Logo

বিশেষ সংবাদ

চাকরি ফিরে পাচ্ছেন ৭৫৭ সাব-ইন্সপেক্টর ও সার্জেন্ট!

Icon

তরিকুল ইসলাম সুমন

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩৬

চাকরি ফিরে পাচ্ছেন ৭৫৭ সাব-ইন্সপেক্টর ও সার্জেন্ট!

  • প্রধান উপদেষ্টার সম্মতির অপেক্ষায় পাঁচ মাস
  • চাকরি ফেরতের অপেক্ষায় ১৮ বছর
  • বঞ্চিত ৩৩০ পুলিশ সদস্য ফিরতে চান চাকরিতে

১৮ বছর আগে নিয়োগ পাওয়া ৭৫৭ জন সাব-ইন্সপেক্টর ও সার্জেন্ট তাদের চাকরি ফিরে পাচ্ছেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ দিকে (২০০৬ সালে) দলীয় বিবেচনার অজুহাতে ৫৩৬ জন নিরস্ত্র সাব-ইন্সপেক্টর ও ২২১ জন সার্জেন্টের নিয়োগ বাতিল করে ওয়ান-ইলেভেন সরকার। 

‘বিএনপি-জামায়াত’ তকমা দিয়ে ২০০৭ সালে এই নিয়োগ বাতিল করা হয়। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের ‘সবুজ সংকেত’ পেয়েছেন মোট ৭৫৭ জন সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) ও সার্জেন্ট। তবে তাদের মধ্য থেকে এখন চাকরিতে যোগদানে আগ্রহী ৩৩০ জনের তালিকা চূড়ান্ত করেছে পুলিশ অধিদপ্তর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, সব প্রক্রিয়া শেষ করে গত এপ্রিল মাসে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হলেও এখনো সম্মতি মেলেনি।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের গত ১৬ বছরের বঞ্চনা পুষিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ এই সুসময়েও নিয়োগ পাচ্ছেন না বঞ্চনার শিকার ৩৩০ জন নিয়োগবঞ্চিত পুলিশ সদস্য। জাতীয় নির্বাচনের আগে পুলিশে নতুন লোকবল নিয়োগ হচ্ছে, নতুনদের সঙ্গে তাদেরও নিয়োগ দেয়ার দাবি জানান।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম জানান, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দুই হাজার এএসআই নিয়োগ দেবে পুলিশ।

চলতি মাসে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছিলেন, চার হাজার এএসআই নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে অর্ধেক হবে পদোন্নতি এবং বাকি অর্ধেক সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে।

এ ছাড়া নির্বাচনের আগে পুলিশে অন্তত ২২ হাজার লোকবল নিয়োগ করা হবে।

নিয়োগবঞ্চিতদের একজন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, 'দলীয় অজুহাতে ২০০৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আমাদের নিয়োগ বাতিল করা হয়। দীর্ঘ ১৮ বছর পর অন্তর্বর্তী সরকার মৌলিক ও মানবিক বিবেচনায় আমাদের নিয়োগসহ দেশের সব সেক্টরে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয়। বিষয়টি জানার জন্য প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও জবাব মিলছে না। আমরা চাই পুলিশে নতুন নিয়োগের পাশাপাশি যেন আমাদেরও নিয়োগ দেওয়া হয়। এ বিষেয়ে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আবেদনপত্র জমা দিয়েছি।' 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শারীরিক, লিখিত, মৌখিক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) ও সার্জেন্ট পদে ৭৫৭ জনকে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছিল চারদলীয় জোট সরকার। তবে 'দলীয় বিবেচনায়' নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি সামনে এনে ২০০৭সালে ওয়ান-ইলেভেনের সরকার কোনো নিয়ম-পদ্ধতি অনুসরণ না করেই একটি নোটশিটের মাধ্যমে নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল করে দেয়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ও পুরাতনদের আর নিয়োগ দেয়নি।

নিয়োগ বাতিল হওয়া অপর একজন মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, 'ওই সময় আমাদের দোষ ছিল আমরা আওয়ামী লীগ করি না। আমাদের বাদ দিয়ে যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদের যোগদান করা হয়। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করেছিল।

চাকরিতে যোগদান করতে না পেরে পরবর্তী সময়ে আমরা উচ্চ আদালতে রিট করেছিলাম। উচ্চ আদালতেও নিয়োগবঞ্চিত ৭৫৭ জন চাকরিপ্রার্থী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হই। চাকরি হারিয়ে আমাদের অনেকে বিকল্প কর্মসংস্থানে ঢুকলেও বেশির ভাগই মানবেতর জীবনযাপন করছেন।'

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছিলেন তারা। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ২০২৪ সালের ২৩ আগস্ট প্রথমে সংবাদ সম্মেলন ও পরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেন সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) এবং সার্জেন্ট পদের নিয়োগবঞ্চিতরা। এরপর তাদের আবেদনের ফাইলগুলো দ্রুতগতিতে এগোতে থাকে। নিয়োগবঞ্চিতদের মধ্যে চাকরিতে যোগদানে আগ্রহীদের নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত চায়। আইন মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই শেষে তাদের মতামত দেয়। কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে আইন মন্ত্রণালয় তাদের মতামতে বলেছে, আবেদনকারীদের ক্যাডেট এসআই (নিরস্ত্র) ও সার্জেন্ট পদে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্নের মাধ্যমে নিয়োগের বিষয়ে একটি লেজিটিমেট এক্সপেক্টেশান তৈরি হয়েছে।

সে কারণে ২০০৬ সালের বাতিল করা নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক আদেশ দ্বারা নিয়োগের শর্ত পূরণ সাপেক্ষে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। ওই মতামতে সই করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপর এই মতামত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য গত এপ্রিলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠানো হয়। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পেলেই বঞ্চিতরা চাকরি ফিরে পাবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা সর্বশেষ সিদ্ধান্তের জন্য সব পক্ষের আইনি মতামতসহ প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে ফাইল পাঠিয়েছি। সেখানকার সিদ্ধান্ত পেলেই ৭৫৭জন সাব-ইন্সপেক্টর ও সার্জেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া আবার শুরু করা হবে।'

বিকেপি/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বাংলাদেশ পুলিশ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর