Logo

বিশেষ সংবাদ

জাপা নিষিদ্ধের দাবির আড়ালে নয়া সমীকরণ

Icon

এম. ইসলাম

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:২৪

জাপা নিষিদ্ধের দাবির আড়ালে নয়া সমীকরণ
  • ফ্যাসিস্টের সহযোগিতাকারী দলটির বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ
  • ভোটে অংশ নিতে পারবে কিনা আশঙ্কা জাপা মহাসচিবের
  • জাপাকে নিষিদ্ধের বিষয়ে আইনি মতামত বিশ্লেষণ করছে সরকার
  • আওয়ামী লীগকে সহযোগিতাকারী জাপা কেন ভোটে আসবে -হামিদুর রহমান আযাদ
  • সরকার দলটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে অনেকে রাজপথে নামবে -আখতার হোসেন

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টিকে (জাপা) নিষিদ্ধের জোর দাবি তোলার নেপথ্যে রয়েছে দুটি বিশেষ কারণ বা নতুন সমীকরণ। প্রথমটি হচ্ছে-আওয়ামী লীগ ভোটে থাকছে না, তাই দলটির একটা অংশের ভোট জাপা পেতে পারে। ফলে, নিজস্ব ভোট ব্যাংক না থাকলেও আওয়ামী লীগের ভোটে অনেক দলের চেয়ে বেশি ভোট পেতে পারে জাপা। ফলে, পরবর্তীতে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতার মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে জাপা। অপরটি হচ্ছে- আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলেও দলটিকে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে সহযোগিতাকারী জাপার কেন বিচার হবে না?

দলটিকে শেষ পর্যন্ত ভোটের বাইরে রাখা হতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন খোদ জাপা মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

গত শুক্রবার জাপা নিষিদ্ধের দাবির কর্মসূচিতে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদ সভাপতি নুরুল হক নূরসহ দলটির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়। এ ঘটনার পর জাপা নিষিদ্ধের আলোচনা জোরালো হচ্ছে। দলটি নিষিদ্ধ ও আওয়ামী লীগের সহযোগিতাকারী হিসেবে জাপা নেতাদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি তুলেছে জামায়াত ইসলামী, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ ইসলামী দলগুলো। গত রোববার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জামায়াত ও এনসিপি নেতারা জাপা নিষিদ্ধের জোরালো দাবিও করেছেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বেশ চাপে পড়ে জাপা। কারণ, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয় দলটির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাচ্যুতির সময় দলটি 'তথাকথিত' বিরোধী দল ছিল। 

আওয়ামী লীগকে 'ফ্যাসিস্ট' হয়ে উঠার জন্য জাপার সহযোগিতা রয়েছে- এমন অভিযোগও রয়েছে। কারণ, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে জাপা আওয়ামী লীগের সরকারের অংশীজন। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতসহ বেশির ভাগ দল নির্বাচন বর্জন করলেও জাপা সেই ভোটে ছিল। ওই ভোটের পর নির্বাচনে দলটি একদিকে সরকারের আর অন্যদিকে বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিল। ২০১৮ ও ২০২৪-এর বিতর্কিত নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের ইশারার বাইরে যায়নি দলটি। তাই সরকার পতনের পরে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ শীর্ষ নেতাদের নামে মামলা হতে থাকে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় দলটির আগামী নির্বাচনের আসার সুযোগ নেই। একই অপরাধে জাপার বিচার ও ভোটের বাইরে রাখতে চায় জামায়াত ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণঅধিকার পরিষদ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এসব দলের নেতারা বলছেন, সবশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে আগে ভারত সফর শেষে জি এম কাদের দেশে এসে বলেছিলেন, দেশটির অনুমতি ছাড়া তিনি মিটিংয়ের বিষয় বলতে পারবেন না। এটা দেশদ্রোহিতার শামিল।

তবে, এসব দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে দলটিকে কেন তারা ভোটের বাইরে রাখতে চায় তার নেপথ্যের কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছে দৈনিক বাংলাদেশের খবর। 

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ভোটে আসতে না পেরে দলটির একটা অংশের ভোট জাপা পেতে পারে। ফলে, নিজস্ব ভোট ব্যাংক না থাকলেও আওয়ামী লীগের ভোট টেনে বিরোধী অনেক দলের চেয়ে বেশি ভোট পেতে পারে জাপা। ফলে, পরবর্তীতে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতার মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলেও দলটিকে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে সহযোগিতাকারী জাপার কেন বিচার হবে না- সে প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মাঝে। দলটির বিচার না করলে গণঅভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে বেইমানি করা হবে বলে মনে করছেন অনেকে।

জাপাকে শেষ পর্যন্ত ভোটের বাইরে রাখা হতে পারে এমন আশঙ্কাও করছেন দলটির নেতারা। এ বিষয়ে জাপার মহাসচিব ব্যরিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী দৈনিক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, শেষ পর্যন্ত আমরা ভোটে আসতে পারব কিনা সে আশঙ্কা রয়েছে। তবে, সরকার যদি প্রকৃত অংশগ্রহণমূলক ভোট চায় তবে অবশ্যই সব দলকে নিয়ে করতে হবে। অন্যথায় ফের একতরফা ভোট হবে। তাহলে আগের আমলের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না। তিনি বলেন, আমাদের ভোটের বাইরে রাখতে পারলে কিছু লোক সুবিধা পাবে হয়তো, সেজন্য তারা বিরোধিতা করতে পারে।

জামায়াত ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ দৈনিক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, 'আওয়ামী লীগকে সহযোগিতাকারী জাপা কেন ভোটে আসবে। তাদের অপরাধ কম নয়।' তিনি জাপার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। শেষ পর্যন্ত জাপা ভোটে আসতে পারবে না বলেও আশাবাদ তার। তবে, আওয়ামী লীগের ভোট জাপা পাবে এমনটি তিনি মনে করছেন না।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, 'আমরা বারবার দাবি জানিয়ে আসছি জাপার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা দেখছি না। সরকার দলটির বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা না নিলে অনেকে রাজপথে নামবে। 'গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, 'জাপার চেয়ারম্যান এখনো শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগের জন্য মায়াকান্না করছেন। আমরা আগেও জাপার বিচার চেয়েছি। কিন্তু সরকারের এ ব্যাপারে আন্তরিক দেখিনি। শেষ পর্যন্ত জাপা নিষিদ্ধে রাজপথে নামতে হতে পারে। সরকার যদি ব্যবস্থা না নেয় তাদের ভোটের মাঠে নামতে দেব না।'

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব গাজী আতাউর রহমানও জাপাকে ভোটের বাইরে রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'এখনো দলটি ক্ষমা পর্যন্ত চায়নি। দলটির নেতাদের বিচার করতে হবে। মানুষ তাদের ভোটে চায় না।'

একাধিক সূত্র বলছে, জাপাকে নিষিদ্ধে বিষয়ে আইনি মতামত বিশ্লেষণ করছে সরকার। ইতিমধ্যে এটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বিষয়টি গণমাধ্যমেও বলেছেন।

বিকেপি/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

জাতীয় পার্টি

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর