গতানুগতিক রাজনৈতিক ধারার বিরুদ্ধে বিশেষ বার্তা

এম ইসলাম
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:০৬

গতানুগতিক ধারার রাজনীতিকে বর্জন করতে চাইছেন দেশের তরুণ প্রজন্ম। তারা চান বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী কর্মকাণ্ড। আগামীতে দলে গণতন্ত্র চর্চা, স্বচ্ছতা ও নতুন ভিশন দেখাতে না পারলে বড় রাজনৈতিক দলেরও সংকটে পড়ার ইঙ্গিত মিলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, কোনো দলের বিরুদ্ধে আদর্শিক মোকাবিলা না করে 'ট্যাগিং' বা 'ন্যারেটিভ' সৃষ্টি করে দমানোর চেষ্টা এখন আর গৃহীত হচ্ছে না। একটি দলের কট্টর সমর্থকের বাইরে জনসাধারণের মাঝে এখন একই ধারণা কাজ করছে।
ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে জামায়াত ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের অবিশ্বাস্য জয়ের পর ইসলামীপন্থীদের উত্থানের বিষয়টি সামনে এসেছে। দেশ স্বাধীনের পর এটি ছিল জামায়াতের জন্য বড় একটি বিজয়। বিপরীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের ভরাডুবিতে দলটির নেতারা ছাড়াও অনেকে চিন্তিত। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক বাইরে থাকায় এটি বিএনপির জন্য একটি 'বিশেষ বার্তা' বলেও সর্বত্র আলোচনা চলছে।
বিএনপির অনেকেই এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের দোষত্রুটি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন। তারপরও দলটির শীর্ষ নেতারা নিজেদের দুর্বলতা সামনে না এনে 'ষড়যন্ত্র' খুঁজতে শুরু করায় সমালোচনা হচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, 'আওয়ামী লীগ এখন রাজনীতির বাইরে, তাই ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের ফল বিএনপির জন্য একটি বিশেষ বার্তা। কারণ, দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদলের করুণ পরিণতি। এর পেছনে মূল দলের নেতৃত্ব সংকট, দলের প্রতিষ্ঠাতার আদর্শ থেকে সরে আসা ও এবার সরকার পতনের পর বিএনপি ও তার অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের চাঁদাবাজির প্রভাব পড়েছে। বিএনপি সংগঠন শক্তিশালী না করে 'ট্যাগিং নিয়ে ব্যস্ত। এখন ট্যাগিং পাবলিক খাচ্ছে না।'
তিনি বলেন, 'তরুণরা ন্যারেটিভে বিশ্বাসী নয়। তারা যুগোপযোগী কর্মসূচি বা চিন্তাভাবনা চাইছে, যা বিএনপির অঙ্গসংগঠনে নেই।'
গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে অনেকটাই রাজনীতির মাঠ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেক ঠান্ডা মাথায় বিভিন্ন সেক্টরে নিজেদের লোকবল বাড়ানোর মিশনে নামে জামায়াত। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে জামায়াত সমর্থিতদের সুযোগ করে দেওয়া হয়। দলটির আগামী নির্বাচন এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ছাত্রশিবিরকে জেতাতে বিশেষ মিশনে নামে। অপরদিকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপক চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন। একের পর বহিষ্কার হলেও থামেননি তারা।
লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘হলগুলোতে গণরুম ও নিপীড়ন আবার ফিরে আসবে কি না, এই প্রশ্নে ছাত্রদলের প্রতি শিক্ষার্থীদের আস্থার সংকট রয়েছে। সেই ন্যারেটিভ ছাত্রদল ভাঙতে পারেনি বা শিক্ষার্থীদের আস্থার অভাব দূর করতে পারেনি। এক্ষেত্রে শিবিরের নামে এ ধরনের ন্যারেটিভ না থাকায় তারা সুযোগ পেয়েছে। তারা শিক্ষার্থীদের কাছে যেতে পেরেছে। নতুনভাবে রাজনীতি শুরু না করলে গতানুগতিক ধারা তরুণরা গ্রহণ করছেন না।'
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক সমাজ সেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, 'শিবিরের প্রচারণায় ছিল না ধর্মভিত্তিক বক্তব্য। ডাকসুতে প্যানেল দেওয়ার ক্ষেত্রে এবং নির্বাচনি প্রচারণাতেও কৌশলী ছিল ছাত্রশিবির। তারা ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থীর জোটের ব্যানারে প্যানেল দিয়েছিল। তবে তাদের বড় কৌশল ছিল নির্বাচনি প্রচারণায়। জামায়াতের সমর্থক সংগঠন হলেও ছাত্রশিবির ডাকসুতে প্রচারণায় ধর্মভিত্তিক ও ডানপন্থী চিন্তার বিষয়গুলো আনেনি।
ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের ছাত্রদলের হারার পর বিএনপি নেতারাও নিজেদের দোষ-ত্রুটি নিয়ে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেছেন। তারা প্রকাশ্যে দলটির কোনো কোনো নেতাকর্মীর চাঁদাবাজির বিষয়টি সামনে আনছেন।
এদিকে, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এখন ভাবছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আগের পেশিশক্তির রাজনীতি এখন তরুণরা গ্রহণ করছেন না। তারা চায় যুগোপযোগী কর্মসূচি, বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তা। দখলদারিত্বের রাজনীতি এখন আর চলবে না। আগামী নির্বাচনে বিষয়টির ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অনেকেই। তারা বলছেন- আসন্ন সংসদ নির্বাচনের বড় একটি অংশ তরুণ। যারা ইতিপূর্বে ভোট দেয়ার সুযোগ পায়নি। তাদের ভোটে এবার ব্যাপক প্রভাব পড়বে।
বিকেপি/এমবি