Logo

বিশেষ সংবাদ

বিএনপিকে চাপে রাখতে ‘শত্রুতা’ থেকে ‘বন্ধুত্ব’

Icon

এম. ইসলাম

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৩০

বিএনপিকে চাপে রাখতে ‘শত্রুতা’ থেকে ‘বন্ধুত্ব’
  • জোটবদ্ধ থাকলে এক ধরনের শক্তিমত্তা কাজ করে - এহসানুল মাহবুব জুবায়ের
  • বড় তিন দলের ব্যর্থতায় মানুষ ইসলামপন্থিদের প্রতি ঝুঁকেছেন - গাজী আতাউর

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে চাপে রাখতে এবং জাতীয় রাজনীতিতে শক্তির জানান দিতেই অতীতের বিরোধ মিটিয়ে কাছাকাছি অবস্থানে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দল দুটির মধ্যে শত্রু থেকে এখন বন্ধুত্বের সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকটি ভাবনা- ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল দুটিকে আদর্শিক বিরোধ কমিয়ে আনতে সহায়তা করেছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে বড় এই দুই ইসলামী দলের নেতৃত্বে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠনেরও চেষ্টা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা বলছেন, ‘গতানুগতিক রাজনীতিক দলের ব্যর্থতায় ইসলামপন্থিদের প্রতি মানুষের ঝুঁকে পড়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই তারা ঐক্য গড়ছেন। তাদের ঐক্য বিশেষ শক্তি হিসেবে কাজ করবে।’

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও দলের মিডিয়া এবং প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ক্ষমতায় যেতেই ইসলামী দলের ঐক্য নয়। জোটবদ্ধ থাকলে ভোটসহ নানা দাবি আদায়ে এক ধরনের শক্তিমত্তা কাজ করে। সেই ভাবনা থেকেই জামায়াতে, ইসলামী আন্দোলনসহ অনেকেই এখন এককাতারে। 

জামায়াতে ও ইসলামী আন্দোলনের বন্ধুত্বের নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, দল দুটির নেতাদের বেশ কয়েকটি উপলব্ধি তাদের কাছাকাছি অবস্থানে নিয়ে এসেছে। তার মধ্যে রয়েছে- বিচ্ছিন্ন থাকলে জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতিতে ভালো কিছু করা সম্ভব নয়। কারণ, সরকার এবং অন্য বড় রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে দাবি আদায়ে চাপ সৃষ্টিতে শক্তির কোনো বিকল্প নেই। গতানুগতিক রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে ইসলামী দলগুলোকে।

প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে দলগুলোর নেতাদের উল্টো নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর প্রত্যেকের চাওয়া যেহেতু দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, তাই আদর্শিক বিষয়ে ছাড় দিয়ে দলগুলো ঐক্যে জোর দিচ্ছে।

এক্ষেত্রে দলগুলো নিকট অতীতের বেশ কিছু উদাহরণ সামনে আনছে। তাদের মতে, আওয়ামী লীগের ক্ষমতার প্রায় সাড়ে ১৫ বছরে দেশে সব ঘরানার আলেম নানা ইস্যুতে হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন।

বিশেষ করে ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি দমনের পর কওমি বা আলিয়া উভয় ঘরানার আলেমদের গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। ওই ঘটনার পর ইসলামীপন্থিরা নতুন করে ভাবতে শুরু করেন।

এরপর গত বছরের গত ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গণঅভ্যুত্থানে নিজেদের ইতিবাচক ভূমিকাকে কাজে লাগিয়ে দেশে ইসলামপন্থিরা অবস্থান দৃঢ় করতে শুরু করে। তৎপর হয়ে উঠে জামায়াতে ও ইসলামী আন্দোলন।

‘মওদুদীবাদ মতাদর্শ’ নিয়ে জোরালো আপত্তির পরও জামায়াতের আহ্বানে ‘কওমি’ আলেমদের পাশাপাশি নানা ঘরানার ইসলামী দলের নেতারা সাড়া দিতে থাকেন। ইসলামী আন্দোলনও সভা-সেমিনার শুরু করে। নির্বাচনি ঐক্য এবং আদর্শিক দূরত্ব কমানোই ছিল যার মূল লক্ষ্য।

ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান দৈনিক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, অতীতে বড় তিন দলের দেশ পরিচালনার সময়ে অন্যায়, অনিয়ম ও চাঁদাবাজিতে সাধারণ মানুষ হতাশ। জনগণ এখন ইসলামীপন্থিদের প্রতি ঝুঁকেছেন। সেই জায়গা থেকেই আমরা জামায়াতসহ অন্যদলের সঙ্গে ঐক্য বা নির্বাচনি জোট করছি। নিজেদের ঐক্য, জোটবদ্ধ ভোট এবং সবশেষ পাঁচ দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচির সিদ্ধান্তে ব্যাপক সাড়া জেগেছে।

গত ২১ জানুয়ারি বরিশালে চরমোনাইয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীরের সঙ্গে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের বৈঠকটি ছিল দল দল দুটির ঐক্যে টার্নিং পয়েন্ট। এ ছাড়া গত ১৯ জুলাই ঢাকায় জামায়াতের এবং ২৮ জুন ইসলামী আন্দোলনের জাতীয় সমাবেশে দল দুটির শীর্ষ নেতাদের পরস্পরের উপস্থিতি ঐক্য প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

জানা গেছে, ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত ইসলামী আন্দোলনকে ‘আওয়ামী লীগের সহযোগী’ আখ্যা দিয়ে জামায়াত নেতারা বক্তব্য দিতেন। আবার ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের জামায়াতের বিরুদ্ধে দেওয়া মাঠ গরম করা বক্তব্য সব সময় ছিল আলোচিত। দল দুটি পরস্পরকে ‘ইসলামের শত্রু’ হিসেবে আখ্যা দিত।

অথচ সরকার পতনের পর দল দুটি নেতারা বারবার একমঞ্চে বসার পর এ ধরনের বক্তব্য থেকে সরে এসেছে উভয় দলের নেতারা। বরং উল্টো সম্প্রতি চরমোনাই পীরকে নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) এক নেতার বিতর্কিত মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। পাশাপাশি দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের বিজয়ে চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল দুটি এখন নানা দাবি আদায় এবং আগামী নির্বাচন ইস্যুতে মাঠে তৎপর। সবশেষ বড় দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের প্যানেলের ‘নিরঙ্কুশ’ বিজয় তাদের আরো আশাবাদী করে তুলেছে। জোটবদ্ধ ভোটে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে চমক দেখাতে চায় এই দুই দল।

জামায়াতে ও ইসলামী আন্দোলনের যৌথ জোটে আরো কয়েকটি ইসলামী দলকে একসঙ্গে দেখা যেতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে- মাওলানা মামুনুল হকের বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলামে পার্টি ও খেলাফত আন্দোলনসহ কয়েকটি দল। ইতোমধ্যে এসব দল পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ ৫ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনেও রয়েছে।

জানা গেছে- জোটবদ্ধ প্রার্থী দিয়ে বড় দল বিএনপিকে চাপে ফেলতে ফেরার কৌশল রয়েছে দুই দলের শীর্ষ নেতাদের। ইসলামী দলগুলোর ভোট একবাক্সে গেলে অন্য দলকে অনেক আসনেই চ্যালেঞ্জে ফেলা যাবে বলেও মনে করছে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে ইতোমধ্যে এ ধরনের বার্তাও দিয়েছে দল দুটি।

বিকেপি/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর