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

সফরের দ্বিতীয় দিন আজ রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে প্রাতরাশ বৈঠক করবেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সকাল ১০টায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসার আগে তৌহিদ হোসেন ও ইসহাক দার একান্ত বৈঠক করবেন। এরপর প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। ইসহাক দার নিজ দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। আর বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

বৈঠকের পর ইসহাক দারের সফর উপলক্ষে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছে সরকার। বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপর তিনি বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ে বেশ কয়েকটি বৈঠকের কথা রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠককে কেন্দ্র করে ছয়-সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি রাখছে দুই দেশ। এর মধ্যে দুই দেশের কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি চুক্তি, সাংস্কৃতিক বিনিময় নিয়ে সমঝোতা, দুই দেশের ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির মধ্যে সমঝোতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে যৌথ গ্রুপ গঠন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সঙ্গে পাকিস্তানের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমঝোতা, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার মধ্যে সমঝোতা এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়েছে।

এ ছাড়া দুই দেশের পণ্য ও সেবার মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এবং কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়ে কাজ চলছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এটাই দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের প্রথম কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক হতে যাচ্ছে। এর আগে যত বৈঠক হয়েছে, সবই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। এমনও হয়েছে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অন্য কোনো উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ এসেছেন, ফাঁকে বৈঠক করেছেন। তবে শুধু পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেননি।

সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন বৈঠকে দুই দেশ সম্পর্কের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। তবে দুই দেশের বাণিজ্য বাড়ানো এবং আন্তঃসংযোগকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে বর্তমানে ঢাকা সফরে রয়েছেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী।

বৈঠককে কয়েকটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে রাজনৈতিক সহযোগিতা, অর্থনীতি এবং অন্যান্য সহযোগিতা নিয়ে আলাপ করবে দুই দেশ। এ ছাড়া আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করবে ঢাকা ও ইসলামাবাদ।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া, যুদ্ধের জন্য ক্ষতিপূরণ, বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, সম্পদের হিস্যা, ১৯৭০ সালে অবিভক্ত পাকিস্তানের ঘূর্ণিঝড়ের সময় দেওয়া বৈদেশিক সহায়তার পাওনা পরিশোধের মতো বিষয়গুলোর সুরাহা করা জরুরি বলে মনে করে ঢাকা। বিষয়গুলো বৈঠকে তুলে ধরবে বাংলাদেশ।

এর আগে ইসহাক দারের বৈঠককে কেন্দ্র করে গত ১৭ এপ্রিল দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়টি ইসলামাবাদকে জানিয়ে দিয়েছিল ঢাকা। গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এবং ডিসেম্বরে কায়রোতে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। কায়রোতে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, বিষয়গুলো বারবার আসছে। আসুন, আমরা সামনে এগিয়ে যেতে সেই বিষয়গুলোর ফয়সালা করি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিষয়গুলো চিরতরে সুরাহা করে ফেলা ভালো।

বৈঠকে আলোচনার বিষয়গুলো নিয়ে একজন কূটনীতিক বলেন, দুই দেশের প্রতিরক্ষা খাত, জঙ্গিবাদ দমন, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি, সার্ককে আবারও সচল করে তোলাসহ সার্বিক বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। দীর্ঘ সময় পরে দুই দেশের বৈঠক হতে যাচ্ছে। এটিকে সফল করতে চায় বাংলাদেশ।

আজ রোববার রাতে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের।

বিকেপি/এমবি 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর