
- পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক
- এক চুক্তি, পাঁচ সমঝোতা স্মারক সই
- একাত্তরের অমীমাংসিত ইস্যুর দুইবার সমাধান হয়েছে
একাত্তরে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়াসহ দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর চূড়ান্ত সমাধান এখনো হয়নি। এসব বিষয়ে সমাধানের প্রয়োজন রয়েছে এবং বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এসব বিষয়ে একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ঢাকায় পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদেব এসব জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। এদিকে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি চুক্তি ও চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে গতকাল দুপুরে উভয় দেশের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়।
এর আগে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। পাকিস্তানের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। ভিসা বিলোপ চুক্তি: দুই দেশের সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা বিলোপ চুক্তি সই হয়েছে।
সমঝোতা স্মারক সই হওয়া সমঝোতা স্মারকগুলো (এমওইউ) হলো- দুই দেশের বাণিজ্যবিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন। দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা। দুই দেশের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার (বাসস ও এপিপিসি) মধ্যে সহযোগিতা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সঙ্গে পাকিস্তানের ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইসলামাবাদের (আইএসএসআই) সহযোগিতা। অমীমাংসিত বিষয় সমাধানে বাংলাদেশ-পাকিস্তান একমত: একাত্তরে গণহত্যার জন্য
পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়াসহ দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর চূড়ান্ত সমাধান এখনো হয়নি জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, এসব বিষয়ে সমাধানের প্রয়োজন রয়েছে এবং বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এসব বিষয়ে একমত হয়েছে।
ঢাকায় পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব জানান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আপনারা নিশ্চয়ই আশা করেন না যে ৫৪ বছরের সমস্যা একদিনে মিটে যাবে। এটি ছিল গত ১২-১৩ বছর পর অনুষ্ঠিত প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠক, তাও আবার হিনা রব্বানী খার আমন্ত্রণে। এটি পূর্ণাঙ্গ দ্বিপক্ষীয় সফরও ছিল না।' তিনি আরও বলেন, 'এখানে বসে আমরা এক ঘণ্টায় সমাধান করে ফেলতে পারবো- এটা নিশ্চয়ই কেউ আশা করবেন না। তবে বৈঠকে আমরা পরস্পরের অবস্থান তুলে ধরেছি।'
একাত্তরের অমীমাংসিত ইস্যুর দুইবার সমাধান হয়েছে: রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর ইসহাক দার দাবি করেন, একাত্তরের গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়াসহ অমীমাংসিত তিন সমস্যার দুইবার সমাধান হয়েছে।
ইসহাক দার বলেন, 'অমীমাংসিত ইস্যু নিয়ে বলতে চাই, ১৯৭৪ সালে প্রথমবারের মতো বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়েছে। আর ওই সময়ের দলিলটি দুই দেশের জন্য ঐতিহাসিক। এরপর জেনারেল পারভেজ মোশাররফ এখানে (বাংলাদেশ) এসে প্রকাশ্যে এবং খোলামনে বিষয়টির সমাধান করেছেন। ফলে বিষয়টির দুইবার সমাধান হয়েছে। একবার ১৯৭৪-এ, আরেকবার ২০০০-এর শুরুতে।'
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া, যুদ্ধের জন্য ক্ষতিপূরণ, বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানির প্রত্যাবাসন, সম্পদের হিস্যা, ১৯৭০ সালে অবিভক্ত পাকিস্তানের ঘূর্ণিঝড়ের সময় দেওয়া বৈদেশিক সহায়তার পাওনা পরিশোধের মতো বিষয়গুলোর সুরাহা করা জরুরি বলে মনে করে ঢাকা। বৈঠকে এ বিষয়গুলো বাংলাদেশের তুলে ধরার কথা বলে জানা গেছে।
ইসহাক দার গত শনিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম। গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ইসহাক দারকে নিয়ে পাকিস্তানের মন্ত্রিসভার তৃতীয় সদস্য ঢাকায় এলেন। গত জুলাইয়ে ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভী। গত বুধবার এসেছেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান।
শনিবার বিকেলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে অভ্যর্থনার আয়োজন করে ঢাকায় দেশটির হাইকমিশন। এর ফাঁকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন ইসহাক দার।
বিকেপি/এমবি